নিজস্ব অর্থায়নে পোস্টার বোর্ড করবে চসিক

যত্রতত্র পোস্টার সাঁটানো বন্ধে এ উদ্যোগ এর আগে দরপত্রে সাড়া দেননি ঠিকাদাররা

মোরশেদ তালুকদার | শনিবার , ১৫ জুলাই, ২০২৩ at ৬:৩৩ পূর্বাহ্ণ

আহূত দরপত্রে ঠিকাদারের কাছ থেকে সাড়া না পাওয়ায় এবার নিজস্ব অর্থায়নে নগরে ‘পোস্টার বোর্ড’ স্থাপন করবে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। নির্ধারিত ফি দিয়ে যে কেউ তাদের প্রতিষ্ঠানের প্রচারণা বা অনুষ্ঠানের পোস্টার লাগাতে পারবে এসব বোর্ডে। যত্রতত্র পোস্টার সাঁটানো বন্ধে এ উদ্যোগ নেয়া হয়। তাই স্থাপনের পর নির্দিষ্ট বোর্ডগুলো ছাড়া শহরের যত্রতত্র পোস্টার সাঁটানো বন্ধ ঘোষণা করবে চসিক।

বিষয়টি আজাদীকে নিশ্চিত করে সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, যেখানেসেখানে পোস্টার লাগালে শহরের সৌন্দর্যহানি হয়। তাই শহরের সৌন্দর্য রক্ষার জন্য পোস্টার বোর্ড স্থাপনের উদ্যোগ নিই। এজন্য দরপত্রও আহ্বান করি। কিন্তু ঠিকদারেরা ওসব বোর্ডের একটি অংশে বা উপরে অ্যাড (বিজ্ঞাপন) দেয়ার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু আমি অ্যাড দেয়ার পক্ষে না। কারণ এতে আবার বিলাবোর্ডের মত শহর ছেয়ে যেতে পারে। তাই সেটা না করে দিই।

মেয়র বলেন, এখন শহরের কিছু কিছু মোড়ে কর্পোরেশনের নিজস্ব অর্থে পোস্টার বোর্ড করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। শুরুতে চকবাজার, নিউ মার্কেট, আগ্রাবাদসহ কিছু জায়গায় স্থাপন করব। খুব শীঘ্রই এ কার্যক্রম শুরু করব। এখন তো বর্ষাকাল, বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টি বন্ধ হলেই কাজ শুরু করে দিব। আগস্টের শেষ দিকে বোর্ড স্থাপন করে ফেলব। এজন্য দায়িত্বও দিয়েছি। বোর্ডগুলো স্থাপন হয়ে গেলে যেখানেসেখানে আর পোস্টার লাগাতে দিব না।

চসিক সূত্রে জানা গেছে, শহরের ১৫০টি স্থানে পোস্টার বোর্ড স্থাপনের জন্য ঠিকাদার নিয়োগে গত ২৭ জানুয়ারি স্থানীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয় চসিক। ৯ ফেব্রুয়ারি দরপত্র জমা দেয়ার শেষ দিনেও কেউ জমা দেয়নি। তবে দরপত্র জমা না দিলেও বহু ঠিকাদার যোগাযোগ করে চসিকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে। ঠিকাদারদের কেউ কেউ ওই পোস্টার বোর্ডের একটি অংশে বিলবোর্ডের ন্যায় বিজ্ঞাপন লাগানো, অনেকে বোর্ডের উপর বিজ্ঞাপন লাগানোর প্রস্তাব করে। আবার অনেকে চসিকের নির্দিষ্ট জায়গার পরিবর্তে তাদের পছন্দের জায়গায় এ বোর্ড স্থাপনে আগ্রহ দেখায়। তবে চসিক নিজস্ব সিদ্ধান্তে অনড় থাকায় কোনো ঠিকাদার অফিসিয়ালি দরপত্রে অংশ নেয়নি। এর প্রায় ৬ মাস পর নতুন করে নিজস্ব অর্থে পোস্টার বোর্ড স্থাপনের সিদ্ধান্ত দেন মেয়র।

সিটি কর্পোরেশন কর আইন১৯৮৬ অনুযায়ী, শহরে ব্যানার ফেস্টুন লাগানোর জন্য নির্দিষ্ট ফি দিয়ে অনুমতি নিতে হবে সিটি কর্পোরেশন থেকে। এক্ষেত্রে ৬ বর্ঘফুটের একটি পোস্টারের জন্য দৈনিক ১০ টাকা এবং ১০ বর্গফুটের পোস্টারের জন্য দৈনিক সাত টাকা পরিশোধ করার বিধান রয়েছে। যদিও বাস্তবে সিটি কর্পোরেশন থেকে অনুমতি নিয়ে কেউ পোস্টার সাঁটান না। ফলে রাজস্ব বঞ্চিত হয় চসিক। এছাড়া যত্রতত্র পোস্টার লাগানোর কারণে সৌন্দর্যহানি ঘটে নগরের। তাই পোস্টার লাগানোর স্থান নির্দিষ্ট করার জন্য গত বছরের জুলাই মাসে প্রথম উদ্যোগ নেয় চসিক। পরে জরিপ চালিয়ে একই বছরের আগস্ট মাসে পোস্টার বোর্ড স্থাপনে ১১৫টি স্থানের একটি তালিকাও করে। ওই তালিকার উপর ভিত্তি করে পরবর্তীতে দরপত্র অহ্বান করা হয়।

চসিকের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবুল হাশেম আজাদীকে বলেন, বিকল্প না থাকলে যত্রতত্র পোস্টার সাঁটানো বন্ধ করা কঠিন। তাই বিকল্প হিসেবে স্থান নির্দিষ্ট করার উদ্যোগ নেয়া হয়। অবশ্য এজন্য দরপত্র আহ্বান করলেও কেউ অফিসিয়ালি অংশ নেননি। তবে ঠিকাদাররা অনানুষ্ঠানিকভাবে যোগাযোগ করেছিল। আমরা যেসব স্পট বাছাই করি এর বাইরেও অনেকে স্থাপন করতে চায়। যেমন আমরা একটা স্পটে দুইটি পোস্টার সাঁটানোর অনুমতি দেয়ার চিন্তা করি। কিন্তু সেখানে ঠিকাদারেরা চারটি লাগাতে চায়। এ অবস্থায় নতুন করে পোস্টার বোর্ড লাগানোর জন্য মেয়র মহোদয় নির্দেশনা দেন। এখন আমরা দুইভাবে চিন্তা করছি। কিছু কিছু স্পটে আমরা নিজেরাই বোর্ড করে দেব। আবার অনানুষ্ঠানিকভাবেও ঠিকাদারের সাথে কথা হয়েছে। সেক্ষেত্রে তাদের চাহিদাকে গুরুত্ব দেয়া হবে। তবে যেকোনোভাবেই হোক যেখানে সেখানে আর পোস্টার সাঁটাতে দেয়া হবে না।

এদিকে শহরের কোথায় সবেচেয়ে বেশি পোস্টার সাঁটানো হয় তা চিহ্নিত করতে জরিপ পরিচালনা করে চসিক। জরিপের তথ্য অনুযায়ী, শহরে সাঁটানো ৯০ ভাগই পোস্টার হচ্ছে বিভিন্ন কোচিং সেন্টারের। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে এমন স্থানগুলোতে পোস্টার বেশি সাঁটানো হয়। এরপর গ্রোথ সেন্টার বা যেখানে লোক সমাগম বেশি হয় সেখানে পোস্টার সাঁটানো হয়।

গত কয়েকদিন ধরে সরেজমিন পরিদর্শন করেও এর সত্যতা মিলেছে। দেখা গেছে, চকবাজার ও আশেপাশের এলাকায় কোচিং সেন্টারের পোস্টারের সংখ্যা বেশি। এছাড়া নগরের ব্যক্তি মালিকানাধীন বাড়ি কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সীমানা দেয়াল, শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড় এবং পাড়ার অলিগলির খালি জায়গা সবখানেই বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপনের অংশ হিসেবে লাগানো হয়েছে পোস্টার। আছে রাজনৈতিক শুভেচ্ছা সম্বলিত পোস্টারও। নগরবাসী বলছেন, যেখানে সেখানে পোস্টার লাগানোর ফলে নগরের সৌন্দর্যহানি হচ্ছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমানসিক ভারসাম্যহীন বিধবার প্রতি নির্মমতা
পরবর্তী নিবন্ধরোমাঞ্চকর জয়