নিচু এলাকায় জলবন্দি মানুষ

সড়কে কোথাও নৌকা, কোথাও যানজট দুর্ভোগ কমেনি নগরবাসীর আজও ভারী বর্ষণের আভাস

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ২০ জুন, ২০২২ at ৬:৫৪ পূর্বাহ্ণ

নগরের চকবাজার মুহাম্মদ আলী শাহ দরগাহ লেইন। গত শুক্রবার সন্ধ্যার পর পানিতে তলিয়ে যায় লেইনটি। এ লেইনের বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে পানি ঢুকে যায়। শনিবারও দিনভর ডুবেছিল এলাকাটি। গতকাল রোববার সকাল থেকে নামতে থাকে পানি। তবে পুরোপুরি নামার আগেই শুরু হয় বৃষ্টি। ফলে ফিরে আসে আগের অবস্থা। অর্থাৎ টানা দুদিন পানিবন্দি হয়ে আছেন লেইনটির বাসিন্দারা।

গতকাল সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় এখানে দেখা গেছে, আগের দিনের ন্যায় কয়েকটি বাসা-বাড়ির নিচতলা তলিয়ে গেছে। জানালা দিয়েও ওসব বাসা-বাড়িতে পানি ঢুকতে দেখা গেছে।

মুহাম্মদ আলী শাহ দরগাহ লেইনের পাশে মকবুল সওদাগর লেইন এবং আবদুল হাকিম শাহ লেইন। এই দুই লেইনের বাসিন্দাদেরও অবস্থা একই। তারাও গত দুদিন ধরে পানিবন্দি। এসব এলাকার যেসব বাসা-বাড়িতে পানি ঢুকেছে তাদের বেশিরভাগ বাসিন্দা আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।

খবর নিয়ে জানা গেছে, বাকলিয়াসহ নগরের বিভিন্ন নিচু এলাকার অবস্থাও একই। বেশিরভাগ এলাকায় গতকাল সকালে পানি কিছুটা কমলেও বিকেলের পর বাড়তে থাকে। গতকাল বিকেল সাড়ে ৩টার পর থেকে টানা কয়েক ঘণ্টা বৃষ্টি হয়েছে নগরে। এতে তীব্র হয় জলাবদ্ধতা। প্রধান সড়কে হাঁটু থেকে কোমর সমান পানি জমে যায়। জলবন্দি হয়ে পড়ে লোকজন। গত রাত ৯টার দিকে বাকলিয়া কেবি আমান আলী রোডে নৌকা চলতে গেছে। বড় মিয়া মসজিদ থেকে রসুলবাগ আবাসিক এলাকা নৌকায় ওঠানামা ভাড়া ছিল ২০ টাকা। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় বাসিন্দা শফিউল বাশার সাজু।

এদিকে জলজট বৃদ্ধির সাথে সাথে সড়কে লেগে যায় তীব্র যানজট। গতকাল সন্ধ্যা ৬টার দিকে বহদ্দারহাট মোড়, মুরাদপুর, দুই নম্বর গেট ও জিইসি মোড় পর্যন্ত এলাকায় গাড়ির জটলা দেখা গেছে। একই সময়ে গাড়ির দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে আক্তারুজ্জামান বাবু ফ্লাইওভারে। ফ্লাইওভারটির বহদ্দারহাট অংশে ওঠানামার মুখে প্রায় কোমর সমান পানি ছিল। এতে ফ্লাইওভারে থাকা গাড়িগুলো নামতে না পেরে যানজট লেগে যায়।

এদিকে জলাবদ্ধতার অজুহাতে বিভিন্ন সড়কে মর্জিমাফিক অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করেছে সিএনজি ও বিভিন্ন পরিবহন চালকগণ। বিশেষ করে রিকশা চালকরা দ্বিগুণ-তিন গুণ ভাড়া দাবি করে। বাড়তি ভাড়া দাবি করে লোকাল পরিবহন মাহেন্দ্রা চালকরাও। জলাবদ্ধতা, যানজট এবং বাড়তি ভাড়ার কারণে বিকেলে অফিস-আদালত ছুটি হওয়ার পর বাড়িমুখী লোকজন দুর্ভোগে পড়েন।

আজও ভারী বর্ষণের আভাস : পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম আজাদীকে জানান, গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ১৪৭ দশমিক ৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। আজ সোমবারও ভারী বর্ষণ হতে পারে। তিনি জানান, মৌসুমী বায়ু সক্রিয় থাকার কারণে বৃষ্টি হচ্ছে। ২১ জুনের পর বৃষ্টি কমতে পারে।

রাজধানীর আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ শেখ হাফিজুর রহমান জানান, গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সন্দ্বীপে ৪৬ মিলিমিটার ও সীতাকুণ্ডে ১৩২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এদিকে নগরের আমবাগান আবহাওয়া অফিস শনিবার দিবাগত রাত ৩টা থেকে গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৯১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর মধ্যে গতকাল বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৬১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আমবাগান আবহাওয়া অফিসের টিপিও আবদুল হান্নান দেওয়ান এ তথ্য জানান।
পাহাড় ধসের আশঙ্কা : আবহাওয়া অধিদপ্তরের প্রবল বজ্রপাত ও ভারী বর্ষণের সতর্কবাণীতে বলা হয়, গতকাল বিকেল ৫টা থেকে আজ সোমবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও প্রবল বজ্রপাতসহ ভারী (৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতি ভারী (৮৯ মিলিমিটার বা তার অধিক) বর্ষণ হতে পারে। অতি ভারী বর্ষণের কারণে পাহাড়ি এলাকার কোথাও কোথাও ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে।

গতকালের চিত্র : শুক্রবার থেকে গতকাল রাত সাড়ে ১০টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত শহরের অধিকাংশ নিচু এলাকা ডুবেছিল। এখানে হাঁটু সমান পানি ছিল দিনভর। তবে গতকাল বিকেলের পর থেকে বাড়তে থাকে পানির পরিমাণ। গতকাল সন্ধ্যার পর থেকে ওয়াসা, জিইসি, দুই নম্বর গেট, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, দক্ষিণ কাট্টলী, চকবাজার, কাপাসগোলা, কাতালগঞ্জে হাঁটু থেকে কোমর সমান পানি জমে যায়।

এছাড়া দেওয়ান বাজার খলিফাপট্টি, বাকলিয়ার কে বি আমান আলী রোড ফুলতলা, ডিসি রোড, বড় মিয়া মসজিদ, ডিসি রোড, নুর বেগম মসজিদ এলাকাসহ আশপাশের এলাকা পানিতে তলিয়ে ছিল। হালিশহর, ঈদগাঁ কাঁচা রাস্তা, মনসুরাবাদ পাসপোর্ট অফিসের সামনে, দক্ষিণ কাট্টলীর নাথপাড়া, জেলেপাড়া, হরিমন্দির রোড, সদু চৌধুরী রোডেও জলজট ছিল। পানি উঠে আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালেও।

গতকাল সন্ধ্যায় মুহাম্মদ আলী শাহ দরগাহ লেইনের বাসিন্দা আবদুল হামিদ আজাদীকে বলেন, দুদিন ধরে পানিবন্দি। শুক্রবারের রাতের চেয়েও এখন পানি বেড়েছে। অনেক প্রতিবেশী আত্মীয়স্বজনের বাসায় চলে গেছে।

এদিকে জলাবদ্ধতার কারণে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, ঘরমুখো মানুষ ও পথচারীদের পড়তে হয় দুর্ভোগে। বাড়তি ভাড়ার অভিযোগ করেন তারা। মুরদপুর থেকে চেরাগী পাহাড়; স্বাভাবিক সময়ে এ পথে রিকশা ভাড়া নেয়া হয় ৪০ থেকে ৫০ টাকা। গতকাল সন্ধ্যায় দাবি করা হয় ১২০ টাকা।

রিকশাচালক আলমগীর আজাদীকে জানান, চকবাজারের আগে বৌদ্ধ মন্দির ও পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকায় প্রবেশমুখে প্রায় কোমর সমান পানি জমেছে। এটা পার হতে কষ্ট হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধখালের মাটি দ্রুত অপসারণ করবে সিডিএ
পরবর্তী নিবন্ধআজ থেকে রাত ৮টার পর দোকানপাট মার্কেট বন্ধ