আধুনিক দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যে নির্মিত কক্সবাজার আইকনিক রেল স্টেশন; এশিয়ার অন্যতম এই রেল স্টেশনকে ঘিরে দেশের রেলযাত্রীদের অনেক স্বপ্ন। পরিপূর্ণভাবে এই স্টেশন ভবনের কাজ শেষ হলে স্টেশন ভবনে যাত্রীরা অনেক সুযোগ–সুবিধা পাবেন। সারা দেশ থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক কক্সবাজার বেড়াতে যান। তাদের স্বপ্ন থাকে দেশের একমাত্র পাঁচতলা বিশিষ্ট আইকনিক ভবনকে ঘিরে। এই ভবনের সৌন্দর্য অবলোকন করা, ঘুরে বেড়ানো, স্টেশন ভবনে যাত্রীদের যেসব সুযোগ–সুবিধা থাকার কথা সেসব উপভোগ করা। কিন্তু পর্যটন নগরী কক্সবাজারে ট্রেন চলাচল শুরু হওয়ার ১৯ মাসে আইকনিক ভবনের নিচতলায়ও পুরোদমে অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি। বারবার সময় নেওয়ার পরও ভবনের কাজ শেষ করতে পারেননি প্রকল্পে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
বিশ্বমানের পাঁচতলা বিশিষ্ট এই স্টেশন ভবনটি চালু হলে এখানে যাত্রীদের জন্য থাকবে থাকা–খাওয়ার তারকা মানের হোটেল, রেস্টুরেন্ট, শপিংমল, কমিউনিটি সেন্টার, যাত্রীদের মালামাল রাখার লকার, শিশু যত্ন কেন্দ্র, মসজিদসহ অত্যাধুনিক সব ধরনের সুযোগ–সুবিধা। যদি কেউ চায় রাতের ট্রেন ধরে সকালে কক্সবাজার পৌঁছে মালামাল স্টেশনে রেখে সারাদিন সমুদ্রসৈকত বা পর্যটন স্পট ঘুরে রাতে আবার ফিরে যেতে পারবেন। কিন্তু আইকনিক স্টেশন বিল্ডিংটি চালু না হওয়ায় কক্সবাজারে এসে ট্রেন যাত্রীরা এখানকার সুযোগ–সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। দেশের নানা জায়গা থেকে শত শত লোক এই স্টেশন দেখতে এসে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বিশ্বমানের এমন একটি আইকনিক স্টেশন ঘিরে নেই কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সন্ধ্যার পর থেকে নিঝুমপুরীতে পরিণত হয় পুরো এলাকা। এদিকে মেয়াদ দুই দফা বাড়ানোর পর আগামী ৬ ডিসেম্বরে কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হচ্ছে।
কক্সবাজার আইকনিক রেল স্টেশনের ম্যানেজার গোলাম রাব্বানী বলেন, পাঁচতলা বিশিষ্ট কক্সবাজার আইকনিক রেল স্টেশন ভবনের কোনো ফ্লোরই এখনো চালু হয়নি। সবগুলো ফ্লোরের কার্যক্রম কবে চালু হবে বলতে পারছি না। এখনো নিচতলায়ও পুরোদমে অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু করা যায়নি।
দোহাজারী–কক্সবাজার রেললাইন উদ্বোধন হয়েছিল ২০২৩ সালের ১১ নভেম্বর। উদ্বোধনের পর ওই বছরের ১ ডিসেম্বর প্রথম ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছিল পর্যটন নগরী কক্সবাজারে। তার এক মাস পর ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে চালু হয় পর্যটক এক্সপ্রেস। গত বছর চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার রুটে চালু হয় প্রবাল ও সৈকত এক্সপ্রেস।
এদিকে দোহাজারী–কক্সবাজার রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের মেয়াদ চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মুহম্মদ আবুল কালাম চৌধুরী। রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আইকনিক স্টেশন ভবনের কাজ শেষ হলেও স্টেশন ভবনের সুযোগ–সুবিধা পেতে আরো সময় লাগবে।
রেল ভবনের এক কর্মকর্তা জানান, কাজ শেষ হলে আইকনিক স্টেশনের নিচতলা এবং দ্বিতীয় তলায় রেলওয়ের অপারেশনাল কাজ চলবে। তৃতীয় তলায় শপিংমল, ৪র্থ তলায় তারকা মানের হোটেল, ৫ম তলায় কমিউনিটি সেন্টার পরিচালনার জন্য প্রাইভেট খাতে লিজ দেওয়ার চিন্তাভাবনা চলছে। কারণ হোটেল, শপিংমল এবং কমিউনিটি সেন্টারের আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে হবে। তারকা মানের হোটেল, শপিংমল এবং কমিউনিটি সেন্টার পরিচালনার মতো এত স্টাফ রেলের নেই। আন্তর্জাতিক মান যাতে বজায় থাকে তার জন্য প্রাইভেট খাতে লিজ দেওয়ার ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন মহলে চিন্তাভাবনা চলছে। সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে দোহাজারী–কক্সবাজার ১০১ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের মধ্যে কক্সবাজার আইকনিক স্টেশন ভবনটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২১৫ কোটি টাকা।