নিউ ইয়র্কে এবার আলোচনায় মেয়রপ্রার্থী মামদানির স্ত্রী রামা দুয়াজি

| শনিবার , ৫ জুলাই, ২০২৫ at ৪:৫৬ পূর্বাহ্ণ

যুক্তরাষ্ট্রে নিউ ইয়র্কের মেয়র পদের জন্য মনোনয়ন পেয়েছেন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রার্থী জোহরান মামদানি। প্রথম থেকেই তিনি নজর কেড়েছিলেন আমেরিকাবাসীর। তাকে নিয়ে এখনও চলছে চর্চা। তার মধ্যেই এবার নজর কেড়েছেন মামদানির স্ত্রী রামা দুয়াজি। আলোচনায় উঠে এসেছেন তিনিও। রামা দুওয়াজির পরিচয় ঘিরে ব্যাপক কৌতূহল তৈরি হয়েছে। ২৭ বছর বয়সী রামা একজন সিরীয় বংশোদ্ভূত চিত্রশিল্পী ও অ্যানিমেটর। টেক্সাসে এক সিরীয় পরিবারে তার জন্ম। বাস করেন নিউ ইয়র্কে। দুয়াজির চিত্রকর্মে মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক থিম, বিশেষ করে আরব বিশ্ব, সিরিয়া ও ফিলিস্তিনের বাস্তবতা ফুটে ওঠে। তার আঁকা ছবি প্রকাশিত হয়েছে বিবিসি, নিউ ইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্ট, ভাইস এবং লন্ডনের টেট মডার্ন মিউজিয়ামে।

গত ১২ মে ইনস্টাগ্রামে জোহরান মামদানি জানান, তারা তিন মাস আগে বিয়ে করেছেন। রামা কেবল আমার স্ত্রী নন, তিনি এক অসাধারণ শিল্পী। নিজ পরিচয়ে তিনি পরিচিত হবার দাবিদার লেখেন মামদানি। সেই পোস্টের মন্তব্যে রামা দুয়াজি রসিকতা করে লেখেন, ও মাই গড, শি ইজ রিয়েল। সম্পর্ক নিয়ে কখনও ঢাক পেটান না দুজনের কেউই। রাজনৈতিক জমায়েতেও জোহরানের সঙ্গে থাকেন না দুয়াজি। প্রাথমিকভাবে নির্বাচনী প্রচারে দুয়াজিকে প্রকাশ্যে দেখা না যাওয়ায় বিরোধী নেতাদের অনেকেই বলেছিলেন, মামদানি নাকি তার স্ত্রীকে লুকিয়ে রাখছেন। নির্বাচনী প্রচারে রামা দুয়াজির অনুপস্থিতি অনেকেরই নজরে এসেছে। সাধারণত প্রার্থীরা তাদের স্ত্রীদের নির্বাচনী প্রচারণার সময় সঙ্গে রেখে ভোটারদেরকে বোঝাতে চান যে, তারা পারিবারিক মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।

৩৩ বছর বয়সী জোহরান মামদানি এক ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিস্ট। গত মাসে তিনি তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ ও নিউইয়র্ক রাজ্যের সাবেক গর্ভনর অ্যান্ড্রু কুমোকে পরাজিত করে বিস্ময়কর জয় পান। গত মে মাসের ওই পোস্টেই মামদানি নির্বাচনী প্রচারে স্ত্রীর অনুপস্থিতি নিয়ে বিরোধীদের সমালোচনার জবাব দিয়ে তাদের বিয়ের অনেক ছবি প্রকাশ করেছিলেন। নিউ ইয়র্ক সিটি ক্লার্ক কার্যালয়ে তাদের বিয়ের ছবি দেখা যায়। এ নিয়ে তিনি নোংরা রাজনীতির শিকার বলেও মন্তব্য করেন। মামদানি বলেন, আমি সাধারণত এসব উড়িয়ে দিই। হোক তা মৃত্যু হুমকি বা আমাকে দেশ থেকে তাড়ানোর হুমকি। তবে যখন প্রিয়জনকে নিয়ে কথা হয় তখন সেটা ভিন্ন বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। আপনি আমার দৃষ্টিভঙ্গির সমালোচনা করতে পারেন। কিন্তু আমার পরিবারকে নিয়ে নয়। খবর বিডিনিউজের।

ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রাথমিক প্রার্থী বাছাইয়ের ফল প্রকাশের পর রামা দুয়াজি তার ইনস্টাগ্রামে স্বামীকে জড়িয়ে ধরা একটি সাদাকালো ছবি পোস্ট করে তাকে অভিবাদন জানান।

পরিচয় ও পরিণয়

বিবিসি জানায়, জোহরান মামদানি ও রামার পরিচয় হয়েছিল ডেটিং অ্যাপ ‘হিঞ্জে’। সেই পরিচয় থেকে প্রেম আর তারপর হয় শুভ পরিণয়। জানুয়ারিতে নিউ ইয়র্কে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সারার আগে গত বছর দুবাইয়ে দুয়াজির পরিবারের উপস্থিতিতে বাগদান হয়েছিল তাদের। রামা দুয়াজি ভার্জিনিয়া কমনওয়েলথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েশন করেন এবং পরে নিউ ইয়র্কের স্কুল অব ভিজ্যুয়াল আর্টস থেকে ইলাস্ট্রেশনে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন।

রামার বেশির ভাগ কাজ সাদাকালো। তিনি আরব বিশ্বের দৃশ্যপট তুলে ধরেন ক্যানভাসে। ২০২২ সালে রামার অ্যানিমেশন ব্যবহৃত হয় বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের ডকুমেন্টারি ‘হু কিল্ড মাই গ্র্যান্ডফাদার’, যা এক ইয়েমেনি রাষ্ট্রনেতার ১৯৭৪ সালের হত্যাকাণ্ডকে তুলে ধরে। ইনস্টাগ্রামে তার কয়েকটি কাজ আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদ, ইসরায়েলের ‘যুদ্ধাপরাধ’ এবং ফিলিস্তিনিদের ‘জাতিগত নির্মূলের’ সমালোচনামূলক, যা তার স্বামীর রাজনৈতিক অবস্থানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এক সাক্ষাৎকারে দুয়াজি বলেন, শিল্পীর দায়িত্ব হচ্ছে সময়ের প্রতিফলন ঘটানো, যেমনটি সঙ্গীতজ্ঞ নিনা সিমোন বলেছিলেন।

করোনাভাইরাস মহামারীর সময় রামা দুয়াজি বেশিরভাগ সময়ই কাটিয়েছিলেন দুবাইয়ে পরিবারের সঙ্গে। বর্তমানে মামদানি ও দুয়াজি দুজনেই নিউ ইয়র্কের ব্রুকলিনে বাস করছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরেঞ্জ কর্মকর্তার কার্যালয়ে শত শত লাল বুক টিয়া
পরবর্তী নিবন্ধমাতামুহুরী নদীতে ফেলা হচ্ছে ২০ হাজার জিও ব্যাগ