নিউমোনিয়া প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি

| সোমবার , ২৭ অক্টোবর, ২০২৫ at ১০:২৯ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামে নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ২৫ অক্টোবর এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে দৈনিক আজাদীতে। এতে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে বেড়েছে নিউমোনিয়া রোগীর চাপ। গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে নিউমোনিয়ায় ভর্তি রোগী বেড়েছে দ্বিগুণ। বর্তমানে শিশু রোগ বিভাগের দুটি ওয়ার্ডে সরকার অনুমোদিত বেডের তুলনায় রোগী ভর্তি থাকছে প্রায় তিনগুণ। চিকিৎসকরা বলছেন, এখন মৌসুম পরিবর্তনের কারণে শিশুদের মধ্যে নিউমোনিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে দিনের ভ্যাপসা গরম ও রাতে তাপমাত্রা উঠানামার কারণে কম বয়সী শিশুরা নিউমোনিয়াসহ শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে ভুগছে। বর্তমানে সরকারিবেসরকারি সব হাসপাতালে নিউমোনিয়ার রোগী ঠাঁই নাই অবস্থা। অপরদিকে চট্টগ্রাম মাশিশু ও জেনারেল হাসপাতালেও বেড়েছে নিউমোনিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। গত শুক্রবার বিকেলে চমেক হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেছে, শিশুদের মায়েরা কোলে নিয়ে বসে আছেন। আবার কেউ শিশুকে নেবুলাইজ (শ্বাসযন্ত্রের ওষুধ প্রয়োগ) করছেন। এদের একজন ফটিকছড়ির সমিতির হাটের বাসিন্দা রাবেয়া আকতার। চোখেমুখে ক্লান্তির চাপ স্পষ্ট। জানতে চাইলে তিনি বলেন, চারদিন আগে দেড় বছর মেয়ের ঠান্ডাজনিত সর্দিকাশি হয়। স্থানীয় ডাক্তারকে দেখানোর পরে তিনি নিউমোনিয়া হয়েছে বলে চমেক হাসপতালে পাঠিয়ে দেন।

এদিকে চমেক হাসপাতালে বেড সংকটের কারণে একটি বেডে একসাথে তিন থেকে চারজন শিশুকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে একটি অক্সিজেনের সঞ্চালন লাইন থেকে একাধিক শিশুকে অক্সিজেন দেয়া হচ্ছে। শিশু ওয়ার্ডের একজন চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নিয়ম মতেএকজন শিশুকে একটি অক্সিজেন সঞ্চালন লাইন থেকে অক্সিজেন দেয়ার কথা। কিন্তু এখন নিউমোনিয়া রোগীর চাপ বেশি হওয়ার কারণে একটি সঞ্চালন থেকে একাধিক রোগীকে দিতে হচ্ছে। এতে আমরা প্রয়োজন মতো রোগীকে মনিটরিং করে অক্সিজেন দিতে পারছি না। আনুপাতিক হারে অক্সিজেনের পরিমাণ কমবেশি হতে পারে।

নতুন এক বিশ্লেষণমূলক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, নিউমোনিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রচেষ্টা জোরদার করার মাধ্যমে বাংলাদেশে ১ লাখ ৪০ হাজার শিশুকে নিউমোনিয়া ও অন্যান্য বড় ধরনের রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণের হাত থেকে বাঁচানো যেতে পারে।

জন্স হপকিন্স ইউনিভার্সিটি এই বিশ্লেষণমূলক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে। পূর্বাভাস অনুযায়ী, বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী দশকজুড়ে বাংলাদেশে পাঁচ বছরের কম বয়সী ১ লাখের বেশি শিশু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যেতে পারে। তবে নিউমোনিয়া প্রতিরোধ ও চিকিৎসা সেবা উল্লেখযোগ্য মাত্রায় জোরদার করার মাধ্যমে আনুমানিক ৪৮ হাজার শিশুর মৃত্যু এড়ানো যেতে পারে।

গবেষকরা আরও দেখেছেন যে, নিউমোনিয়া মোকাবিলায় প্রচেষ্টা জোরদার করা হলে তা এর বাইরে একটি ‘রিপল ইফেক্ট’ তৈরি করতে পারে, যা একই সঙ্গে অন্যান্য বড় ধরনের শৈশবকালীন রোগে আরও ৯২ হাজার শিশুর মৃত্যু ঠেকাতে পারে।

শিশুদের পুষ্টির উন্নতি, অ্যান্টিবায়োটিক প্রদান ও টিকাদানের আওতা বাড়ানো এবং স্তন্যপানের হার বাড়ানোএই পদক্ষেপগুলো নিউমোনিয়ায় শিশু মৃত্যুর ঝুঁকি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এবং এই হস্তক্ষেপগুলো ডায়রিয়া (২৫ হাজার), সেপসিস (৩ হাজার) ও হামের (৩৩ হাজার) মতো রোগে হাজার শিশুর মৃত্যুও ঠেকাতে পারে।

গবেষকরা বলছেন, ২০৩০ সাল নাগাদ এই প্রভাব এতো ব্যাপক হবে যে শুধুমাত্র নিউমোনিয়া প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশে সব ধরনের কারণে পাঁচ বছরের কম বয়সী ১ লাখ ৪০ হাজার শিশুর মৃত্যু এড়ানো যেতে পারে।

ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস বা ছত্রাকের কারণে নিউমোনিয়া হয় এবং এই রোগে আক্রান্ত হলে শিশুদের ফুসফুস পুঁজ ও তরলের ভরে যায়, যার কারণে তাদের নিঃশ্বাস নিতে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয়।

এই রোগটি বাংলাদেশে শিশুদের অন্যতম বড় ঘাতক, যার কারণে পাঁচ বছরের কম বয়সী ১৩ শতাংশ শিশুর মৃত্যু হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই টিকার মাধ্যমে নিউমোনিয়া প্রতিরোধ এবং স্বল্পমূল্যের অ্যান্টিবায়োটিকের সাহায্যে সহজেই চিকিৎসা করা যেতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশে এক বছরের কম বয়সী অনেক শিশুকে টিকা দেওয়া হয়নি এবং এই রোগের লক্ষণে ভোগা সত্ত্বেও অর্ধেকের বেশি সংখ্যক শিশু প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা পায় না।

বিশেষজ্ঞরা বলেন ‘যে পরিমাণ জীবন বাঁচানো যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, প্রকৃতপক্ষে সম্ভাবনা তার চেয়ে অনেক বেশি, কেননা এই গবেষণায় অক্সিজেনের সহজলভ্যতা বা বায়ু দূষণ কমানোর জন্য পদক্ষেপ গ্রহণের মতো বিষয়গুলো বিবেচনায় নেওয়া হয়নি, যে বিষয়গুলো নিউমোনিয়ার জন্য বড় ধরনের ঝুঁকি হিসেবে বিবেচিত।’

তাঁরা বলেন, শিশুর খাবারের দিকে বিশেষ নজর দেওয়া জরুরি। দুই বছরের কম বয়সি শিশুদের মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো চালিয়ে যেতে হবে। কাশি হলে বুকে তেল মালিশ করার প্রয়োজন নেই। অহেতুক সাকশন যন্ত্র দিয়ে কফ পরিষ্কার বা নেবুলাইজার ব্যবহার করাও ঠিক নয়। শিশুর সংকটাপন্ন অবস্থা যেমনশ্বাসকষ্ট, বমি, খিঁচুনি বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো উপসর্গ দেখা দেওয়ার আগে অবশ্যই দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে