নিউজিল্যান্ড সফরে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি আত্নবিশ্বাস বাংলাদেশকে নিয়ে এখন নতুন করে ভাববে সবাই

ক্রীড়া প্রতিবেদক | বুধবার , ১২ জানুয়ারি, ২০২২ at ১০:৩২ পূর্বাহ্ণ

অনেক প্রতীক্ষার পর নিউজিল্যান্ডকে তাদেরই মাটিতে হারানোর স্বাদ দিতে পেরেছে বাংলাদেশ। মাউন্ট মঙ্গানুইয়ের সেই জয় তাই পুরো বাংলাদেশের কাছেই অনেক আরাধ্য। এখন আর দেশের বাইরে যে কোনো দল সতর্ক থাকবে বাংলাদেশ দরকে নিয়ে। তেমনটাই মনে করেন বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক মোমিনুল। তার বিশ্বাস বাংলাদেশ দলের সামর্থ্য নিয়ে এখন সচেতন হয়ে যাবে সব দলই। দেশের বাইরে বাংলাদেশের টেস্ট জয় এই প্রথম নয়। উপমহাদেশে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আছে একটি জয়। দুটি করে জয় আছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। ২০০৯ সালে খর্ব শক্তির ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে সিরিজ জিতেছিল বাংলাদেশ। এখন পর্যন্ত দেশের বাইরে যা তাদের একমাত্র। তবে নিউজিল্যান্ডে এবারের জয়টা সবকিছুর ওপরে। টেস্টের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে এই জয়ের পর বাংলাদেশকে এখন সবাই নতুন আলোয় দেখবে বলে বিশ্বাস মোমিনুলের। তাই দেশের বাইরে নিজেদের আরও কঠিন পরিস্থিতিতে দেখছেন তিনি।
মোমিনুল বলেন আমার মনে হয়, দলীয় দিক থেকে আমাদের জন্য আরও অনেক চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। কারণ আমরা যখন বিদেশে খেলতে যেতাম, তখন তারা ধরে নিত আমরা বিদেশে খুব একটা ভালো করতে পারি না। প্রতিপক্ষ ওভাবেই চিন্তা করত। এখন সবার মধ্যে সচেতনতা চলে আসবে। সামনে দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ আছে। শ্রীলঙ্কা সিরিজ আছে। এরপর আবার ওয়েস্ট ইন্ডিজে খেলা আছে। সবাই আরও বেশি সতর্ক হবে। আমার মনে হয় আমাদের জন্য আরও বেশি চ্যালেঞ্জ হবে। জিনিসটা এত সহজ হবে না। আরও চ্যালেঞ্জিং হবে। এই চ্যালেঞ্জটা আমাদের নিতে হবে। প্রসেসটা ধরে রাখতে হবে।
টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে ১২ পয়েন্ট লাভ। নিউজিল্যান্ডে প্রথমবারের মতো কোনো সিরিজে হার এড়ানো। মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে পেসারদের বোলিং। ক্রাইস্টচার্চে লিটন দাসের সেঞ্চুরি। বছরের প্রথম সিরিজে বাংলাদেশের প্রাপ্তি আছে বেশ কিছু। তবে এসব ছাপিয়ে মোমিনুল হকের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে হচ্ছে দেশের বাইরে জেতার বিশ্বাস জন্মানো। দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে তিন দিনেই ইনিংস ব্যবধানে হেরে গেছে বাংলাদেশ। এই ম্যাচে পাত্তা না পেলেও সফরকারীদের অর্জনের মাহাত্ম্য কমছে না। ১-১ ব্যবধানে সিরিজ ড্র করেছে বাংলাদেশ। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে মুমিনুল বলেন, আমরাও পারি এই বিশ্বাস নিয়ে দেশে ফিরছেন তারা। আমাদের টেস্ট দল নিয়ে তো কাজের অনেক বাকি আছে। উন্নতির অনেক কিছুই বাকি আছে। অনেক কিছু করা যাবে। আমি খুব কঠিন সময়ে নেতৃত্ব পেয়েছিলাম। তখন আমি স্বপ্ন দেখতাম বড় দলের বিপক্ষে ম্যাচ জেতার। মানুষ কোনো কিছু বিশ্বাস করে সেটা করে দেখানোর জন্য। আমাদের বিশ্বাস করার জন্য একটা ফল দরকার ছিল। অন্তত সবাই বিশ্বাস করবে যে আমরা পারি।
আমার মনে হয় প্রথম টেস্ট জেতা খুবই দরকার ছিল। এখন সবাই বিশ্বাস করতে পারছি, আমাদের সামর্থ্য আছে। বিদেশে গিয়ে টেস্ট ম্যাচ জেতা যায়। এখন একটা টেস্ট জিতলাম। পরে আরেকটা টেস্ট জিতব। এভাবে এক সময় আমরা সিরিজ জিতব। ওই বিশ্বাসটা মনে হয় সবার ভেতরে আনা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। প্রথম টেস্ট জেতাতে মনে হয় ওই বিশ্বাসটা সবার ভেতরে এসেছে। প্রাপ্তি বেশি প্রথম টেস্টেই। তবে হতাশায় মোড়ানো দ্বিতীয় টেস্টেও কিছু আশার ঝিলিক দেখেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। ইতিবাচক তো অনেক কিছুই আছে। আমি সবসময় সংবাদ সম্মেলনে বলি, আমাদের দলীয় ফল তখনই ভালো হয়, যখন আমরা সম্মিলিতভাবে ভালো খেলি। সেটা ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং যাই বলেন। আমার মনে হয়, এটা একটা ইতিবাচক ব্যাপার ছিল প্রথম টেস্টে।
দ্বিতীয় টেস্টে প্রথম ইনিংসে আমার মনে হয়, আমরা খুব বাজে ব্যাটিং করেছি। আমরা যতটা আশা করেছিলাম বোলিংটাও তেমন করতে পারিনি। এরপরও প্রথম ইনিংসে ভালো ব্যক্তিগত ইনিংস ছিল। রাব্বির ফিফটি ছিল, সোহান ৪১ করেছে।
আমার মনে হয়, সিনিয়র খেলোয়াড় হিসেবে, অধিনায়ক হিসেবে আমার আরও ভালো করা উচিত ছিল। দ্বিতীয় ইনিংসে লিটনের সেঞ্চুরি অসাধারণ একটা ইনিংস। সোহানও খুব ভালো করছিল। পাকিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টে ভরাডুবির পর কে ভাবতে পেরেছিল, বাংলাদেশ সিরিজ ড্র করে ফিরবে। নিজেদের ইতিহাসের সেরা জয়ে সেটাই হয়েছে বাস্তব। ক্রাইস্টচার্চে বাজে হারের পরও তাই মুমিনুল দেখেছেন প্রাপ্তির পাল্লা ভারী। এটা আমাদের জন্য অসাধারণ এক অর্জন। দেশের বাইরে আমরা তেমন ভালো করি না। সেদিক থেকে এই জয়টা আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমরা এই মোমেন্টাম ধরে রাখতে চাই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ১ম বিভাগ ক্রিকেট লিগের মতবিনিময় সভা আজ
পরবর্তী নিবন্ধনিউ ইয়র্কের পাঁচতারকা হোটেল কিনছেন মুকেশ আম্বানি