নিঃশব্দে ছড়িয়ে পড়ছে ‘আইস’

ইয়াবার চেয়ে শত গুণ ক্ষতিকারক

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ৩ মার্চ, ২০২১ at ৬:০১ পূর্বাহ্ণ

নতুন মাদক আইস বা ক্রিস্টাল মেথ আমদানির কারণে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কপালে। এমডিএমএ, আইস ডিমেথ, মেথান ফিটামিন বা ক্রিস্টাল মেথ নামে পরিচিত দামি এই মাদক বাজারে ছড়িয়ে পড়ছে নিঃশব্দে। এতদিন পর্যন্ত ঢাকাকেন্দ্রিক বিচরণ বলে ধারণা করা হলেও গত ২৪ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম নগরীতে ভয়ংকর মাদক আইস পাওয়ার ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ভাবছে এর আমদানির উৎস নিয়ে। সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেম স্টিমুলেটিং ড্রাগস নামে পরিচিতি এই মাদক ইয়াবার চেয়ে শত গুণ ক্ষতিকারক বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। অধিক দামে ক্রয় করে এই মাদক সেবনের ফলে ধ্বংস হচ্ছে অভিজাত ও উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানেরা। চট্টগ্রামে প্রথমবারের মতো ক্রিস্টাল মেথ পাওয়া গেছে র‌্যাবের এক অভিযানে। র‌্যাব কর্মকর্তারা ধারণা করছেন, আফ্রিকা অথবা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কোনো দেশ থেকে ‘আইস’ হিসেবে পরিচিত ভয়ংকর এই মাদক বাংলাদেশে ঢুকেছে। ২৪ ফেব্রুয়ারি রাতে খুলশী থানার মোজাফফর নগর বাই লেইন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১৪০ গ্রাম আইসসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
র‌্যাব চট্টগ্রাম জোনের উপপরিচালক মেজর মুশফিকুর রহমান বলেন, গ্রেপ্তারকৃত দুজন ক্রিস্টাল মেথগুলো ক্রেতার কাছে হস্তান্তরের জন্য অপেক্ষা করছিল। গ্রেপ্তার হওয়া শফিউল আলম করোনার লকডাউন শুরুর আগে আফ্রিকার মোজাম্বিক থেকে দেশে ফেরেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে মোজাম্বিকে অবস্থান করছিলেন। আমাদের কাছে তথ্য আছে, সাধারণত আফ্রিকা কিংবা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মিয়ানমার, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ডে এসব মাদক পাওয়া যায়। যেহেতু শফিউল আফ্রিকার দেশে ছিলেন, সেই সূত্র ধরেই আমরা তদন্ত করছি।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য মতে, ২০১৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ঢাকার মোহাম্মদপুর থেকে ৮ গ্রাম আইসসহ তিনজনকে আটক করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। এরপর ওই বছরের ২৭ জুন ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে আইসসহ নাইজেরীয় একজন নাগরিককে আটক করা হয়। তার কাছে ৫২২ গ্রাম এ ধরনের মাদক পাওয়া যায়। সেই মাদক আফ্রিকা থেকে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়েছিল বলে অধিদফতরের কর্মকর্তাদের ভাষ্য।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, নব্বই দশকের শেষ দিকে দেশে মাদক হিসেবে ইয়াবা সেবন চললেও ২০০২ সালের দিকে তা ধরা পড়ে। যদিও শুরুর দিকে এ নিয়ে মাথাব্যথা ছিল না প্রশাসনের। সেই ইয়াবা এখন মাথাব্যথার বড় কারণ। ২০১৯ সালের শুরুর দিকে দেশে আইস মিললেও তা বন্ধ করা যাচ্ছে না। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের গোয়েন্দা টিম জানতে পেরেছে, নতুন মাদক আইস বাংলাদেশের বাজার ধরার জন্য বিভিন্ন আফ্রিকান মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের প্রধান রাসায়নিক পরীক্ষক দুলাল কৃষ্ণ সাহা বলেন, ইয়াবা তৈরির মূল উপাদান অ্যামফেটামিন। ইয়াবায় থাকে ২০-২৫ শতাংশ অ্যামফেটামিন। আইসে অ্যামফেটামিন ব্যবহার হয় শতভাগ। যে কারণে ইয়াবায় যে ক্ষতি তার চেয়ে বেশি ক্ষতি আইস সেবনে। কাচের টোব্যাকো পাইপের তলায় আগুনের তাপ দিয়ে ধোঁয়া আকারে এটি গ্রহণ করে মাদক সেবনকারীরা। ধোঁয়ার মাধ্যমের চেয়ে ইনজেকশনের মাধ্যমে এ মাদক নিলে মাত্র ১৫ থেকে ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে এর কার্যক্রম শুরু হয়। এমন পরিস্থিতিতে যে কোনো কর্মকাণ্ড ঘটাতে দ্বিধা করে না এই মাদক গ্রহণকারীরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইস লবণের মতো দানাদারজাতীয় মাদক। দেখতে কখনও চিনির মতো, কখনো মিছরির মতো। আইস উচ্চ মাত্রার মাদক, যা সেবনের পর মানবদেহে উত্তেজনার সৃষ্টি করে। আইসের দাম ইয়াবার চেয়ে অনেক বেশি। ক্ষতি বা প্রভাবও বেশি। এটি সেবনে মস্তিষ্ক বিকৃতিতে মৃত্যুও হতে পারে। তাছাড়া অনিদ্রা, অতিরিক্ত উত্তেজনা, স্মৃতিভ্রম, হৃদরোগকে বেগবান করে।
এই মাদক সয়লাব হলে ইয়াবার চেয়ে বেশি বিপর্যয়ের মুখে পড়বে তরুণ সমাজ। স্ক্যানিংয়ে ধরা পড়ছে না আইস। এই মাদক শরীরে প্রবেশ করলে আর ছাড়ে না বলে অভিমত দেন বিশেষজ্ঞরা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা
পরবর্তী নিবন্ধবিদেশি চকলেট ও বাদামের প্যাকেটে ইয়াবা পাচার