ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদের করা তিন বছর আগের ‘মারধর, ভাঙচুর ও ভয়ভীতি দেখানোর’ মামলায় চিত্রনায়িকা শামসুন্নাহার স্মৃতি পরীমনিসহ আরো একজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছে আদালত। এছাড়া শুনানিতে উপস্থিত না হওয়ায় নিয়মানুযায়ী পরীমনির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের হাকিম মোহাম্মদ জুনায়েদ গতকাল রোববার এ আদেশ দেন।
একই মামলায় পরীমনির কস্টিউম ডিজাইনার জুনায়েদ বোগদাদী জিমির বিরুদ্ধেও অভিযোগ গঠন করে তার বিরুদ্ধেও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। আসামিপক্ষের আইনজীবী নীলাঞ্জনা রিফাত সুরভি বলেছেন, অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য এদিন ধার্য ছিল। তবে অসুস্থ থাকায় পরীমনি আদালতে হাজির হননি। এজন্য পরীমনির পক্ষে অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য সময় চেয়ে তিনি আবেদন করেন। অন্যদিকে বাদীপক্ষ অভিযোগ গঠন শুনানির পক্ষে আবেদন করেন। আদালতে সময়ের আবেদন নাকচ করে অভিযোগ গঠন করেন। একইসঙ্গে পরীমনির জামিন বাতিল করে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। খবর বিডিনিউজের।
এর আগে ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদকে মারধর, ভাঙচুর ও ভয়ভীতি দেখানোর ‘সত্যতা পেয়ে’ গত বছরের ১৮ মার্চ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও ঢাকা জেলার পিবিআই পরিদর্শক মো. মনির হোসেন আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। ওই প্রতিবেদনে পরীমনিসহ জুনায়েদ বোগদাদী জিমিকে অভিযুক্ত করা হয়। তবে মামলার আরেক আসামি ফাতেমা তুজ জান্নাত বনির বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি বলে তদন্ত কর্মকর্তা আদালতকে জানিয়েছেন। পরে একই বছরের ১৮ এপ্রিল আদালত পিবিআইয়ের দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করে পরীমনিকে হাজির হতে সমনও জারি করে। পরে গত ২৬ জুন আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন পেয়েছিলেন পরীমনি।
সাভারের বিরুলিয়ায় বোট ক্লাবে ২০২১ সালের ৮ জুন রাতে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ তুলেছিলেন পরীমনি। এ বিষয়ে ফেসবুকে পোস্টের পর সংবাদ সম্মেলনে আসলে দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। পরে পরীমনির মামলায় ব্যবসায়ী নাসিরকে গ্রেপ্তার করা হয়। নাসির বোট ক্লাবের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন। পরীমনির মামলায় বিচার চলাকালে জামিনে থাকা অবস্থায় নাসির উদ্দিন ২০২২ সালের ৬ জুলাই পরীমনিসহ তিনজনের বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা করেন। এই মামলাতেই পরীমনির বিরুদ্ধে বিচার শুরুর আদেশ দিল আদালত। ২০২২ সালের ১৮ জুলাই ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম রাজীব হাসান পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দেন।
মামলার আরজিতে বলা হয়, পরীমনি ও তার সহযোগীরা সেদিন ক্লাবে ঢুকে মদ পান করে অর্থ পরিশোধ না করেই যেতে চাচ্ছিলেন। তিনি ওই রাতে যখন বোট ক্লাব ছাড়ছিলেন, তখন পরীমনি ‘উদ্দেশ্যমূলকভাবে’ তাকে ডেকে নেন এবং একটি ব্লু লেবেল অ্যালকোহলের বোতল বিনামূল্যে পার্সেল দেওয়ার জন্য চাপ দেন। তিনি এতে রাজি না হওয়ায় পরীমনি তাকে গালমন্দ করেন। বাদানুবাদের এক পর্যায়ে পরীমনি তার দিকে একটি সারভিং গ্লাস ছুড়ে মারেন এবং হাতে থাকা মোবাইল ফোনটিও ছুড়ে মারেন। এতে তিনি মাথায় এবং বুকে আঘাত পান। নাসিরের দাবি, সেই ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য পরীমনি সাভার থানায় ধর্ষণচেষ্টা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা করেন।
অন্যদিকে সাভার থানায় পরীমনির করা ধর্ষণ মামলায় অভিযোগ ছিল, পূর্ব পরিচিত তুহিন সিদ্দিকী অমি গত ৮ জুন রাতে তাকে ‘পরিকল্পিতভাবে’ বোট ক্লাবে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে নাসির তাকে ‘ধর্ষণের চেষ্টা’ ও মারধর করেন। ওই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কামাল হোসেন নাসিরসহ তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেন।
এরপর ২০২২ বছরের ১৮ মে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে আসামিদের বিচার শুরুর আদেশ দেয় আদালত। বর্তমানে মামলাটি সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে।