নির্বাচন শেষ হয়েছে অনেকটা শান্তিপূর্ণভাবে। দেশি–বিদেশি পর্যবেক্ষকরা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছেন। ভোটারের উপস্থিতি নিয়ে নানাজন কথা বললেও এ কথা স্বীকার্য যে নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে। কিন্তু দেশের ভেতর নাশকতাকারীরা তাদের হীন তৎপরতা অব্যাহত রাখতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ। এদের থেকে সতর্ক থাকা জরুরি মনে করছেন তাঁরা। পাশাপাশি এদের ধরে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার উপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তাঁরা বলেন, ‘রাজনীতির নামে নিষ্ঠুরতা কোনোভাবেই কাম্য নয়। রাজনীতির উদ্দেশ্য জনকল্যাণ। পৃথিবীর অনেক দেশেই মানুষের কল্যাণে রাজনীতি করতে গিয়ে নিজের জীবন উৎসর্গ করার বহু বিরল দৃষ্টান্ত রয়েছে। বাংলাদেশেও অতীতে রাজনীতির চরিত্র তেমনই ছিল। আমাদেরও অনেক নেতা ছিলেন, যাঁরা মানুষের কল্যাণে নিজের জীবন উৎসর্গ করে গেছেন। রাজনীতির সেই চরিত্র আজ অনেকটাই বদলে গেছে। রাজনীতির সঙ্গে স্বার্থ জড়িয়ে গেছে। এখন ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য উদগ্র প্রতিযোগিতা হয়। অর্থ ও পেশিশক্তির যথেচ্ছ ব্যবহার হয়। এমনকি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ মারার মতো নিষ্ঠুরতাও হয়।’ উল্লেখ্য, নির্বাচনের আগে যশোর থেকে ছেড়ে আসা বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে কমলাপুর স্টেশনে প্রবেশ করার কিছু আগে আগুন দেওয়া হয়। আগুনে চারটি বগি পুড়ে যায়। শিশু ও নারীসহ চারজন পুড়ে অঙ্গার হয়ে যায়। অনেকে আহত হয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় কয়েকজনকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। শুধু বেনাপোল এঙপ্রেস নয়, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর ট্রেনে নাশকতার অনেকগুলো ঘটনা ঘটেছে। রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলেন, যেসব মানুষ হতাহত হয়েছে তারা রাজনীতি বোঝে না। তারা কষ্ট করে সংসার খরচের জোগান দেয়। তারা ঘরে বসে গেলে তাদের সংসার খরচ কে বহন করবে? নিরাপরাধ মানুষকে কেন হামলার টার্গেট করা হচ্ছে, সেটাও বোধগম্য নয়।
এদিকে, চট্টগ্রাম নগরীর কালুরঘাট বিসিকের ভেতরের মাবিয়া রশিদিয়া টেকনিক্যাল স্কুলের সামনে পুলিশের রিকুইজিশন করা একটি বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। গত শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে এই ঘটনা ঘটে। এতে কেউ হতাহত হয়নি।
কালুরঘাট ফায়ার স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার বাহার উদ্দিন আজাদীকে বলেন, বাসে আগুন লাগার খবর পেয়ে আমাদের দুটি গাড়ি ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। আধা ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুনে বাসটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি বলেন, বাসটি রিকুইজিশন করা ছিল। ভোটকেন্দ্রে মালামাল লোড শেষে বাসটি দাঁড়িয়ে ছিল। তখন বাসে কেউ ছিল না। আগুন দেওয়ার ঘটনাটি খুব দ্রুতই ঘটে যায়। চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহিদুল কবির আজাদীকে বলেন, অগ্নিকাণ্ডের শিকার বাসটি পুলিশের রিকুইজিশন করা ছিল। ঘটনার জড়িতদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। কে বা কারা আগুন দিয়েছে তা এখনো জানতে পারিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, দেশের সাধারণ মানুষ তাদের জীবন–জীবিকার কারণে বাধ্য হয়েই যানবাহনে বা ট্রেনে চলাচল করছে, এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাচ্ছে। এই সাধারণ মানুষকে শিকারে পরিণত করে দাবি আদায়ের কৌশল বিকৃত মানসিকতার পরিচয় বহন করে। শুধু নাশকতার ওপর নির্ভরশীল রাজনীতির পরিণতি ভালো হতে পারে না। এতে অর্থনীতির ক্ষতি, সাধারণ মানুষের জীবন–জীবিকা– সবই বিপর্যস্ত। যেসব কর্মসূচিতে জনগণের প্রাণ ও সম্পদের নিরাপত্তা বলে কিছু থাকে না, সে ধরনের কর্মসূচি পরিহার করার ওপর জোর দিয়েছেন তাঁরা।
বলার অপেক্ষা রাখে না, জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়া সরকারের দায়িত্ব। বিশেষ পরিস্থিতিতে ইমার্জেন্সি (জরুরি) শাটল, ইমার্জেন্সি ট্রলি ও ইমার্জেন্সি টহলব্যবস্থার মাধ্যমে ট্রেনকে নিরাপদ রাখার ব্যবস্থা নেওয়ার নিয়ম। এই তিনটি ব্যবস্থা কার্যকর থাকলে যাত্রী ও মালবাহী ট্রেনগুলোকে নাশকতার হাত থেকে রক্ষা করা অনেকটাই সম্ভব।
ভবিষ্যতে বাংলাদেশে যেন এরকম নাশকতা আর না হয়, সবাই যেনো সমাজে নিরাপদে বাঁচতে পারে, সেজন্য সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি সব সময়েই উঠেছে। তবে আগেও সেটা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি বলে এসব হিংসাত্মক ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। আমরা রাজনীতির নামে কোনো অবস্থাতেই এমন নৃশংসতা দেখতে চাই না। যেকোনো মূল্যে এ ধরনের নিষ্ঠুর কর্মকাণ্ড প্রতিহত করতে হবে। নাশকতাকারীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।