নালায় পড়ে প্রাণহানির জন্য দায়ী চসিক ও সিডিএ

মন্ত্রিপরিষদের নির্দেশে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ৩ নভেম্বর, ২০২১ at ৬:১৯ পূর্বাহ্ণ

নগরে খাল-নালায় পড়ে প্রাণহানির জন্য চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) ও সিডিএকে দায়ী করা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে সংস্থা দুটিকে দায়ি করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার প্রতিবেদনটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়েছে। গত ২৫ আগস্ট মুরাদপুরে নালায় পড়ে নিখোঁজ হন সবজি বিক্রেতা সালেহ আহমেদ। গতকাল পর্যন্ত তার খোঁজ মিলেনি। এরপর ২৭ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে আগ্রাবাদে নালায় পড়ে মারা যান বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সেহেরিন মাহবুব সাদিয়া। এ দুজনের মৃত্যুর ঘটনায় দায়ি কে সে প্রশ্ন উঠেছিল বিভিন্ন মহল থেকে। যদিও চসিক ও সিডিএ কেউ দায় স্বীকার করেনি। বরং পরস্পরকে দোষারোপ করেন দুই প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীলরা। উল্লেখ্য, গত ৩০ জুন নগরের মেয়র গলি এলাকায় চশমা খালে পড়ে অটোরিকশাচালক ও এক যাত্রীর মৃত্যু হয়েছিল। এদিকে ৩১ আগস্ট মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ম্যাজিস্ট্রেসি পরিবীক্ষণ অধিশাখা থেকে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারকে চিঠি দিয়ে নালায় পড়ে মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত করে ‘দায়দায়িত্ব নিরুপণসহ’ প্রতিবেদন পাঠানোর নির্দেশনা দেয়া হয়। এর প্রেক্ষিতে বিভাগীয় কমিশনার ২ অক্টোবর চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন বিভাগীয় কমিশনার। এতে সিএমপি কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি, সিডিএ সচিব, পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী এবং চট্টগ্রাম শহরে জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সমপ্রসারণ ও উন্নয়ন প্রকল্পের দুই পরিচালককে রাখা হয়। কমিটি গত সোমবার বৈঠক করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি করে।
কমিটির আহবায়ক চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান দৈনিক আজাদীকে বলেন, বিভাগীয় কমিশনার মহোদয়কে রিপোর্ট জমা দিয়েছি। তিনি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়ে দিবেন। কাকে দায়ি করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দায়-দায়িত্ব নির্ধারণ নিয়েই আমরা কাজ করেছি। এটা তো খালি চোখেই সবাই দেখতে পাচ্ছে, দায়-দায়িত্ব কার। যে দুটো সংস্থা কাজ করছে এদের বাইরে দায়-দায়িত্ব কারো নাই। এখানে ওয়াসা, পানি উন্নয়ন বোর্ড, পুলিশ বা প্রশাসনেরও দায়িত্ব নাই। এখানে সিটি কর্পোরেশন ও সিডিএ কাজ করছে। কাজেই দায়-দায়িত্ব তাদের। দুর্ঘটনার পর বাঁশের ঘেরাও দেয়া হয়েছে। আগে দেয়নি কেন। কোনো সুপারিশ করা হয়েছে কীনা জানতে চাইলে বলেন, কোনো সুপারিশ করিনি। দায়দায়িত্ব নির্ধারণ করতে বলেছে সেটায় চিহ্নিত করেছি।
তিনি বলেন, সেখানে সিডিএ’র জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে। কাজ চলাকালীন সড়ক ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব প্রকল্প কর্তৃপক্ষের। তাই ব্যবসায়ী নিখোঁজের মূল দায় সিডিএর। একই সঙ্গে চসিক নগরের প্রধান উন্নয়ন সেবা সংস্থা। নগরের নাগরিকদের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব চসিকের। কিন্তু চসিক ফুটপাত ও সড়কে নির্বিঘ্নে চলাচলে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা না করায় তারাও দায় এড়াতে পারে না। এদিকে বিভাগীয় কমিশনারকে দেয়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের চিঠিতে বলা হয়েছে, ২৫ আগস্ট জলমগ্ন ফুটপাত দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় পা পিছলে নালায় পড়ে তীব্র স্রোতে এক ব্যক্তি (ছালেহ আহমেদ) তলিয়ে যান। রাস্তার পাশে নালা খোলা অবস্থায় রাখা এবং এর কারণে প্রাণহানির বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। এ স্থানে যদি কোনো উন্নয়ন কার্যক্রম চলমান থাকে, তাহলে সেখানে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি থাকা উচিত ছিল।’ উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) ও সিডিএর চরম অবহেলার কারণেই নগরের মুরাদপুরে নালায় পড়ে সবজি বিক্রেতা সালেহ আহমেদ এবং আগ্রাবাদে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সেহেরিন মাহবুব সাদিয়ার মৃত্যু হয়েছে দাবি করে সিডিএ চেয়ারম্যান ও চসিক প্রধান নির্বাহীসহ ১৩ জনকে গত ১৮ অক্টোবর লিগ্যাল নোটিশ দিয়েছিল ‘চিলড্রেন চ্যারিটি বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন’ (সিসিবি ফাউন্ডেশন) এর পক্ষে ব্যারিস্টার আবদুল হালিম ও আইনজীবী ইশরাত হাসান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ‘ভোট না দিলে কবরস্থানে জায়গা দেব না ’
পরবর্তী নিবন্ধজেল হত্যা দিবস আজ