নালায় পড়ে আবারো শিশুর মৃত্যু

হালিশহর আনন্দিপুর এলাকা তদন্তে চসিকের তিন সদস্যের কমিটি গঠন

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ১০ জুলাই, ২০২৫ at ৬:২২ পূর্বাহ্ণ

নালায় পড়ে নগরের হালিশহর আনন্দিপুর এলাকায় হুমায়রা আক্তার নামে তিন বছরের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। নালাটি ছিল একটি বাসার ‘সার্ভিস ড্রেন’। গতকাল বিকেল ৩টার দিকে বল কুড়াতে গিয়ে ড্রেনটিতে পড়ে যায় ওই শিশু। পানির স্রোত থাকায় মুহূর্তেই তলিয়ে যায় সে। এর প্রায় এক ঘণ্টা পর পড়ে যাওয়ার স্থান থেকে অন্তত ৩০ গজ দূরে নালা থেকে স্থানীয়দের সহযোগিতায় তার মরদেহ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস। এর আগে গত ১৮ এপ্রিল চকবাজার হিজরা খালে পড়ে মারা যায় সেহেরিশ নামে আরেক শিশু। হুমায়রা আবদুর রহমান ও মরিয়ম দম্পতির একমাত্র সন্তান। তাদের বাসা ঘটনাস্থলের অদূরে একই এলাকায়। আবদুর রহমান ক্যাবল সংযোগ প্রতিষ্ঠানের লাইনম্যান হিসেবে কর্মরত আছেন। একমাত্র সন্তান হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন তিনি। আর বুকফাটা আহাজারি করছিলেন হুমায়রার মা।

নালায় পড়ে হুমায়রার মৃত্যুর বিষয়ে বিস্তারিত তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। এতে চসিকের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার ইখতিয়ার উদ্দিন আহমেদ চৌধুরীকে আহবায়ক ও নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ার জাহানকে কমিটির সদস্য সচিব করা হয়। কমিটির অপর সদস্য হচ্ছেন ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মো. সরফুল ইসলাম মাহী। কমিটিকে এক কার্যদিবসের মধ্যে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়। এছাড়া চসিকের পক্ষ থেকে দাফনকাফন খরচ বাবদ হুমায়রার পরিবারকে ৩০ হাজার টাকা সহায়তা প্রদান করা হয়। হুমায়রার স্বজন ও এলাকাবাসীর সাথে আলাপকালে জানা গেছে, যে সার্ভিস ড্রেনে হুমায়রা পড়ে যায় সেটি ছিল আনন্দিপুর জামে মসজিদের সামনে নিয়াজ ভবনের পাশে। ওই ভবনে থাকা একটি গার্মেন্টসএ চাকরির বিষয়ে কথা বলতে আসেন হুমায়রার মা। তিনি কথা বলার সময় হুমায়রা ভবনের গেটের সামনে একটি বল নিয়ে অপর একটি শিশুর সঙ্গে খেলছিল। এসময় বলটি বাইরে পড়ে যায়। হুমায়রা সেটি কুড়াতে গিয়ে পড়ে যায় ড্রেনে। হুমায়রা আনুমানিক আড়াইটা থেকে তিনটার মধ্যে নালায় পড়ে যায় বলে স্থানীয়রার জানান।

হুমায়রার মা কান্নজড়িত কণ্ঠে সাংবাদিকদের বলেন, আমি ভেতরে ছিলাম। আমার মেয়ে গেটের সামনে বল দিয়ে খেলছিল। বল পানিতে পড়ে যায়। মেয়ে বল নিতে গিয়ে নালায় পড়ে যায়।

ঘটনাস্থলে এক প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিকদের জানান, তিনি কর্মস্থল থেকে ফিরছিলেন। এসময় দুই শিশু খেলছিল। শিশু দুটিকে পাশ কাটিয়ে সামান্য সামনে যেতেই পেছন থেকে এক শিশু তাকে ডেকে মরিয়মের পানিতে পড়ে যাওয়ার বিষয়টি জানান। তিনি তখন সেখানে একটি বল দেখতে পান। এরপর সাথে সাথে নালায় নেমে মরিয়মকে অনেক খুঁজেও পাননি।

স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, এলাকাবাসী নালার স্ল্যাব তুলে হুমায়রাকে উদ্ধারের চেষ্টা করে। প্রায় এক ঘণ্টা পর তাকে নিথর অবস্থায় উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক হুমায়রাকে মৃত ঘোষণা করেন। উদ্ধারের সময় হুমায়রা ইউটিলিটি সার্ভিসের পাইপের সাথে আটকানো অবস্থায় ছিল।

হালিশহর থানার এসআই ইমন দত্ত বলেন, একটি শিশু নালায় পড়ে নিখোঁজের তথ্য পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে আসি। ফায়ার সার্ভিসের টিমও আসে। স্থানীয় লোকজন ফায়ার সার্ভিসের সহযোগিতায় শিশুটির লাশ উদ্ধার করেছে।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিসের লিডার কামরুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে স্থানীয়দের সহায়তায় ঘটনাস্থলের আরও অন্তত ৩০ গজ দূর থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়।

এ বিষয়ে কানাডায় অবস্থানরত সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন মোবাইলে আজাদীকে বলেন, খবরটি শুনার পর থেকে মনিটরিং করছি। উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছি। তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে। মেয়র বলেন, যে নালায় শিশুটি পড়ে যায় সেটা সার্ভিস ড্রেন। ওখানে একটি গার্মেন্টস আছে, ওটার সার্ভিস ড্রেন। এটা কর্পোরেশন এর ড্রেন না, কর্পোরেশনের বাইরে করেছে। তারপরও কোনো মৃত্যু কাম্য না। বৃষ্টি পড়ছে, পানি উঠেছে। এই জায়গায় অভিভাবকদের একটু সচেতন হওয়া উচিত ছিল।

এদিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন চসিকের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এসময় উপস্থিত ছিলেন চসিকের প্রধান নির্বাহী শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, সচিব আশরাফুল আমিন ও প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার ইখতিয়ার উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী। এসময় চসিকের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার ইখতিয়ার উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, মেইন রোডে স্কেভেটর দিয়ে ড্রেন ক্লিন করা হচ্ছে। সে কাজ চলমান। যতটা ড্রেনে আমরা কাজ করেছি প্রতিটি ড্রেনের স্ল্যাব তুলে আমরা আবার বসিয়ে দিয়েছি। এলাকাবাসীও এটা দেখেছে। আমাদের প্রতিটি ড্রেন স্ল্যাব দিয়ে ঢাকা আছে। আমাদের ড্রেনের নিরাপত্তা আমরা নিশ্চিত করেছি। তিনি বলেন, যে ড্রেনে পড়েছে ওটা সার্ভিস ড্রেন। এটা সিটি কর্পোরেশনের ড্রেন নয়, ভবনটির (ড্রেন সংলগ্ন ভবন)। যে ভবনে থাকা গার্মেন্টেস মরিয়মের মা চাকরির জন্য এসেছেন) নিজস্ব ড্রেন। এটা মেইন ড্রেন এর সাথে যে কানেক্ট হয়েছে ওখানে যে চিপাটা সেখানে ওভার ফ্লো’র কারণে ঢুকে গেছে।

এদিকে বিকেলে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে দেখা গেছে, যে নালায় পড়ে শিশু হুমায়রার মৃত্যু হয় ওই নালায় নেমে প্রতিবাদ জানান আনন্দিপুর সমাজ কমিটির সভাপতি বশির আহমদ কোম্পানি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার
পরবর্তী নিবন্ধটেকনাফের ৫০ গ্রাম প্লাবিত,পানিবন্দি অর্ধলাখ মানুষ