নার্সরা মানবতার পথের যাত্রী, হাজার হৃদয়ে আশার আলো জ্বালান

ইমপেরিয়াল হাসপাতালে বিশ্ব নার্স দিবসের অনুষ্ঠানে আজাদী সম্পাদক

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ১৩ মে, ২০২৫ at ৭:৫৬ পূর্বাহ্ণ

একুশে পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তিত্ব দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক বলেছেন, নার্স হওয়া মানে নিজের চোখের জল আটকে রেখে অন্যের মুখে হাসি ফুটিয়ে তোলা। নার্সদের নিজস্ব কষ্ট আছে। ক্লান্তি আছে। তা প্রকাশ না করে তারা রোগীদের সান্ত্বনা দেন, সাহস জোগান, আশা তৈরি করেন।

গতকাল সোমবার বিকেলে নগরীর অ্যাপোলো ইমপেরিয়াল হাসপাতালের মিলনায়তনে বিশ্ব নার্স দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। চট্টগ্রাম ইমপেরিয়াল কলেজ অব নার্সিং (সিআইসিএন) অনুষ্ঠানটির আয়োজন করেছে।

এম এ মালেক বলেন, ইংরেজিতে একটা কথা আছে, সেভ ওয়ান লাইফ অ্যান্ড ইউ আর এ হিরো, সেভ হান্ড্রেড লাইভস অ্যান্ড ইউ আর এ নার্স। একজনের জীবন বাঁচালে আপনি বীর। সংবাদের শিরোনাম হবেন। সমাজে প্রশংসার জোয়ারে ভাসবেন। আর শত মানুষের জীবন যারা বাঁচায় তারাই নার্স। তারা থাকেন নীরবে। হাসপাতালের করিডোরে ছায়ার মতো চলেন। রাতে জেগে থাকেন অন্যের ঘুম নিশ্চিত করতে। রোগীর ব্যথা উপশম করার জন্য নিজের ব্যথাকে ভুলে থাকেন। কঠিন রোগাক্রান্ত রোগী সুস্থ হলে চিকিৎসক প্রশংসা পান, নার্স রয়ে যান আড়ালে, অগোচরে। আজকের এই আন্তর্জাতিক নার্স দিবসে আমি শ্রদ্ধা ও শুভেচ্ছা জানাচ্ছি, এই হাসপাতালের এবং একই সাথে সমগ্র পৃথিবীর সকল নার্সের প্রতি, যাদের কাজ কখনো হেডলাইন হয় না, কিন্তু যাদের সেবা হাজার হৃদয়ে আশার আলো জ্বালায়। নার্সের পেশাকে সম্মান এবং স্বীকৃতির সঙ্গে প্রথম আলোকবৃত্তে নিয়ে এসেছিলেন ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল। আমরা একটি এমন দেশ চাই, যেখানে প্রতিটি রোগী সময়মতো সেবা পাবে, প্রতিটি নার্স তার কাজের জন্য সম্মান পাবেন এবং স্বাস্থ্যসেবা হবে সবার জন্য প্রাপ্য।

আজাদী সম্পাদক বলেন, একদিন আগে ১১ মে আমরা মা দিবস উদযাপন করেছি। আজ নার্স দিবস। একজন মায়ের পৃথিবী, একজন মায়ের আশাস্বপ্ন, মায়া মমতা সব কিছুই তার সন্তানকে ঘিরে। অন্যদিকে একজন নার্সের দায়িত্ব সর্বজনীন। সব ধরনের রোগীকে নিয়েই আবর্তিত হয় তার পৃথিবী।

দৈনিক আজাদী সম্পাদক বলেন, আমার বয়স এখন ৮৫। জীবনে বহুবার ব্যাংকক, সিঙ্গাপুরসহ পৃথিবীর কিছু বিখ্যাত হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। আপনাদের এই অ্যাপোলো ইমপেরিয়াল হাসপাতালেও চিকিৎসা নিয়েছি। আমি জানি, একজন নার্সের ছোট ছোট মানবিক আচরণ, একটু হাসি, একটি সদয় শব্দএকজন মানুষের সুস্থ হওয়ার ক্ষেত্রে কী অপরিসীম ভূমিকা রাখে। আপনাদের কাছ থেকে যে সেবা এবং মানবিক আচরণ আমি পেয়েছি, তার ঋণ স্বীকার করে যাচ্ছি। কোভিডের সময়ও করোনা আক্রান্ত হয়ে এই হাসপাতালে আমাকে ভর্তি হতে হয়েছিল। এটা ছিল সে সময় যখন নিজেকে বাঁচিয়ে রাখাই সবার জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ, চারদিকে আতঙ্ক গ্রাস করেছে, সেই কঠিন সময়ে রোগীকে সেবা দেয়ার লড়াইটা শুরু করেছিলেন নার্সরাই। বাড়িতে তাদেরও পরিবারপরিজন ছিল। কিন্তু মানবিকতা ও পেশাদারত্বকেই তারা সর্বোচ্চ স্থান দিয়েছিলেন।

তিনি আরো বলেন, আমরা যেন ভুলে না যাই, জন্মের আনন্দ এবং মৃত্যুর বেদনার সঙ্গী হন নার্সরাই। বলা হয়ে থাকেনার্স হচ্ছেন সেই মানুষ যিনি প্রতিদিন অনেকের জীবনের সূচনা দেখেন। সমাপ্তির সাক্ষী থাকেন। তাই নার্সদের যথাযথ সম্মান, প্রশিক্ষণ ও সুযোগ সুবিধার ব্যাপারে ব্যক্তি হিসাবে, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে উদ্যোগ নিতে হবে। তবে আমি যেখানে যাই আশার কথা বলি। স্বপ্নের কথা বলি। আশা আর আত্মবিশ্বাস ছাড়া এ পৃথিবীতে কোনো মহৎ অর্জনই সম্ভব নয়। আপনারা নার্সরা মানবতার পথের যাত্রী। রোগের চিকিৎসায় হারজিত থাকতে পারে। কিন্তু রোগীর সেবায় জয় ছাড়া আর কিছুই নেই। যদি একজন মানুষের মুখেও হাসি ফোটাতে পারেন, তাহলে জেনে রাখুন, আপনাদের কাজ সার্থক।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে নাহিদা বানু বলেন, অ্যাপোলো ইমপেরিয়াল হাসপাতালের নার্সদের সেবার মান এক কথায় অতুলনীয়। আমি আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে কথাগুলো বলছি। শুধু আমার সাথে নয়, এখানকার নার্সরা যেভাবে প্রতিটি রোগীর সাথে পরম মমতায় সেবা দেন, এতে রোগীদের মনে প্রশান্তি চলে আসে।

অ্যাপোলো ইমপেরিয়াল হাসপাতালের চেয়ারম্যান এবং দৈনিক আজাদীর পরিচালনা সম্পাদক ওয়াহিদ মালেক বলেন, নার্সিং কেবল একটি পেশা নয়, এটি একটি মহান সেবা। রোগীদের ভালোবাসা এবং যত্নই একজন নার্সকে মহান করে তুলে। আপনারা শুধু ওষুধ দেন না, আপনারা আশা দেন, সাহস দেন ও বেঁচে থাকার প্রেরণা দেন।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন, অ্যাপোলো ইমপেরিয়াল হাসপাতালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হেলাল উদ্দিন, ডেপুটি চিফ অফ মেডিকেল সার্ভিস ডা. ফজলআকবর, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট অধ্যাপক ডা. আকরাম হোসাইন এবং চিফ নার্সিং অফিসার শান্তা রানি সাহু প্রমুখ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসিসিইউ বন্ধ, আইসিইউ বন্ধ হওয়ার পথে
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬