এরশাদ সরকারের আমলে সংসদে ৩০ জন নারী সাংসদকে ৩০ সেট অলংকার হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছিল। নারী সমাজের জোরালো আন্দোলনের ফলে নারীর প্রতি বিরোধ ও বৈষম্য ধীরে ধীরে কমে এসেছে বটে, কিন্তু একেবারেই তা বিলুপ্ত হয়নি। বরঞ্চ নারীর প্রতি সহিংসতা ও বৈষম্যের ধরণ পাল্টে ধারণ করেছে এক কঠিন আর দুর্বিষহ পরিস্থিতিতে। দীর্ঘদিন থেকেই নারীনেত্রীরা সংসদে সংরক্ষিত আসন নয়, সরাসরি নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছিল। উনাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সংসদে ৫০ আসন বরাদ্দ ছিল। এবার অন্তবর্তী সরকারের কাছে নারী বিষয়ক বিশদ সুপারিশমালাসহ বিশেষ প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন। সর্বক্ষেত্রে এবং সর্বস্তরে নারী পুরুষের বৈষম্য বিলোপ এবং নারী পুরুষের সমতা অর্জনের অন্তরায় চিহ্নিতকরণ শীর্ষক এই প্রতিবেদন নারীর অগ্রযাত্রায় নিঃসন্দেহে এক বিশাল মাইলফলক। নারীর অগ্রযাত্রায় যাবতীয় প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণে নারী সংস্কার কমিশন অনেকগুলো ইতিবাচক দাবি পেশ করেছেন। এই কমিশনে যারা রয়েছেন, তারা দীর্ঘদিন ধরেই নারীর অগ্রযাত্রা ও কল্যাণ কামনায় কাজ করেছেন স্ব স্ব অবস্থান থেকেই। কাজেই তাদের দাবিগুলোকে ফেলনা ভেবে উড়িয়ে দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। অথচ আমরা দেখেছি, এই প্রতিবেদন জমা দেয়ার সাথে সাথেই হেফাজত ইসলামী ও খেলাফত মজলিশ এই কমিশন বাতিল করার দাবি জানান। একই সাথে জামায়াতে ইসলামী দলও এই কমিশন বাতিল চেয়েছেন। ইসলামী দলগুলোর অসহযোগিতার ফলে নারীদের জন্য ইতিবাচক সুপারিশমালা কতটুকুন কার্যকর কিংবা বাস্তবায়ন হবে তা এখন ভাবনার বিষয়। বর্তমান সরকারের বেশীরভাগ উপদেষ্টাই নারী। উনারা বিগত সময়ে নারী অধিকার আর নারী উন্নয়নের জন্য অনেক কাজ করেছেন। আমার এখনো মনে আছে, আজকের প্রাণী সম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আপা উনার নারী গ্রন্থ প্রবর্তনা এবং উবিনীগ এর উদ্যোগে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সচেতনতা তৈরিতে বিভিন্ন দেশের নারী নেত্রীদের আমন্ত্রিত করে নিয়ে এসেছিলেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নারী নেত্রীদের সাথে নেলসন মান্ডেলার স্ত্রী উইনি ম্যান্ডেলাও এই প্রোগ্রামে এসেছিলেন। ঢাকায় অত্যন্ত সফল ও চমৎকার অনুষ্ঠান আমরা উপভোগ করেছিলাম। তবে যতই বিরোধিতা আসুক, নারী কমিশনের সুপারিশমালায় নারীদের জন্য ইতিবাচক যত বিষয় আছে, সেগুলো বিবেচনা করেই বর্তমান প্রশাসন নিশ্চয় ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন সেই আশায় আমরা আছি।