নারী বিশ্বকাপের ফাইনালে আগামীকাল রোববার মুম্বাইয়ে মুখোমুখি হবে স্বাগতিক ভারত এবং দক্ষিণ আফ্রিকা। এতে নিশ্চিত হয়ে গেছে নতুন চ্যাম্পিয়ন পাবে নারী ক্রিকেট। অস্ট্রেলিয়ার বাইরে শিরোপা জিতেছে ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড। এবার তাদের ছাড়িয়ে নতুন চ্যাম্পিয়নের আবির্ভাব ঘটবে। গত বৃহস্পতিবার রাতে অ্যালিসা হিলির দলকে বিদায় করে উইমেন’স বিশ্বকাপের ফাইনালে জায়গা করে নেয় ভারত। দ্বিতীয় সেমি–ফাইনালে ৫ উইকেটে জয়লাভ করে হারমানপ্রিত কৌরের দল। ফিবি লিচফিল্ডের দারুণ সেঞ্চুরির জবাবে অপরাজিত ১২৭ রানে দুর্দান্ত ইনিংসে ব্যবধান গড়ে দেন জেমিমা রদ্রিগ্স। অস্ট্রেলিয়ার দেওয়া ৩৩৯ রানের লক্ষ্য ছুঁয়ে ফেলল ভারত ৯ বল বাকি থাকতে। এবারের আসরে দুই দলের প্রথম দেখায় ভারতের ৩৩০ রান তাড়ায় জিতেছিল অস্ট্রেলিয়া। বিশ্বকাপ তো বটেই, মেয়েদের ওয়ানডেতেই সেটা ছিল সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়। তিন সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে সেই রেকর্ড নিজেদের করে নেয় ভারত। হারিয়ে দিল মেয়েদের ক্রিকেটের প্রবল শক্তি, গত আসরসহ রেকর্ড সাতবারের চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকে। এতে বড় অবদান ভারতের টপ অর্ডার ব্যাটার জেমিমার। ১৩৪ বলে ১৪ চারে তিনি খেলেন ক্যারিয়ার সেরা ১২৭ রানের ইনিংস। তার ব্যাটে ভারত তৃতীয়বারের মতো জায়গা করে নিল ফাইনালে। মুম্বাইয়ের ড. ডিওয়াই পাতিল স্পোর্টস একাডেমিতে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই অধিনায়ক অ্যালিসা হিলিকে হারায় অস্ট্রেলিয়া। তবে এর প্রভাব দলের উপর পড়তে দেননি লিচফিল্ড ও এলিস পেরি। দ্বিতীয় উইকেটে ১৩৩ বলে ১৫৫ রানের জুটি গড়েন এই দুই টপ অর্ডার ব্যাটার। এই জুটি গড়ার পথে মেয়েদের বিশ্বকাপের নকআউট ম্যাচে সর্বকনিষ্ঠ (২২ বছর ১৯৫ দিন) ক্রিকেটার হিসেবে সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েন লিচফিল্ড। এই প্রতিযোগিতার ইতিহাসে শতক করা দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটার তিনি।
আমানজোত কৌরকে তিনি ফিরতি ক্যাচ দিলে ভাঙে জুটি। ৯৩ বলে তিন ছক্কা ও ১৭ চারে ১১৯ রান করেন লিচফিল্ড। পেরির সঙ্গে ৪০ বলে ৪০ রানের জুটি গড়েন বেথ মুনি। ২২ বলে ২৪ রান করে তিনি ফেরার পর থামেন পেরিও। ৮৮ বলে দুই ছক্কা ও ছয় চারে এই টপ অর্ডার ব্যাটার করেন ৭৭ রান। অ্যাশলি গার্ডনারকে ঘিরে এগিয়ে যেতে থাকে অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস। এক প্রান্তে ঝড় তোলেন তিনি। রান আউট হওয়ার আাগে ৪৫ বলে তিনি চারটি করে ছক্কা ও চারে করেন ৬৩ রান। গার্ডনার ছাড়াও রান আউট হয়ে ফেরেন তাহলিয়া ম্যাকগ্রা ও কিম গার্থ। অস্ট্রেলিয়ার শেষ ৪ উইকেট হারায় কেবল ৭ রানে। ৪৯ রানে ২ উইকেট নিয়ে ভারতের সফলতম বোলার শ্রী চারিনি। দিপ্তি শার্মা ২ উইকেট নেন ৭৩ রানে। বড় রান তাড়ায় শুরুতেই শেফালি ভার্মাকে হারায় ভারত। ঝড়ের আভাস দিলেও ২৪ বলে ২৪ রান করে ফেরেন স্মৃতি মান্ধানা। পাওয়ার প্লেতে ২ উইকেট হারানো ভারতকে টানেন জেমিমা ও হারমানপ্রিত কৌর। ১৫৬ বলে তাদের ১৬৭ রানের জুটিতে লড়াইয়ে থাকে ভারত। অ্যানাবেল সাদারল্যান্ডের বলে গার্ডনারকে ক্যাচ দিয়ে থামেন হারমানপ্রিত। ভারত অধিনায়ক ৮৮ বলে দুই ছক্কা ও ১০ চারে করেন ৮৯ রান। দিপ্তি শার্মার রান আউটে ভাঙে তার সঙ্গে জেমিমার ৩৪ বলে ৩৮ রানের জুটি। এক প্রান্ত আগলে রাখা জেমিমা ১১৫ বলে স্পর্শ করেন তিন অঙ্ক। ওয়ানডেতে এটা তার তৃতীয় সেঞ্চুরি, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম। শেষ ৫ ওভারে ভারতের প্রয়োজন ছিল ৩৪, হাতে ছিল ৬ উইকেট। ১৬ বলে ২৬ রানের ছোট্ট কিন্তু কার্যকর ক্যামিও খেলে রিচা ঘোষ ফিরলে আমানজোতকে নিয়ে বাকিটা সারেন জেমিমা। বাউন্ডারিতে ম্যাচ শেষ করা আমানজোত ৮ বলে দুই চারে করেন ১১ রান।
দুর্দান্ত গ্রাউন্ড ফিল্ডিং করেও অস্ট্রেলিয়া খেসারত দেয় ক্যাচ ছাড়ার। জেমিমার ৮২ রানে সহজ ক্যাচ ছাড়েন অ্যালিসা হিলি, ১০৪ রানে আরেকটি সহজ ক্যাচ ছাড়েন তাহলিয়া ম্যাকগ্রা। সেই জেমিমার ব্যাটেই বিদায় ঘণ্টা বেজে যায় ফেভারিটদের। বিশ্বকাপে টানা ১৫ ম্যাচ জয়ের পর হারের স্বাদ পায় অস্ট্রেলিয়া। গত আসরের অপরাজিত চ্যাম্পিয়নরা সবশেষ হেরেছিল ভারতের কাছেই, ২০১৭ আসরের সেমি–ফাইনালে।











