নারী-পুরুষ, বিবাহ ও সংসার

কর্নেল আবু নাসের মো: তোহা, বিএসপি, এসজিপি, এএফডব্লিউসি, পিএসসি (অব) | শুক্রবার , ৯ মে, ২০২৫ at ১০:১৯ পূর্বাহ্ণ

বিবাহ এবং সংসার জীবন মানুষ এর জীবনের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আল্লাহতায়ালা এই পৃথিবী নামক গ্রহটিকে টিকিয়ে রাখার প্রয়োজনে জন্মধারা চালু রাখার জন্য এই পবিত্র ও শান্তিময় ব্যবস্থাটির প্রবর্তন করেছেন। এর প্রয়োজনেই নারী ও পুরুষ নামক শারীরিক ও মানসিকভাবে ভিন্ন দু ধরনের মানুষ সৃষ্টি করেছেন।

আল্লাহতায়ালা নারীকে কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য দিয়েছেন, যেমন : সন্তান জন্ম দানের ক্ষমতা, সন্তান কে দুধ পানের ক্ষমতা, অসীম ধৈর্য ও সহ্য ক্ষমতা, নমনীয়তা, কোমলতা, দয়া, মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা, সর্বোপরি মাতৃস্নেহে সকলকে ধারন করার ক্ষমতা ইত্যাদি। অপরদিকে আল্লাহতায়ালা পুরুষকে কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য দিয়েছেন, যেমন : শক্তি, সাহস, পরিশ্রম করার ক্ষমতা, দায়িত্ববোধ ইত্যাদি। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, পুরুষের যা কিছু বৈশিষ্ট্য কমবেশি হলেও নারীর তা আছে।নারীর যা কিছু বৈশিষ্ট্য কমবেশি হলেও পুরুষেরও তা আছে। কিন্তু সন্তান জন্মদানের ও সন্তানকে দুধ পান করানোর ক্ষমতা কোনদিনই পুরুষের পক্ষে অর্জন করা সম্ভব নয়। এখানেই নারী অনন্য।

আল্লাহতায়ালা সুষ্ঠু সংসার ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার জন্য এবং উভয়ে যেন পরস্পরকে, সংসারকে ও সন্তানকে মানসম্পন্ন সময় প্রদান করতে পারে তা নিশ্চিত করার জন্য নারী ও পুরুষের বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে সুস্পষ্টভাবে দায়িত্ব ভাগ করে দিয়েছেন। নারীর দায়িত্ব হলো সংসার ও সন্তানকে পরিমিত সময় দিয়ে সঠিকভাবে দেখভাল করা, সংসারের কেন্দ্রবিন্দু হিসাবে কাজ করা, পরিবারের সকলের শক্তি ও উৎসাহের উৎস হিসাবে কাজ করা, পারিবারিক সকল সিদ্ধান্তে সক্রিয় অংশীদার হিসাবে কাজ করা ইত্যাদি। অপরদিকে পুরুষের দায়িত্ব হলো এই পরিবারের জন্য খাদ্য/ অর্থ জোগাড় করে নিয়ে আসা (এ অর্থের মালিক পরিবার, কোনভাবেই সেই পুরুষ নয়), পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, স্ত্রীর সাথে আলোচনা করে শান্তিময় সংসার নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা, স্ত্রীকে সংসার, সন্তান ও আর্থিক ব্যবস্থাপনা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনায় সহযোগিতা করা ইত্যাদি।

যে কোনো কর্ম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে হলে জ্ঞান, নৈতিকতা ও দক্ষতা অপরিহার্য বিষয় বিধায় আল্লাহতায়ালা জ্ঞান অর্জন সকল নারী ও পুরুষের জন্য আবশ্যিক করেছেন। নামাজ, রোজার বিধান অনুশীলন না করলে যেভাবে মানুষকে আল্লাহতায়ালার নিকট কঠোর জবাবদিহিতার সম্মুখীন হতে হবে, তেমনি সুযোগ থাকা সত্ত্বেও পরিমিত জ্ঞান আহরণ না করলে একইরকম জবাবদিহিতার সম্মুখীন হতে হবে। এই জ্ঞানের সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে হবে এই পরিবার বা সংসার নামক আল্লাহতায়ালার তৈরী শ্রেষ্ঠ ইউনিটকে কার্যকরী, গতিশীল, সক্রিয় ও শান্তিপূর্ণ করার জন্য।

পরিবার বা সংসার কী? স্বামীস্ত্রী ও সন্তান মিলে গঠিত হয় সংসারের ক্ষুদ্রতম রূপ। এর সাথে স্বামী/স্ত্রীর বাবামা ও ভাইবোন যোগ হয়ে বৃহৎ রূপ ধারণ করতে পারে। এছাড়াও আমাদের পরিবারের সাথে বাবামার পরিবার, ভাইবোনের পরিবার, আত্মীয় স্বজন এর পরিবার এবং প্রতিবেশীর পরিবারের শান্তিময় সুসম্পর্ক নিশ্চিত করে শান্তিপূর্ণ সমাজ, দেশ, বিশ্ব। এটা মানুষকে সুস্‌িহর ভাবে ঠান্ডা মস্তিষ্কে চিন্তা বা কাজ করার সুযোগ দেয়, যা সর্বোচ্চ সৃজনশীলতা, উৎপাদনশীলতা এবং অগ্রগতির জন্য অতি আবশ্যিক। একটি শান্তিপূর্ণ সংসার না থাকলে মানুষ তার মৌলিক চাহিদা নৈতিক ও শান্তিপূর্ণ ভাবে পূরণ করতে ব্যর্থ হয়ে চরম মানসিক অস্থিরতায় ভুগে অনেক অপ্রয়োজনীয় ত্যাগের মাধ্যমে গড়ে তোলা ক্যারিয়ার ধ্বংস করে ফেলে। আল্লাহতায়ালা নারী বা পুরুষ এর ক্যারিয়ার গঠনে কোন বৈষম্য করেন নাই। নারী বা পুরুষ যে কোন কাজ করতে পারেন বা পেশা বেছে নিতে পারেন। তবে সকলকে শালীনতা (পোষাক ও কাজের) রক্ষা করে এবং সংসারের মৌলিক দায়িত্ব (নারীর জন্য সংসার ও সন্তান দেখভাল করা, পুরুষের জন্য খাদ্য/অর্থ সংগ্রহ করা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত কর) পালন নিশ্চিত করেই অন্য কাজে অংশগ্রহণ করতে হবে। এর ব্যত্যয় ঘটলেই ঘটবে বিপর্যয়।

শালীনতা বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্য অবশ্য অনুসরণীয়। আল্লাহতায়ালা জন্মধারা নিশ্চিত করার জন্য নারী ও পুরুষ উভয়ের মধ্যে সৃষ্টি করেছেন অসাধারণ আকর্ষণ এবং মিলিত হবার তীব্র আকাঙ্ক্ষা। এই আকাঙ্ক্ষা পূরণ এর জন্য আয়োজন করেছেন বিবাহ নামক একটি নৈতিক ব্যবস্থা। বিবাহ বহির্ভূত মিলন জন্ম দিবে অবৈধ সন্তান, পিতৃ পরিচয়হীন এই সন্তান ভীষণ অযত্নে বড় হয়ে হবে মাদক আসক্ত ও সৃষ্টি করবে অনেক সামাজিক সমস্যার। এজন্য নারীপুরুষের শালীন পোশাক ও নিয়ন্ত্রিত মেলামেশা অত্যন্ত জরুরি। লেখক : অধ্যক্ষ, লিডার্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ

পূর্ববর্তী নিবন্ধযুদ্ধ এবার বন্ধ করো
পরবর্তী নিবন্ধমুনাফিকের পরিচয়