আগামীকাল আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস। প্রতি বছরের মতো এ বছরও দিনটি এসেছে। নানা কর্মসূচি পালিত হয় প্রতিবছর এ উপলক্ষ্যে। কিন্তু নারী নির্যাতন বন্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ তেমন দৃশ্যমান হয় না। সমাজবিজ্ঞানীরা বলেন, শুধু আইন দিয়ে নয়, নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। তবে নারীদের সম্মান-সুরক্ষার এ দায়িত্ব শুধু নারীদের হতে পারে না। সমাজের সব পক্ষের মানুষকে সমবেতভাবে মানবতার ওপর এই আক্রমণকে রুখতে হবে।
অতি সম্প্রতি নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে নতুন দুইটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবকে পাঠানো নিদের্শনায় কমিটিগুলো গঠন করার জন্য বলা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে পাঠানো নির্দেশনায় বলা হয়েছে, দেশব্যাপী নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে জেলা, উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিটি আছে। এসব কমিটি দায়িত্ব পালনের পরও দেশব্যাপী নারী ও শিশু নির্যাতন বেড়ে গেছে। তাই নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে এই কমিটিগুলোর কার্যক্রম আরো জোরালোভাবে মনিটর করা প্রয়োজন। জেলা কমিটির কার্যক্রম মনিটর করার জন্য বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে বিভাগীয় নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি এবং সারাদেশের কার্যক্রম মনিটরিংয়ের জন্য মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবের নেতৃত্বে ‘কেন্দ্রীয় নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি’ গঠন করতে হবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ মনে করে এসব কমিটি গঠন হলে দেশব্যাপী নারী-শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ কার্যক্রম প্রতিমাসে নিয়মিত ও শৃঙ্খলার সঙ্গে মনিটর করা সম্ভব হবে। নির্দেশনা অনুযায়ী, নতুন দুইটি কমিটি গঠনের মাধ্যমে দেশব্যাপী নারী-শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
নারী নির্যাতন বিরোধী ব্যক্তিরা বিভিন্ন সময়ে জরিপ চালান। তাঁরা বলেন, বিদ্যালয় থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সহপাঠী, শিক্ষক, টিফিন-বিক্রেতা, স্কুলের সামনের ফেরিওয়ালা বা গেইটে দাঁড়ানো রোমিও- কার হাতে না যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন নারী শিক্ষার্থীরা! কর্মক্ষেত্রে নারী প্রতিনিয়ত বৈষম্য আর অত্যাচারের শিকার হচ্ছেন। একই দক্ষতা, সময় ও শ্রম দিয়ে নারী পুরুষের অর্ধেক পারিশ্রমিক পাচ্ছেন অনেকক্ষেত্রেই। কর্মক্ষেত্রে অনেক সময়ই নারীকে চোখেই ধর্ষণ করে তার সহকর্মী। কর্মক্ষেত্রে যাবার পথে সকলের মনোরঞ্জনের বস্তুতে পরিণত হয়। ফলে প্রতিবাদের সময় কেউ পাশে এসে দাঁড়ানও না। উল্টো নারীকে আরও হেয় করা হয়। তাই পাঠ্যপুস্তকে বা শিক্ষকের আলোচনায় নারীকে সম্মান করার বিষয়ে আলোচনা থাকতে হবেই।
আসলে দেশে নারীদের কোনো নিরাপত্তা নেই। নিরাপত্তাহীন নারীদের জীবনে সহিংসতা নেমে আসছে। ধর্ষণ, ধর্ষণ শেষে হত্যার মতো নির্যাতন বাড়ছে যা বর্তমান সমাজে ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, দেশে বহু হত্যা, ধর্ষণ ও নির্যাতনের ঘটনা তদন্তের নামে বিচারের আড়ালে পড়ে আছে। যেখানে নারী ধর্ষণ-নির্যাতনের শিকার হবে, সেখানে শুধু প্রশাসন নয়, স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ প্রতিটি পর্যায়ে থাকা জনপ্রতিনিধিদেরও জবাবদিহিতার মধ্যে আনতে হবে।
দেশে যদি ব্যক্তি শুদ্ধ না হয়, কখনও এমন বর্বরতা বন্ধ হবে না। মানুষের মধ্যে যদি হিংস্রতা থাকে, বর্বরতা থাকে তাহলে নারীর প্রতি নির্যাতন কমবে না, বাড়বেই। মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, গণমাধ্যম কিংবা মামলায় যেসব ধর্ষণ নির্যাতনের ঘটনা আসছে, তা খুব সামান্য। বেশিরভাগই আড়ালে থাকছে। শত শত ঘটনা আছে, যারা দিনের পর দিন নির্যাতনের শিকার হয়েছে। যারা ধর্ষণ-নির্যাতনের কথা বলতে পারেন, তাদের হতাশাটা একটু কমে; কিন্তু যারা বলতে পারছেন না, তাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠছে। মানসিক অবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।
এমন অবস্থায় সামগ্রিকভাবে সোচ্চার হতে হবে। আওয়াজ তুলতে হবে নির্যাতনের বিরুদ্ধে। রুখে দাঁড়ানো ছাড়া পথ নেই।এ বিষয়ে প্রশাসনকে আরো কঠোর হতে হবে। নির্যাতন প্রতিরোধে সামাজিক আন্দোলন জরুরি। পরিবার ও শিক্ষাঙ্গনে নির্যাতন বন্ধে সবাইকে সর্বোচ্চ কঠোর হতে হবে।