নারী নির্যাতনের বিষয়ে সমাজের বিবেককে জাগিয়ে তুলতে হবে

| শনিবার , ২০ মার্চ, ২০২১ at ৫:৫১ পূর্বাহ্ণ

সুদের টাকা না পেয়ে গাছে বেঁধে গৃহবধূকে নির্যাতন করার অমানুষিক ঘটনা ঘটেছে চকরিয়ায়। ১৮ মার্চ দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, অসুস্থ স্বামীর চিকিৎসার জন্য নিকটাত্মীয় শওকত আলমের কাছ থেকে সুদ দেওয়ার শর্তে চার হাজার টাকা ঋণ নেন চকরিয়ার বরইতলী ৮ নম্বর ওয়ার্ডের হাফালিয়া কাটাস্থ সবুজ পাড়ার গৃহিণী নূর আয়েশা। সেই চার হাজার টাকার বিপরীতে গত ১০ মাসে চড়া সুদসহ তিনি পরিশোধ করেন ৮ হাজার টাকা। কিন্তু সুদ হিসেবে আরো ২ হাজার টাকা পরিশোধ না করায় তাকে গাছের সাথে বেঁধে নির্যাতন করেন শওকত আলম। গত মঙ্গলবার দুপুরে ধারণ করা এ রকম একটি ভিডিও গত বুধবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা নিয়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এই ঘটনায় শওকতসহ তার সহযোগীদের গ্রেপ্তার করে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেয়ার দাবি ওঠে। বরইতলী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জালাল আহমদ সিকদার বলেন, ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশের পর পরই পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন এবং অভিযুক্ত শওকতকে গ্রেপ্তারে অভিযান চালিয়েছে। কিন্তু এর আগে তিনি সটকে পড়ে। তবে শওকতকে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করায় তার বাবা জহির আলমকে (৫৫) আটক করা হয়েছে।
বাংলাদেশে নারীর প্রতি সহিংসতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই সহিংসতার মধ্যে শারীরিক ও যৌন হয়রানি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিশোরীদের ক্ষেত্রে এটি বেশি হয়। বিশ্বে ৩০ শতাংশের বেশি নারী যৌন ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে বলে এক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে। বিভিন্ন উৎসের মাধ্যমে জানা যায়, বাংলাদেশে কিশোরীসহ ৬০ শতাংশ নারী যৌন ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়। এদের মধ্যে ৮০ শতাংশ অবিবাহিত। বাড়ি, স্কুল, কর্মক্ষেত্র, কোচিং সেন্টার, পরিবহন, স্টেশন, বাজার, মেলা, অনুষ্ঠানাদি সর্বত্র তারা এই হয়রানির শিকার হয়। তাদের জন্য প্রায় নিরাপদ কোনো জায়গাই নেই।
সমাজবিজ্ঞানীরা বলেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে গৃহ নারীর নিরাপদ আশ্রয়স্থল। কিন্তু ঘরেই তাকে অমানবিক সহিংসতার শিকার হতে হয়। প্রতিদিনের খবরের কাগজেও আমরা এসব দেখতে পাই। তাই ঘরেও নারীকে থাকতে হয় হুমকির মুখে। যুগের পর যুগ নারীকে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক মনে করা হচ্ছে। আর এর পরিণতি হচ্ছে ভয়াবহ সহিংসতা। তাঁরা বলেন, আমরা কি জানি কতজন নারী সহিংসতার শিকার হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়? আমরা কি জানি কতজন ধর্ষক স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক? সংবাদপত্রে কয়টা দেখা যায়? ভয়াবহ পাশবিকতার অসংখ্য ঘটনা আমরা জানতে পারি না। দিনের পর দিন এসব নীরবে নারীরা সহ্য করে যাচ্ছে। নারী নির্যাতনের ঘটনা মূলত সংবাদপত্রের মাধ্যমেই জানতে পারি। বর্তমানে নির্যাতনের খবরগুলো গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশিত হওয়ায় ধিক্কার সৃষ্টি হচ্ছে।
নারীর বিষয়ে সমাজের পুরুষের যে প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গি এবং মানসিকতা, তা থেকে আধুনিক যুক্তিযুক্ত দৃষ্টিভঙ্গি অর্জনের জন্য সচেতনতার প্রয়োজন। সমাজের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারীসমাজকে সব ক্ষেত্রে সম-অংশগ্রহণের সুযোগ করে না দিলে এবং নারী ও কন্যাশিশুদের বিরুদ্ধে চলমান সহিংসতা বন্ধ না হলে সমাজ ও রাষ্ট্র এগিয়ে যেতে পারবে না। নারীর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি, এসিড সন্ত্রাস, যৌতুকের দাবি ও পারিবারিক সহিংসতা- এসব প্রতিরোধে যেসব আইন হয়েছে, সেগুলোর বাস্তব প্রয়োগ করতে হবে। সামগ্রিকভাবে নারীকে যৌনতার প্রতীক হিসেবে উপস্থাপন করা যাবে না। নারীকে উপকারভোগী হিসেবে না দেখে পরিবর্তনের সম্পদ হিসেবে দেখতে হবে। সহিংসতা নারী বা পুরুষের কারও জীবনের অংশ হতে পারে না। একের পর এক নারী নির্যাতনের ঘটনা বৃদ্ধি সুস্থতার লক্ষণ হতে পারে না। সমাজ প্রতিনিয়ত বুঝিয়ে দেয় যে পুরুষ ও নারীর সুরক্ষা আলাদা। তাই নারী নির্যাতনের বিষয়ে সমাজের বিবেককে জাগিয়ে তুলতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে