নারী ও শিশু অধিকার প্রসঙ্গে

জেনে নিন আপনার যত অধিকার

জিয়া হাবীব আহসান | বুধবার , ৩ মে, ২০২৩ at ৫:৫৮ পূর্বাহ্ণ

প্রশ্ন: আইনে বহু বিবাহ করার শাস্তি কী ?

উত্তর: বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৪৯৪ ধারাতে বলা আছে যদি কোনও ব্যক্তি এক স্বামী বা এক স্ত্রী জীবিত থাকা সত্ত্বেও এমন কোনও পরিস্থিতিতে বিবাহ করে যা স্বামী বা স্ত্রী জীবিত থাকার জন্য অবৈধ বিয়ে বলে গণ্য হয়েছে, তবে উক্ত ব্যক্তি সাত () বৎসর পর্যন্ত যে কোনও মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবে তদুপরি অর্থ দণ্ডেও দণ্ডিত হবে। দণ্ডবিধির ৪৯৫ ধারার মতে, যদি কোনো ব্যক্তি দ্বিতীয় বা পরবর্তী বিয়ে করার সময় প্রথম বা পূর্ববর্তী বিয়ের তথ্য গোপন রাখে, তা যদি দ্বিতীয় বিবাহিত ব্যক্তি জানতে পারে, তাহলে অপরাধী ১০ বছর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবে এবং অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবে।

প্রশ্ন: বৈবাহিক প্রতারণার শাস্তি কী ?

উত্তর: কাবিননামা সম্পন্ন না করে বিয়ে করে পরে তা অস্বীকার করলে সংক্ষুব্ধ পক্ষ দণ্ডবিধির অধীনে ফৌজদারি আদালতেরও আশ্রয় নিতে পারে। বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৪৯৩ ধারা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি যদি কোনো নারীকে প্রতারণামূলকভাবে আইনসম্মত বিবাহিত বলে বিশ্বাস করান, কিন্তু আদৌ ওই বিয়ে আইনসম্মতভাবে না হয় এবং ঐ নারীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করেন, তবে অপরাধী ১০ বছর পর্যন্ত যে কোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবে। বাংলাদেশ দণ্ডবিধি আইনের ৪৯৬ ধারায় বলা অছে, আইনত বিবাহ নয় জেনেও প্রতারণার উদ্দেশ্যে বিবাহের অনুষ্ঠান উদযাপন করা হয় তাহলে অপরাধী সাত বছর পর্যন্ত সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। তবে এটি জামিনযোগ্য ধারার অপরাধ। বাংলাদেশ দণ্ডবিধি আইনের ৪৯৮ ধারায় বলা আছে, অপরাধজনক উদ্দেশ্যে বিবাহিত নারীকে ফুসলিয়ে নিয়ে যাওয়া বা আটক রাখা হলে অপরাধী ব্যক্তি দুই বছর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডসহ উভয় ধরণের শাস্তি পাবে। তবে জামিনযোগ্য ধারার অপরাধ। যদি অন্য কোনো ধর্মের ব্যক্তি নিজেকে মিথ্যা ধর্মের পরিচয় দিয়ে ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদির মাধ্যমে অন্য ধর্মের কোনো মেয়েকে বিবাহ করে, পরে তা প্রকাশ পায় যে, সে অন্য ধর্মের। এইসব ক্ষেত্রে উক্ত ধারায় অপরাধ সংঘটিত হবে।

প্রশ্ন: ব্যভিচার করলেও অপরাধজনক উদ্দেশ্যে বিবাহিত নারীকে ফুসলিয়ে নিয়ে যাওয়া বা আটকিয়ে রাখার শাস্তি কী?

উত্তর: বাংলাদেশ দণ্ডবিধি আইনের ৪৯৭ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি এমন কোনো নারীর সঙ্গে স্বামীর সম্মতি ব্যতীত যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেন এবং অনুরূপ যৌনসঙ্গম যদি ধর্ষণের অপরাধ না হয়, তাহলে সে ব্যক্তি ব্যভিচারের দায়ে দায়ী হবেন, যার শাস্তি সাত বছর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডসহ উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে। এই ধারায় ব্যভিচারী নারীর কোনো শাস্তি নেই। দণ্ডবিধি ৪৯৮ ধারায় বলা অছে, অপরাধজনক উদ্দেশ্যে বিবাহিত নারীকে ফুসলিয়ে নিয়ে যাওয়া বা আটক রাখা হলে অপরাধী ব্যক্তি দুই বছর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডসহ উভয় ধরণের শাস্তি পাবেন। তবে এটি জামিনযোগ্য ধারার অপরাধ। যদি কোনো ব্যক্তি যেকোনো বয়সের কোনো নারীকে তার সম্মতিতে অথবা সম্মতি ছাড়া আইনানুগ অভিভাবক অর্থাৎ বাবা, ভাই, স্বামীর অধীন থেকে ভালোবেসে বিয়ে করার উদ্দেশ্যে নিয়ে যায়, তবে সেক্ষেত্রে উক্ত ব্যক্তি উক্ত নারীকে অপহরণ করেছে বলে গণ্য হবে এরূপ অপরাধের জন্য মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন ২০১২ এর ১০() উপধারার মতে উক্ত ব্যক্তি অনধিক ১০ (দশ) বৎসর এবং অন্যূন ৫ (পাঁচ) বৎসর সশ্রম কারাদণ্ডে এবং অন্যূন ২০ (বিশ) হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবে। দণ্ডবিধির ৩৬৬ ধারায় বলা হয়েছে যদি কোনো ব্যক্তি নারীকে অপহরণ করে বা অপহরণ করার উদ্দেশ্য হয় অথবা অপহরণ করার ফলে জানা যায় যে, সে নারীকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো ব্যক্তিকে বিবাহ করতে বাধ্য করা অথবা তাকে অবৈধ সহবাসে জোরপূর্বক বা ফুসলিয়ে অথবা ক্ষমতার অপব্যবহার দ্বারা বাধ্য করিলে উক্ত ব্যক্তি দশ বছর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবে এবং তদপুরি অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবে।

প্রশ্ন: পারিবারিক সহিংসতার শিকার নারী ও শিশুর নিরাপত্তা বা আইনী প্রতিকার কোথায় পাওয়া যাবে?

উত্তর: সরকারি হাসপাতালে ও.সি.সি ওয়ার্ডে ভর্তি হলে চিকিৎসাসহ সরাসরি মামলা / এজাহার দায়ের করার ব্যবস্থা রয়েছে, ভিকটিম বা সংবাদদাতাকে থানায় যেতে হবে না। একজন পুলিশ অফিসার, মানবাধিকারকর্মী চিকিৎসা সেবার সনদপত্র নিয়ে মামলার উদ্যোগ নিবেন। যেখানে ও.সি.সি নেই সেখানে সরাসরি থানায় মামলা দায়ের করতে হবে। থানায় মামলা না নিলে সরাসরি মিডিয়াকর্মী, বা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অথবা সোশ্যালমিডিয়ার সাহায্য নিতে হবে। নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে হটলাইন ১০৯ ও পুলিশি সহায়তার জন্য ৯৯৯ আরও বেশি কার্যকর করতে হবে এবং ইমেইল এর মাধ্যমে জি.ডি করার বিধানও রয়েছে। পারিবারিক সহিংসতার অপরাধের বিচার হবে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অথবা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে। উক্ত আইনের অধীন আদালত ভিকটিমকে সুরক্ষা আদেশ অথবা নিরাপদ হেফাজতে রাখার আদেশ দিতে পারেন। সুরক্ষার আদেশ লঙ্ঘন করলে কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে। পারিবারিক সহিংসতা আইনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ভিকটিমকে ক্ষতিপূরণ প্রদানের বিধান যার ফলে এই আইনকে নারী ও শিশুবান্ধব আইন বলা অযৌক্তিক হবে না। ক্ষতিপূরণের পরিমাণ কেমন হবে তা আইনে নির্দিষ্ট না করে ম্যাজিস্ট্রেটের সুবিবেচনার ওপর অর্পণ করেছে। ম্যাজিস্ট্রেট যা ন্যায়সঙ্গত মনে করবেন সে পরিমাণ ক্ষতিপূরণ প্রদানের আদেশ প্রদান করতে পারবেন।

লেখক: আইনবিদ, কলামিস্ট, মানবাধিকার ও সুশাসনকর্মী।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রবাহ
পরবর্তী নিবন্ধদিনব্যাপী নানা কর্মসূচি মুজাফরাবাদ গণহত্যা দিবস আজ