নারীর প্রতি সহিংসতা রোধসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে

| সোমবার , ১৪ জুন, ২০২১ at ১০:২৭ পূর্বাহ্ণ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রগুলো ইসলামের প্রচার ও প্রসারে ভূমিকা রাখার পাশাপাশি সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে জনসচেতনতা বাড়াতে ভূমিকা রাখবে।’ মুজিববর্ষ উপলক্ষে ৫৬০টি মডেল মসজিদের মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ৫০টি মডেল মসজিদের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। গত বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এসব মসজিদের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে জনসচেতনতার গুরুত্ব তুলে ধরার পাশাপাশি নারীর এগিয়ে যাওয়ার পথ আরো মসৃণ করার জন্য ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।
বাংলাদেশে সর্বস্তরের নারীই ধীরে ধীরে উঠে আসছে। তারপরও প্রশ্ন উঠছে, প্রকৃত অর্থে নারীর ক্ষমতায়ন কতটুকু হচ্ছে? নীতি নির্ধারণে মহলে নারীর বর্তমান অবস্থান ও অবদান কেমন? অংশগ্রহণই বা কতটুকু? নারী কি আদৌ প্রভাব বিস্তার করতে পারছে?
আমরা জানি, বাংলাদেশে ১৯৮৬ সালের সাধারণ নির্বাচনে সরাসরি ভোটে মাত্র পাঁচজন নারী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বর্তমানে সংসদে নারী সদস্য রয়েছেন অনেক। এছাড়া মন্ত্রিসভায় নারী আছেন, প্রধানমন্ত্রী নারী, সাবেক প্রধানমন্ত্রী নারী, বিরোধী দলীয় নেতা নারী, এমনকি জাতীয় সংসদের স্পিকারও নারী।
নারীরা এখন পুলিশ, সেনাবাহিনী, নৌ-বাহিনী এবং বিমান বাহিনীতেও ভালো করছেন। কিন্তু নারী শিক্ষার হার যেভাবে বাড়ছে, সেভাবে নীতি নির্ধারণ ও নীতির বাস্তবায়নে তাদের অংশগ্রহণ নেই। আর নারী যদি নীতি নির্ধারণে তার অবস্থান সংহত করতে না পারে, তাহলে নারীর ক্ষমতায়ন আশা করা যায় না।
বাংলাদেশে সরকারের নীতি নির্ধারণে মন্ত্রীদের পরই যাদের ভূমিকা, তারা হলেন সচিব। এই সচিব বা আমলারাই নীতি নির্ধারণ এবং নীতি বাস্তবায়নে মূল ভূমিকা পালন করেন। আর সেখানে নারীদের অবস্থান দেখলে সহজেই বোঝা যাবে নীতি নির্ধারণ এবং নীতি বাস্তবায়নে নারীর অবস্থান। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত এক খবরে জানা যায়, বর্তমান সরকারের প্রশাসনে সচিব পদমর্যাদায় কাজ করছেন মোট ৭৮ জন কর্মকর্তা। তাদের মধ্যে আছেন সাত জন নারী সচিব। দুই জন ভারপ্রাপ্ত সচিব। সব মিলিয়ে বলা যায়, নারী সচিব রয়েছেন মাত্র নয় জন। শতকরা হিসেবে মাত্র ১১ ভাগ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘বাংলাদেশের শীর্ষ পদে এখন নারী। রাজনীতিতেও নারীর উপস্থিতি লক্ষ্য করার মতো। কিন্তু এখানে একটি বিষয় বিবেচনায় নিতে হবে আর তা হলো, পদে নারী থাকলেই হবে না। দেখতে হবে, তিনি প্রকৃত অর্থেই নারীর প্রতিনিধিত্ব করতে পারছেন কিনা। নারী যদি হয় পুরুষন্ত্রের প্রতিনিধি, তাহলে সেটা তো আর নারীর ক্ষমতায়ন নয়।’
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী, দেশের ৫ কোটি ৪১ লাখ কর্মজীবীর মধ্যে ১ কোটি ৬২ লাখ নারী। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের মধ্যে নারীর সংখ্যা ১৬ হাজার ৬৯৭ জন। বিদেশে বিভিন্ন পেশায় কর্মরত ৭৬ লাখ প্রবাসীর মধ্যে ৮২ হাজার ৫৫৮ জন নারী। বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পের ৮০ ভাগ কর্মীই নারী। আর দেশের ৯০ শতাংশ ক্ষুদ্রঋণ ব্যবহারকারীও নারী।
নারীবিষয়ক গবেষকদের মতে, গত ২০ বছরে নারীর মানবিক উন্নয়ন হয়েছে। এই মানবিক উন্নয়নকে কীভাবে নারীর ক্ষমতায়নে রূপান্তর করা যায়, সেটাই আজকের আলোচনার মূলকথা হওয়া উচিত। দেশে আট কোটি নারী। এদের মধ্যে কয়েকজন প্রভাবশালী বা ক্ষমতাধর নারীর উদাহরণ দেওয়া হয়। প্রকৃত অর্থে এর মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন হয়তো বোঝা যাবে না। দীর্ঘ সংগ্রামের ফলে হাজার হাজার বা লাখ লাখ নারী তাঁদের সক্ষমতা অর্জন করেছেন। নারী যদি আত্মনিয়ন্ত্রণ ও সম-অধিকারের ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা করতে পারেন, তাহলে বলা যাবে নারী তার প্রাপ্য অধিকারটুকু ভোগ করছে। বর্তমান সরকার যেহেতু নারী-বান্ধব, সেহেতু নীতিনির্ধারণী মহলে নারীর অংশগ্রহণ বা ক্ষমতায়ন আরো বেশি পরিমাণে হওয়া দরকার বলে আমরা মনে করি। অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বলেছেন যে ‘বাংলাদেশে নারীরা মানবিক উন্নয়নে বিস্ময়কর সফলতা অর্জন করেছেন’। এই মানবিক উন্নয়নের জন্য দীর্ঘদিনের নারী আন্দোলন ও নারী সংগঠনগুলোর ভূমিকা; নাগরিক সমাজের অবদান ও সরকারের ইতিবাচক সিদ্ধান্ত রয়েছে। ইউরোপের প্রজনন হার কমাতে লেগেছে ২০০ বছর। বাংলাদেশের লেগেছে মাত্র ৩০ বছর। তা ছাড়া শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও মাতৃমৃত্যুর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। এভাবে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। এরকম সাফল্য অত্যধিক। এসব অর্জন সত্ত্বেও নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ, মতপ্রকাশ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে স্বাধীনতা, নারীর ক্ষমতায়নসহ আরও অনেক ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধড্রেজিংয়ে বাঁচবে কাচালং
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬