নারীর গৃহস্থালি কাজের অর্থনৈতিক মূল্যায়ন

উম্মে সালমা

| শনিবার , ২২ জুন, ২০২৪ at ৬:০১ পূর্বাহ্ণ

বর্তমানে সারা বিশ্বে নারীর মজুরিবিহীন গৃহস্থালি কাজের অর্থনৈতিক মূল্যায়ন শুরু হয়েছে। এক্ষেত্রে যেসকল দেশ এগিয়ে রয়েছে তারমধ্যে ভারত, মেক্সিকো, আর্জেন্টিনা, নেপালসহ বেশকিছু দেশ অন্যতম। এদিকে বাংলাদেশে নারী ও পুরুষ উভয়ই মজুরিবিহীন কাজে নিয়োজিত থাকলেও একাজ সবচেয়ে বেশি করছেন নারীরা। এসব কাজ হিসাবে আনা হলে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) বাড়ত প্রায় ৪৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ। মজুরিবিহীন কাজে পুরুষের অংশগ্রহণ মাত্র ৯ শতাংশ হলেও নারীর অবদান ৩৯ দশমিক ৫২ শতাংশ। দেশে একাজে নিয়োজিত ৩১ শতাংশ মানুষ। এর মধ্যে পুরুষের সংখ্যা মাত্র ১০ শতাংশ।

এ প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞরা জানান, কর্মজীবী একজন নারী দিনে গড়ে তিন ঘণ্টার বেশি ঘরে কাজ করেন। পুরুষকে করতে হয় দেড় ঘণ্টার কম। অন্যদিকে বাইরে কাজ করেন না এমন নারী প্রায় ছয় ঘণ্টা গৃহস্থালির কাজ করেন। আর পুরুষ করেন দুই ঘণ্টারও কম। তাই নারীর ক্ষমতায়নে নারীবান্ধব অবকাঠামোগত বরাদ্দ বৃদ্ধি, সামাজিক নিরাপত্তা, জনসেবা ও ঘরের ভেতরের কাজ বা দায়িত্ব ভাগ করে দেয়া উচিত।

পাশপাশি নারীর কাজের অর্থমূল্য নির্ধারণ এবং মর্যাদা বৃদ্ধি করা হলে তাদের প্রতি সহিংসতা কমবে। দেশের অর্থনীতিতে নারী গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখলেও, তা সচরাচর আলোচনায় আসে না। তারা ঘরেবাইরে এমন অনেক কাজ করেন, যার কোনো স্বীকৃতি নেই। অর্থনৈতিকভাবে কোনো মূল্যায়নও নেই। শুধু গৃহস্থালি নয়, নারীর উৎপাদনমুখী কাজও অনেক ক্ষেত্রে হিসাবে আসে না। অর্থমূল্যে মজুরি পরিশোধ করা হয় নাএমন কাজ মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) হিসাবে আনা হলে অথবা অর্থনৈতিক মূল্য নির্ধারণ করলে তাদের সামাজিক স্বীকৃতি বাড়বে, যা নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সহায়ক হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

আশার কথা হলো, চলতি অর্থবছর থেকে নারীদের গৃহস্থালি কাজ জিডিপি হিসাবে যোগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে শিঘ্রই এ সংক্রান্ত একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা হবে বলে আমরা জানতে পেরেছি। বিশেষজ্ঞদের মতে, স্যাটেলাইট একাউন্ট পদ্ধতিতে একটি হিসাব করে নারীর কাজ মূল্যায়ন করা সম্ভব। নারীরা বাসার কাজে যে সময় দিচ্ছেন, তা বাইরে করলে কত টাকা পেতেন, এটার হিসাব করে জিডিপির মূল হিসাবের পাশাপাশি এই হিসাব করা যায়। এটা এক ধরনের ছায়া মূল্যায়ন। স্যাটেলাইট একাউন্টের মাধ্যমে সরকারি নীতি ও সিদ্ধান্ত গ্রহণকালে লিঙ্গ সমতা, পরিবারের আয়ব্যয়, সার্বিক দায়িত্বপালনের মতো বিষয়গুলোকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়।

যদিও নারীর কাজকে বিবেচনায় নেওয়ার ক্ষেত্রে বর্তমানে যে মানসিকতা বিদ্যমান, তাতে এমুহূর্তে খুব বেশি কিছু আশা করা যায় না। বাংলাদেশের বাস্তবতায় খুব কম নারীই আছেন, যারা বাইরে অফিসকাছারি বা কাজ করে ঘরে ফিরে আর গৃহস্থালি কাজে হাত দেন না, শতকরা শতভাগ নারীই করেন বলেই মনে করি। সুতরাং তাদের মর্যাদার আসনে আনতে চাইলে পরিশোধিতঅপরিশোধিত সব ধরনের কাজকে মূল্যায়ন করতে হবে। কিন্তু যে জায়গাগুলো নিয়ে আমরা কথা বলি, সেখানে আসলে সত্যিকার অর্থে যাদের কথাগুলো শোনা উচিত, তারা শোনেন না। একটি পরিবার থেকে যে শিক্ষাটা শুরু হয়, সেটি মানবজীবনে দারুণ প্রভাব ফেলে। কিন্তু দেখা যায় আমাদের দেশে একটি মেয়েকে পরিবার থেকেই বৈষম্যের শিকার হতে হয়। ছেলেদের কেন্দ্র করে পরিবারের কর্তাব্যক্তিরা যেসব দৃষ্টিকোণ থেকে ভাবেন, মেয়েদের নিয়ে সেভাবে ভাবা হয় না। ছেলের ক্ষেত্রে অনেক স্বপ্ন, অনেক ইচ্ছে থাকতে পারলে মেয়ের ক্ষেত্রে তা হবে না কেনএ বিষয়ে তাই আমাদের মানসিক পরিবর্তন জরুরি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধভারতীয় সহকারী হাইকমিশনের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক যোগ দিবস উদযাপন
পরবর্তী নিবন্ধশৃঙ্খলা শৃঙ্খলিত করে না