নারীবান্ধব সমাজ প্রতিষ্ঠায় কাজ করতে হবে

| মঙ্গলবার , ৮ মার্চ, ২০২২ at ৭:৫০ পূর্বাহ্ণ

সমাজবিজ্ঞানীরা বলেন, তীব্র ইচ্ছা শক্তি থাকলে মানুষ যে কোনো অবস্থান থেকেও লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যেতে চেষ্টা করে এবং সফলও হতে পারে। সফলতার কোনো নির্দিষ্ট মাপ কাঠি নেই। নিজের অবস্থান থেকে সামনে এগিয়ে যাওয়াই হল সফলতার দিকে এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া। চারপাশে অনেক সফল নারীকেই দেখি যাদের সফলতা আমাদের কাছে বেশ স্বাভাবিক মনে হতে পারে। আবার এদেরকে দেখে আমরা উৎসাহিত হই। তবে অধিকাংশ নারীর এগিয়ে যাওয়ার পেছনের গল্পটা সহজ নয়। যারা বুকে স্বপ্নকে লালন করেছেন ও প্রতিকূল অবস্থাকে মোকাবেলা করেছেন তারাই ধীরে ধীরে এগিয়ে গেছেন সামনের দিকে।
আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। এ দিবস উপলক্ষে নানা কর্মসূচি পালিত হবে। নারীর অধিকার আদায় ও প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে যারা আছেন, তাদের কার্যক্রম পর্যালোচনা হবে। নারীর ক্ষমতায়ন ও সার্বিক উন্নয়নে সরকারের প্রশংসাযোগ্য পরিকল্পনার বিশ্লেষণ হবে। তবু এটুকু বলা যায়, নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও নারী এগিয়ে যাচ্ছে। নারীর কাজের মূল্যায়ন কেবল একদিন নয়, বছরের প্রতিদিন করা দরকার। প্রতিদিনই হোক নারীর জন্য শুভময়।
বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির সাবেক নির্বাহী প্রধান মানবাধিকার আইনজীবী সালমা আলী তাঁর এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, নারীর এগিয়ে যাওয়া সত্যিই ঈর্ষণীয়। নারী উন্নয়নে নীতিমালা হয়েছে ২০১০ সালে। নারী পাচাররোধে আইন হয়েছে। নারীর অধিকারে সরকার কাজ করছে। মানুষও এখন অনেক সচেতন। নারী ঘর থেকে বের হচ্ছেন, এটিই বড় আশার কথা। নারীরা তালাক দেয়ার ক্ষমতা রাখছেন। নারী নিজে থেকে তালাক দিয়ে দেনমোহরের অর্থ দাবি করতে পারছেন। স্বামী ছাড়াও নারী অনেক পরিবারে কর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
তবে হ্যাঁ এর বিপরীতে নির্যাতনের ভয়াবহতার গল্পও আছে। সভ্যতার উন্নয়নে নির্যাতনের মাত্রাও বদলে গেছে। প্রযুক্তির কারণে নারী প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হচ্ছেন। পর্নোগ্রাফির শিকার হচ্ছেন। বর্বরতাও বেড়ে গেছে। যখন যেটার প্রয়োজন সরকার সেটা তখন করে না। প্রযুক্তির নিয়ন্ত্রণ শুরু থেকে করতে পারলে এত নির্যাতন হতো না। আমরা সরকারের সঙ্গে থেকে কাজ করতে চাই। চাপে রেখেও কাজ করতে চাই।
সমাজ বিশ্লেষকরা বলেন, জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের পাশাপাশি দিনে দিনে মানবসমাজে নতুন অপরাধের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। যার অন্যতম উদাহরণ ‘নারীর প্রতি সহিংসতা’ বা নারী নির্যাতন। বর্তমানে ধর্ষণ ও পারিবারিক নির্যাতন ভয়ংকর অবস্থায় পৌঁছে গেছে। বিশেষ করে নারী নির্যাতনের মতো ঘটনা ইদানীং ব্যাপক আকারে বেড়েছে। এ নিয়ে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি ও কঠোর প্রতিরোধ গড়ে তুলতে না পারলে এর কোনো প্রতিকার হবে না।
সমাজে নারীদের প্রতিনিয়ত শারীরিক ও মানসিকভাবে অপদস্ত হতে হচ্ছে। প্রাচীন আমলের বিভিন্ন সামাজিকপ্রথা, কুসংস্কার এমনকি লোকলজ্জার ভয় কাটিয়ে নারী এখন পুরুষের পাশাপাশি পথ চলতে শুরু করেছে। কিন্তু এসময়ে এসেও পথেঘাটে, বাস-ট্রেনে এমনকি বাসা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা কর্মস্থলেও নারীরা ব্যাপকহারে নির্যাতিত হচ্ছে।
যৌতুক, বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ, ধর্ষণ, হত্যাসহ এমন নারী সহিংসতার ঘটনা নিত্যদিনের। নারীরা রাজনৈতিক সহিংসতারও শিকার হচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে পরিবারেই তারা সহিংসতার মুখোমুখি হয়। নারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা যেন স্বাভাবিক ঘটনা।
বছরের পর বছর নারীর প্রতি নির্যাতন প্রতিরোধ নিয়ে আন্দোলন করেও এর সমাধান মিলছে না। অতীতে মানুষের মধ্যে এত সচেতনতা ছিল না। তখন নারী নির্যাতন যে একটা অপরাধ সেটা হয়ত অনেকে জানত না। এখন সময় পাল্টাচ্ছে। শিক্ষা-দীক্ষায় এগিয়েছে মানুষ। সচেতনতা সৃষ্টি হচ্ছে সব ক্ষেত্রে। কিন্তু নারী নির্যাতনের মতো একটি মারাত্মক স্পর্শকাতর বিষয়ে তেমন সচেতনতা সৃষ্টি হয়নি।
আইনজীবী সালমা আলীর মতে, বিচার ব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রতা, গণতন্ত্রের অভাব, পুলিশ প্রশাসনের দুর্নীতির কারণেই নারীর ওপর নির্যাতন কমছে না বলে বিশ্বাস করি। মানুষের ভোটের অধিকার নেই বলেও অন্য অধিকার খর্ব হচ্ছে। জাতীয় সংসদের প্রতিনিধিরা জনগণের কাছে আর জবাবদিহি করেন না। কারণ, তিনি মনে করেন জনগণের ভোট ছাড়াই সংসদ সদস্য হয়েছেন। সংসদ সদস্যদের মধ্যে যখন জবাবদিহিতা থাকে না, তখন সমাজের সব জায়গাতেই পচন ধরে। আমরা বিচার বিভাগ, প্রশাসন, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় এখন তাই দেখতে পাচ্ছি। এ কারণেই টেকসই গণতন্ত্র এবং জবাবদিহিতার বিকল্প নেই। আর এটি হলেই নারীবান্ধব সমাজ প্রতিষ্ঠা পাবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে