এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের মাঠ জুড়ে মেয়েদের বিশাল দল। চলছে নানা শারীরিক কসরত। একজন আরেকজনের বুকে লাথি মারছে। আবার অন্যজন রুখার চেষ্টা করছে প্রতিপক্ষের আক্রমণ। মূলত পুরুষদের আক্রমণ থেকে কিভাবে নিজেকে রক্ষা করা যায় সেটাই শেখানো হচ্ছে নারীদের। সাম্প্রতিক সময়ে ধর্ষণের প্রবণতা ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাওয়ায় নারীদের কিভাবে সহিংসতা থেকে রক্ষা করা যায় সে রাস্তা বাতলে দিতেই ইনস্পায়ার চট্টগ্রাম আয়োজন করে নারীদের নিয়ে এই ব্যতিক্রমী ট্রেনিং। চট্টগ্রামের নারীদের সাহসী করে তোলার প্রচেষ্টার সে পালে হাওয়া দিতে উপস্থিত ছিলেন চিত্রনায়ক ফেরদৌস। নারীদের সুরক্ষায় বজ্র কঠোর হওয়ার আহবান জানালেন এই অভিনেতা।
নারীদের সুরক্ষার দায়িত্ব নারীদেরকেই নিতে হবে বললেন ফেরদৌস। নারীদের এই প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধন করতে গিয়ে ফেরদৌস বলেন, চট্টগ্রাম আমার খুব প্রিয় শহর। চট্টগ্রামের যে কোন কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে পারলে খুব ভালো লাগে। বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর শহর চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার এই এলাকাগুলো। এই এলাকার মানুষ খুব ভালো এবং ভীষণ বন্ধুবৎসল। আর সে কারণেই আমাকে যখনই যেকোন আয়োজনে ডাকলে চলে আসি। কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী মেয়েদের উদ্দেশ্যে ফেরদৌস বলেন, আত্মরক্ষার কৌশল শেখানোর এ ধরনের কর্মশালা আমাদের শারীরিক সুস্থতার জন্যও দরকার। এ কর্মশালা নারীদের মনোবল যেমন বাড়াবে তেমনি কর্মস্পৃহা বাড়িয়ে দেবে। পাশাপাশি শরীরকেও সুস্থ রাখবে। তিনি বলেন, আমার উপস্থিতি যদি তোমাদের অনুপ্রাণিত করে তাহলে তোমরা এই কর্মশালায় অংশ নেবে।
সামপ্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া ধর্ষণের ঘটনা প্রসঙ্গে চিত্রনায়ক ফেরদৌস বলেন, এসব ঘটনা আমাদেরকে বেদনাহত করে। আমাদেরকে পীড়া দেয়। পুরুষ নামধারী বিকৃত মস্তিষ্কের কিছু মানুষ এসব ঘটনায় যুক্ত। যাদেরকে কখনো সুস্থ মনে হয় না। তারা নানান সময়ে নানান জায়গায় নারীদেরকে অপমানিত করে। আর সে বিষয়গুলো ভাবতে একজন পুরুষ হিসেবে সত্যিই লজ্জা লাগে। কর্মশালা প্রসঙ্গে ফেরদৌস বলেন, এই ধরনের কর্মশালার মাধ্যমে নারী যে তার দৈহিক শক্তি দিয়ে সবকিছুকে প্রতিহত করবে তা কিন্তু নয়। তবে এটা মেয়েদেরকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে। একজন মানুষের কাছে যদি আত্মবিশ্বাসটা অটুট থাকে, জোরালো থাকে, তবে সে যে কোন পরিস্থিতিতে নিজেকে সামলে নিতে পারবে।
তিনি বলেন, ছোটবেলায় আমরা মায়ের চোখ রাঙানি দেখলে এক সাথে সব ভাই-বোনেরা পড়তে বসতাম। মা কিন্তু অনেক বেশী শক্তিশালী ছিল না। তবে মায়ের সেই চোখ রাঙানি এবং মনের জোর একজন সন্তানকে মানুষে পরিণত করার জন্য যথেষ্ট ছিল। আজকের দিনেও নারীদের ঠিক সেরকম আত্মবিশ্বাসী হতে হবে।
ইনস্পায়ার চট্টগ্রাম এর চেয়ারম্যান সাজ্জাত হোসেনের সভাপতিত্বে কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম চৌধুরী। বক্তব্য রাখেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ক্রীড়া সম্পাদক দিদারুল আলম চৌধুরী, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির প্রাক্তন সভাপতি শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, নগর মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হাসিনা মহিউদ্দিন, প্রাক্তন কমিশনার এডভোকেট রেহানা বেগম রানু, চিকিৎসক নেতা ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের প্রাক্তন নেতা মাহমুদ সালাউদ্দিন চৌধুরী, বিএসআরএম এর সিএসআর প্রধান তারিকুল কবির ।
এছাড়া অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজনীন সরওয়ার কাবেরী, কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন, প্রাক্তন ছাত্রনেতা আবুল হাসনাত বেলাল, ফখরুদ্দিন বাবলুসহ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সংগঠনের পরিচালক জাওইদ চৌধুরী ও এম শাহাদাৎ নবী খোকা। চট্টগ্রামের প্রথমবারের মতো আয়োজিত নারীদের এই কর্মশালায় ৪১৭ জন নারী অংশ নিচ্ছে। আগামী তিনমাস চলবে এই কর্মশালা।