কক্সবাজারে বাসায় ঢুকে এক নারীকে পিস্তল ঠেকিয়ে তিন লাখ টাকা ছিনতাই করা হয়েছে। এ ঘটনায় এক এসআইসহ তিন পুলিশ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অভিযুক্ত তিন পুলিশ সদস্যকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছে বলে জানান পুলিশ সুপার। গ্রেপ্তার পুলিশ সদস্যরা হলেন উপপরিদর্শক (এসআই) নুর-ই খোদা ছিদ্দিকী, কনস্টেবল আমিনুল মমিন ও মামুন মোল্লা। তিনজনই কক্সবাজার শহর পুলিশ ফাঁড়িতে কর্মরত ছিলেন।
সূত্র জানায়, গত ১ মার্চ বিকালে কক্সবাজার পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যম কুতুবদিয়াপাড়ার রিয়াজ আহমদের স্ত্রী রোজিনা খাতুন গ্যাসের দোকান করার জন্য তার আত্মীয়স্বজন থেকে তিন লাখ টাকা সংগ্রহ করে বাড়ি ফেরেন। কিন্তু বিকাল ৪টার দিকে সিএনজিচালিত টেক্সিতে ৫/৬ জন সাদা পোশাক পরা লোক তার বসতবাড়িতে গিয়ে তাকে ইয়াবা ব্যবসায়ী আখ্যা দিয়ে টাকা দাবি করেন। রোজিনা টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তার মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে বেধড়ক মারধর করেন। এক পর্যায়ে রোজিনা তার কাছে থাকা তিন লাখ টাকা সাদা পোশাকধারী পুলিশের হাতে তুলে দেন। পুলিশ সদস্যরা চলে যাওয়ার সময় রোজিনার চিৎকারে স্থানীয়রা ছুটে গিয়ে টেক্সি থেকে একজনকে ধরে ফেলে। পরে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে কক্সবাজার সদর মডেল থানা পুলিশকে বিষয়টি জানায়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে আটক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে থানা হেফাজতে নিয়ে যায়।
কক্সবাজার জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিষয়টি অবগত হয়ে তদন্তে নামেন। ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ার পর সোমবার রাতে অভিযুক্ত ৩ পুলিশ সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট অন্যদের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনে মামলা নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এ ঘটনা নিয়ে এসপি হাসানুজ্জামান গভীর রাত পর্যন্ত কক্সবাজার সদর থানায় অবস্থান নেন বলে সূত্র জানায়। পরে ৩ পুলিশ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে গতকাল দুপুরে আদালতে সোপর্দ করা হলে আদালত তাদের জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান বলেন, একজন নারী তার নিকট থেকে টাকা ছিনতাইয়ের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করেছেন। এটি ফৌজদারি অপরাধ। অভিযোগের ভিত্তিতে থানায় মামলা রেকর্ড করা হয়। তিনি বলেন, অপরাধ করে কারো পার পেয়ে যাওয়ার সুযোগ নাই। সে পুলিশ বা অন্য কেউ হোক না কেন।
তিনি জানান, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের পর মামলার ভিত্তিতে গ্রেপ্তার তিন পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়া তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
রোজিনা খাতুনের স্বামী রিয়াজ আহমেদ জানান, কক্সবাজারের সদর উপজেলার খুরুশকুল ইউনিয়নে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পে গ্যাসের দোকান করার জন্য আমার স্ত্রী এই টাকাগুলো তার আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে সংগ্রহ করেন। পরে বাড়ি ফিরলে সিএনজিতে করে ৫/৬ জনের একটি দল বাসায় এসে তাকে মারধর করে পিস্তল ঠেকিয়ে টাকাগুলো ছিনিয়ে নেয়।
প্রসঙ্গত, গত বছর মেরিন ড্রাইভ রোডে পুলিশের গুলিতে মেজর (অব.) সিনহা নিহত হওয়ার পর কক্সবাজার পুলিশে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়। জেলার সকল পুলিশ সদস্যকে তখন বদলি করে নতুন পুলিশ সদস্য নিয়োগ করা হয়েছিল।