সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশের কার কত অর্থ আছে, নাম-পরিচয় ছাড়াই সে বিষয়ে প্রতিবেদন দেওয়ায় বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধানকে তলব করেছে হাই কোর্ট। বিএফআইইউ’র প্রধান মাসুদ বিশ্বাসকে বুধবার (আজ) বেলা ১১টায় আদালতে হাজির হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাই কোর্ট বেঞ্চ গতকাল মঙ্গলবার এ আদেশ দেয়। খবর বিডিনিউজের। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক। দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান। শুনানির এক পর্যায়ে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার বলেন, নাম পরিচয় ছাড়া এভাবে প্রতিবেদন দেওয়া যেন ধরি মাছ না ছুই পানির মত একটা বিষয়। নাম পদবি দিয়ে প্রতিবেদন জমা দিতে এত ভয় কীসের?
গত ১০ আগস্ট রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নে সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নাথালি শুয়া বলেন, সুইস ব্যাংকে অর্থ জমা করা বাংলাদেশিদের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য সরকার তাদের কাছে চায়নি। তিনি বলেন, এসব বিষয়ে (তথ্য পাওয়ার বিষয়ে) কীভাবে একটি চুক্তিতে পৌঁছানো যায়, সে বিষয়ে সরকারকে সব ধরনের তথ্য আমরা দিয়েছি। কিন্তু আলাদাভাবে অর্থ জমা করার বিষয়ে কোনো অনুরোধ আসেনি। ওই খবর নজরে এলে ১১ আগস্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে সরকার ও দুদকের ব্যাখ্যা চেয়েছিল আদালত। সে ব্যাখ্যায় গত ১৪ আগস্ট রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বিএফআইইউ’র একটি প্রতিবেদন আদালতে তুলে ধরেন। একই সাথে দুদকের আইনজীবীও আরেকটি প্রতিবেদন দাখিল করেন।
রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদকের বক্তব্য শুনে ওই দিন আদালত বলে, রাষ্ট্রদূত যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা সরকার ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বক্তব্যের সাথে সাংঘর্ষিক। এরপর আদালত ওই প্রতিবেদন এবং বক্তব্য হলফনামা আকারে দাখিলের নির্দেশ দিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু ওই প্রতিবেদন তৈরির ক্ষেত্রে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করায় মঙ্গলবার শুনানির সময় বিএফআইউউ প্রধানকে তলব করা হল। সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের (এসএনবি) বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সাল শেষে সেখানকার ব্যাংকে বাংলাদেশি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে থাকা অর্থের পরিমাণ ছিল ৮৭ কোটি ১১ লাখ সুইস ফ্রাঙ্ক, যা আগের বছরের চেয়ে ৫৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ বেশি। বাংলাদেশি মুদ্রায় ওই অর্থের পরিমাণ প্রায় ৮ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।
বিশ্বজুড়ে ধনী ব্যক্তিদের টাকা সুইস ব্যাংকে রাখার আগ্রহের পেছনে মূল কারণ দেশটির গোপনীয়তার নীতি। সুইজারল্যান্ডের আইনে ব্যাংকগুলো তাদের গ্রাহকদের তথ্য প্রকাশ করতে বাধ্য নয়। টাকার উৎসও তারা জানতে চায় না। তবে কোন দেশের গ্রাহকদের কী পরিমাণ অর্থ সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে জমা আছে, তার একটি ধারণা প্রতিবছর সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের (এসএনবি) বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে পাওয়া যায়। দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদের বাধ্যবাধকতা মেনে এসএনবি ওই তথ্য প্রকাশ করে। তবে সেখানে গ্রাহকের বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায় না।
দেশে দুর্নীতি প্রতিরোধ ও সুশাসন নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলোর ভাষ্য হল, সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের যে টাকা জমা রয়েছে, তার বেশিরভাগটাই অবৈধভাবে অর্জিত এবং বিদেশে পাচার করা হয়েছে। সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশের কতজনের কত টাকা আছে তার তালিকা ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতেও এক আদেশে সরকারের কাছে জানতে চেয়েছিল হাই কোর্ট। পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে সরকার কী পদক্ষেপ নিয়েছে তাও জানতে চাওয়া হয়েছিল সে সময়।