সীতাকুণ্ডে বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় নলকূপে পানি উঠছে না। এতে ব্যক্তিগত তিন হাজার নলকূপের পাশাপাশি অকেজো হয়ে পড়েছে সরকারিভাবে স্থাপিত সাত হাজার নলকূপ। আর পানির সংকটে ভুগান্তিতে দিনযাপন করছেন উপজেলার লাখো মানুষ। একদিকে নলকূপে পানি না উঠা, অন্যদিকে পানিতে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক ও আয়রন থাকায় প্রতিনিয়ত স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছেন সীতাকুণ্ডের লোকজন। এছাড়া উপজেলার উপকূলীয় এলাকাগুলোতে পানির সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। এসব এলাকার বাসিন্দারা বাধ্য হয়ে পান করছেন পুকুর ও খালের পানি।
উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা গেছে, কুমিরা, বাঁশবাড়িয়া, মুরাদপুর, বাড়বকুণ্ড, সৈয়দপুর ও সীতাকুণ্ড পৌরসভা এলাকায় সারাবছরই খাওয়ার পানির তীব্র সংকট থাকে। পানির চাহিদা মেটানোর জন্য পর্যাপ্ত নলকূপ নেই। ২৫টির মত পাতকুয়া থাকলেও সেখানেও পানি থাকে না। শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় সংকট তীব্র রূপ ধারণ করে। এছাড়া উপকূলীয় এলাকার ৩২টি জেলে পল্লী, ৭টি আদিবাসী এলাকা, বাড়বকুণ্ড ও দারোগারহাট আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধিবাসীদের সারাবছরই পানির সমস্যায় পড়তে হয়।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সীতাকুণ্ড উপজেলায় ব্যক্তিগত নলকূপের পাশাপাশি সরকারিভাবে দশ হাজার নলকূপ রয়েছে। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় অধিকাংশ নলকূপ অকেজো রয়েছে। চোরেরা নলকূপের উপরের অংশ খুলে নিয়ে যাওয়ার কারণে বেশিরভাগ নলকূপের কোনো চিহ্ন নেই। মাঝে মধ্যে জনস্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা নলকূপ সচল করলেও মেরামতের কিছুদিন পর তা পুনরায় অচল হয়ে পড়ে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, হোটেল–রোস্তোঁরাগুলোতে খাল ও পুকুরের দূষিত পানি ব্যবহার করছে। বাড়বকুণ্ডের ভায়েরখীল আশ্রয়ণ প্রকল্পের আবদুল কাদের বলেন, প্রকল্পের একমাত্র নলকূপটি অকেজো হওয়ায় কারণে বাসিন্দাদের প্রায় দেড় মাইল দূরে গিয়ে একটি পুকুর থেকে পানি আনতে হতো।
কিন্তু মাছ ধরার নামে বিষ প্রয়োগ করে পুকুরের পানি দূষিত করায় সেই পুকুরের পানিও ব্যবহারের অনুপোযোগী হয়ে গেছে। উপজেলার পূর্ব সৈয়দপুর জেলে পাড়ার মোহনলাল জলদাস বলেন, তীব্র খরায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় জেলে পাড়ার অধিকাংশ নলকূপে পানি উঠছে না। তীব্র খরায় পুকুরের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় বর্তমানে গোসলের পানিরও সংকটে পড়তে হচ্ছে। এতে অনেকটা বাধ্য হয়ে আমাদের ময়লা–আবর্জনা ভরা পুকুরের পানি ব্যবহার করতে হচ্ছে। যার ফলে এখানকার লোকজন প্রতিনিয়ত পেটের পীড়াসহ চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
কুমিরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোরশেদ হোসেন চৌধুরী জানান, তীব্র তাপদাহে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় আমার এলাকার অধিকাংশ নলকূপ অকেজো হয়ে রয়েছে। বিশুদ্ধ পানির সংকটে আমার এলাকার জেলে পল্লীর বাসিন্দারা পাশের খালের পানি পান করছে। যার ফলে প্রতিটি ঘরের লোকজন পানিবাহিত রোগে ভুগছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নূর উদ্দিন রাশেদ বলেন, উপকূলীয় এলাকার মানুষ পুকুর ও খালের পানি পান করে সারা বছরই পেটের পীড়ায় ভুগতে থাকে। দেখা যায়, হাসপাতালের আসা অধিকাংশ রোগী পানিবাহিত রোগ ডায়রিয়া ও আমাশয়সহ নানান পেটের পীড়ায় আক্রান্ত।
উপজেলা জনস্বাস্থ্যে অধিদপ্তরের উপ–সহকারী প্রকৌশলী রাশেদুল ইসলাম বলেন, শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার কারণে উপজেলার সরকারি সাত হাজার টিউবওয়েলের পাশাপাশি ব্যক্তিগত তিন হাজার টিউবওয়েল অকেজো হয়ে পড়েছে। পাহাড়ের পাদদেশে ১৫০ ফুট থেকে ১৮০ ফুট পর্যন্ত পাইপ দিয়ে নলকূপ বসানো হলেও শুষ্ক মৌসুমে পানি ওঠে না। অকেজো নলকূপগুলো সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।