নাব্য সংকট, নির্মাণাধীন নতুন জেটিতে আশা

মহেশখালী ফেরিঘাট

ফরিদুল আলম দেওয়ান, মহেশখালী | শনিবার , ২৫ জানুয়ারি, ২০২৫ at ৮:৩৮ পূর্বাহ্ণ

মহেশখালী ফেরিঘাটে পলি মাটি জমে ভরাট হওয়ার কারণে নৌযান চলাচলে দিন দিন বাড়ছে ভোগান্তি। আর এ ভোগান্তির শিকার মহেশখালী দ্বীপের পৌনে ৪ লাখ বাসিন্দা। এক বছর পূর্বে মহেশখালী চ্যানেলের উভয়প্রান্তে মহেশখালী জেটিঘাট সংলগ্ন খালে ড্রেজিং করা হলেও গত বছরের বন্যার কারণে উজান থেকে পাহাড়ি ঢলের সাথে নেমে আসা পলিতে পুনরায় ভরাট হয়ে গেছে খননকৃত এই চ্যানেল। এখন ভাটার সময় জোয়ারের পানি নেমে গেলে স্পিডবোট ও যাত্রীবাহী নৌকা আটকে যায়। ফলে যাত্রীদেরকে কাদা মাড়িয়ে জেটিতে উঠতে হচ্ছে।

এমন পরিস্থিতিতে যাত্রীরা আশার আলো দেখছেন মহেশখালীতে সাড়ে ৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন নতুন জেটি। এই জেটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলে মহেশখালী দ্বীপের মানুষের যাতায়াত সুবিধা বৃদ্ধি পাবে।

জানা যায়, মহেশখালীর দক্ষিণ প্রান্তে গোরকঘাটায় ১৯৮৮ সালে প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে ৫০০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ৩ দশমিক ৩ মিটার প্রস্থের একটি জেটি নির্মাণ করা হয়। ২০০০ সালে প্রায় এক কোটি টাকা ব্যয়ে জেটির পূর্ব পাশে আরও ১০০ মিটার সমপ্রসারণ করা হয়। তবু জেটির দুপাশে দিন দিন ভরাট হয়ে যাওয়ায় ভাটার সময় নৌযানে ওঠানামা করতে গিয়ে যাত্রীদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছিল। যাত্রীদের ওঠানামার সুবিধার্থে এক বছর আগে জেটিঘাটটি ড্রেজার দিয়ে খনন করা হয়। তবে কয়েক মাস না যেতেই জেটিঘাট সংলগ্ন এলাকা আবারও ভরাট হতে শুরু করে। এতে পাঁচ মাস ধরে যাত্রীদের আবারও ভাটার সময় ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।

বিআইডব্লিউটিএর কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী রেজা খন্দকার বলেন, প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে গত বছর মহেশখালী জেটিসংলগ্ন ৮০০ মিটার এবং কক্সবাজার ৬ নম্বর ঘাটসংলগ্ন বাঁকখালী চ্যানেলের ১ দশমিক ২৫ কিলোমিটার খাল খনন করা হয়েছিল। তবে এরপর বন্যার কারণে আবারও পলিমাটি জমে গেছে। এ বছর অন্তত চার কিলোমিটার এলাকা ড্রেজিং করতে হবে, যাতে তিন কোটি টাকা খরচ হবে। বর্তমানে নিজস্ব ড্রেজার দ্বারা খনন কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

এদিকে মহেশখালীর পুরাতন জেটি জরাজীর্ণ হয়ে যাওয়ায় পর্যটক ও যাত্রীদের সুবিধার্থে ২০২৩ সালের শুরুর দিকে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) মহেশখালীতে পুরাতন জেটির পাশাপাশি সমান্তরালভাবে নতুন করে আরও একটি জেটি নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। প্রায় ৩৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মানাধীন জেটির দৈর্ঘ্য ৭০০ মিটার ও প্রস্থ ৭ দশমিক ৩ মিটার। ৭০০ মিটারের জেটির মধ্যে ৩০০ মিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হবে। এর নির্মাণকাজ ২০২৩ সালের এপ্রিলে শুরু হয়েছে। চলতি বছরের জুনে কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

এলজিইডির মহেশখালী উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ বনি আমিন বলেন, নতুন জেটির নির্মাণকাজ শেষ হলে এই দ্বীপের বাসিন্দাদের নৌপথে যাতায়াতের ভোগান্তি আর থাকবে না। ইতিমধ্যে নতুন জেটির কাজ ৫০ শতাংশ শেষ হয়েছে। বাকি কাজও যথাসময়ে শেষ হবে।

মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. হেদায়েত উল্যাহ, বলেন, যাত্রীদের ভোগান্তি দূর করতে ভরাট হওয়া জেটিঘাটে খননকাজ দ্রুত শেষ করতে বিআইডব্লিউটিএকে বলা হয়েছে। নতুন জেটি নির্মাণের কাজও চলছে দ্রুত গতিতে।

মহেশখালী স্পিডবোট মালিক সমিতির সভাপতি আতা উল্লাহ বোখারী বলেন, শীত মৌসুমকে ঘিরে এখন মহেশখালীতে দেশিবিদেশি পর্যটকের আনাগোনা বেড়েছে। প্রতিদিন অন্তত পাঁচ হাজার মানুষ জেটিঘাট দিয়ে যাতায়াত করছেন। এর মধ্যে পর্যটক থাকেন পাঁচ শতাধিক। জেটিঘাট এলাকা ভরাট হয়ে যাওয়ায় যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়ছেন। চলমান ড্রেজিং সম্পন্ন হলে শীঘ্রই কেটে যাবে এই ভোগান্তি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপটিয়ায় গভীর রাতে আগুনে পুড়ল দুই দোকান
পরবর্তী নিবন্ধনড়বড়ে শাহপরীর দ্বীপ জেটি