‘পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত’–এর গুরুত্ব অপরিসীম। চট্টগ্রাম শহরের একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র এটি। ওপারে সুন্দর প্রকৃতি পরিবেষ্টিত মেরিন একাডেমি। কর্ণফুলী নদীর মোহনায় সৃষ্টি হয়েছে মায়ার এই পর্যটন কেন্দ্র। শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর ঘাঁটি বিএনএস ঈসা খান পতেঙ্গার একেবারে সন্নিকটে অবস্থিত। পতেঙ্গা সৈকতে যাওয়ার পথে নৌবাহিনীর গল্ফ ক্লাব ও পাশের বোট ক্লাব পর্যটকদের চাহিদা মেটায়। এছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরের অনেক জেটি এখানে অবস্থিত। এখানে বসে পর্যটকদের মিলনমেলা। ইতোমধ্যে এই সৈকত ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ফলে বিকেল নামার সঙ্গে সঙ্গে হাজার হাজার পর্যটক ভিড় জমায় এই সমুদ্র সৈকতে। সেই সৈকতকে রক্ষার জন্য একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে দৈনিক আজাদীর ১৬জুন সংখ্যায় প্রকাশিত খবরে জানা গেছে। এতে বলা হয়েছে, গত ঈদুল আজহার দিন পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে গিয়ে সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন দেখতে পান, সেখানে বেড়িবাঁধে মানুষের হাঁটা ও বসার জায়গায় অবৈধভাবে দোকানপাট বসানো হয়েছে। এরপর পতেঙ্গা বিচের সৌন্দর্য ফেরাতে উদ্যোগ নেন তিনি। এর প্রেক্ষিতে উচ্ছেদ করা হয় অবৈধ দোকানপাটগুলো। সর্বশেষ সিডিএ, জেলা প্রশাসন এবং পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এলাকার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে পার্কিং ফি কমানো এবং ইজারাদার কর্তৃক গাড়ির নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ এক গুচ্ছ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এছাড়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বেড়িবাঁধে জেলা প্রশাসনের ইজারা দেওয়া ৪৫টি দোকানকে রাজস্ব খাতে এনে এর আয় থেকে খরচ করা হবে বিচ ম্যানেজমেন্টে। বিশেষ করে সমুদ্র সৈকত এ স্থাপিত লাইটের বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ, বিচের সৌন্দর্য রক্ষায় পরিচ্ছন্ন কার্যক্রমে এ টাকা খরচ করা হবে। এছাড়া তদারকির জন্য নিয়োগ দেওয়া হবে ২৪ জন সেবক। তারা তিন শিফটে কাজ করবেন সেখানে।
মেয়র বলেন, সৈকতের আশপাশে দীর্ঘদিন ধরে গড়ে ওঠা অবৈধ দোকানগুলো জনসাধারণের চলাচলে বিঘ্ন ঘটাচ্ছিল। এসব দোকানে ভেজাল ও অস্বাস্থ্যকর খাবার বিক্রি হতো, যা দর্শনার্থীদের বিরূপ অভিজ্ঞতা দিচ্ছিল এবং সৈকতের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকেও ক্ষতিগ্রস্ত করছিল। এই অবৈধ দখলের কারণে পরিবার নিয়ে বেড়াতে আসা মানুষের জন্য জায়গাটি অনুপযোগী হয়ে উঠেছিল। বেড়িবাঁধ দখল করে যারা ব্যবসা করছিল তারা সৈকতের পরিবেশের ক্ষতি করছিল। এখন সৈকত উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও উন্মুক্তই থাকবে। কেউ বেআইনিভাবে দখল করার চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গত বছর মে মাসে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত ঘিরে মাস্টার প্ল্যান তৈরি করা এবং কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের আদলে সাজাতে একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছিল। জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে চট্টগ্রাম বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়। তৎকালীন জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের সভাপতিত্বে সভায় পতেঙ্গা ও পারকিসহ জেলার সকল সমুদ্র সৈকতের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা এবং পর্যটন উন্নয়ন ও সংশ্লিষ্ট কার্যাবলী সমন্বয় বিষয়ে বিশদ আলোচনা করা হয়েছে। সভায় বিস্তারিত আলোচনা শেষে ১৯টি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছিল। এরমধ্যে ছিল সৈকতে অবৈধ দখলদারদের সরিয়ে সৈকতে সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনা; সৈকতে সিসি ক্যামেরা স্থাপন, পর্যাপ্ত বাতি স্থাপন ও শৌচাগার নির্মাণ; এছাড়া নিয়মিত তদারকি করার জন্যেও ব্যবস্থা; একই সাথে খাবারের মূল্য তালিকা প্রদর্শন, নির্দিষ্ট মূল্য তালিকা, খাবারের মান নিয়ন্ত্রণের জন্য নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সহায়তায় খাবার দোকানিদের প্রশিক্ষণ প্রদান, সৈকত হতে ঘোড়াসহ সকল গাড়ি অপসারণ এবং সী সাইড হতে সকল দোকান কান্ট্রি সাইডে নির্দিষ্ট পরিমাপের করার ব্যবস্থা নেওয়া ইত্যাদি। এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও কতটুকু বাস্তবায়িত হয়েছে, নগরবাসী তা প্রত্যক্ষ করেছে।
আসলে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত জনগণের সম্পদ। সেটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সরকারের। সেখানে জনগণের প্রবেশাধিকার রুদ্ধ করা যাবে না। যার যার ব্যবসা সে করুক, আমাদের কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে করতে হবে এবং জনগণের স্বার্থ নষ্ট করা যাবে না। তবে সৈকতে যে ময়লা–আবর্জনার ছড়াছড়ি দেখা গেছে, তা যেন আর দেখা না যায়। বেশ কিছু দোকান উচ্ছেদ করা হলেও দখল থেকে নিস্তার মিলবে বলে মনে হয় না। নান্দনিক সৈকত এলাকা কখনো শ্রীহীন দেখতে চাই না। এরকম একটি পর্যটন কেন্দ্রের সৌন্দর্য যাতে কোনো ক্রমেই বিনষ্ট না হয়, তার দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের ব্যাপারে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়ার যে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে, তার বাস্তবায়ন না হলে এটির সৌন্দর্য রক্ষা করা সম্ভব হবে না। এজন্য সৈকতকে ঘিরে আরো বড়ো পরিকল্পনা গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন জরুরি।