নানা বাধা, থমকে আছে কয়েকটি র‌্যাম্পের কাজ

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ।। ডিসেম্বরে শেষ হচ্ছে প্রকল্পের মেয়াদ, সময় বাড়াতে আবেদন কয়েক মাসের মধ্যে কাজ শেষ করার চেষ্টা করছি : সিডিএ চেয়ারম্যান

হাসান আকবর | রবিবার , ৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ at ৪:৪৩ পূর্বাহ্ণ

নানা বাধায় নগরীর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কানেক্টিভিটি বাড়ানোর উদ্যোগ থমকে আছে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) ক্ষতিপূরণের তিন কোটির বেশি টাকা পরিশোধ করলেও ওয়াসার আরসিসি পিট না সরানোর ফলে এক্সপ্রেসওয়ের গুরুত্বপূর্ণ র‌্যাম্পের কাজ সম্পন্ন করতে পারছে না। বেশ কিছুদিন ধরে প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে রয়েছে। অপরদিকে ম্যানোলা হিলে পাহাড় কেটে তৈরি করা দোকানগুলোও মামলামোকর্দমায় আটকে থাকায় সিডিএর কাজ থমকে আছে। এতে করে কবে নাগাদ এক্সপ্রেসওয়ের জিইসি মোড়ের গুরুত্বপূর্ণ র‌্যাম্পটি চালু হবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। অপরদিকে রেলের জায়গা না পেয়ে দীর্ঘদিন ধরে আটকে থাকা আগ্রাবাদ র‌্যাম্পের প্রয়োজনীয় ভূমির সংস্থান হয়েছে। এখন রেলের পাওনা পরিশোধ করে দোকানপাট ভাঙার পর কাজ শুরু করতে হবে। এতে আরো কয়েক মাস সময় লাগতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আমবাগান র‌্যাম্পের প্রশস্ততা বাড়ানোর কাজও শুরু করা হবে। সবকিছু মিলে শহীদ ওয়াসিম আকরাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কানেক্টিভিটি পুরোদমে বাড়াতে আরো বেশ সময় লাগবে বলে সূত্র জানিয়েছে। সিডিএর দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, বন্দর নগরীর যান চলাচলে প্রত্যাশিত গতি আনার লক্ষ্যে ৪ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ওয়াসা মোড় থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত প্রায় ১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হয়। প্রকল্পটির পুরো অর্থায়ন করে সরকার। এর মধ্যে ৩ হাজার ৭শ কোটি টাকা সরকার অনুদান এবং ৫২৪ কোটি ঋণ হিসেবে প্রদান করে। ঋণের টাকা সিডিএ নির্ধারিত মেয়াদ শেষে সরকারকে পরিশোধ করার কথা রয়েছে। ঋণের এই টাকার সংস্থানের জন্য এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে থেকে টোল নেয়া হচ্ছে। কিন্তু যে পরিমাণ গাড়ি চলাচল করবে বলে শুরুতে প্রত্যাশা করা হয়েছিল বাস্তবে তা চলছে না। এতে করে ঋণ পরিশোধে সিডিএকে বেকায়দায় পড়তে হবে। এক্সপ্রেসওয়ের কানেক্টিভিটি বাড়ানো না যাওয়ায় মানুষ এটি ব্যবহার করতে পারছে না বলে মন্তব্য করে সিডিএর কর্মকর্তারা বলেছেন, ফলে এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ির সংখ্যা প্রত্যাশা অনুযায়ী চলছে না।

সূত্র বলেছে, কানেক্টিভিটি বাড়ানোর একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে র‌্যাম্প। শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে র‌্যাম্প নির্মাণ ঝুলে থাকায় এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করতে পারছে না নগরবাসী। বিশেষ করে আগ্রাবাদ ও জিইসি মোড়ের মতো শহরের গুরুত্বপূর্ণ অংশের বাসিন্দারা এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করতে হিমশিম খাচ্ছে। ষোলশহর দুই নম্বর গেট ঘুরে, মুরাদপুর বা লালখান বাজারে এসে র‌্যাম্পের নাগাল পাচ্ছে বিস্তৃত এলাকার মানুষ। তাও নামার র‌্যাম্পকে মাঝে দুই ভাগ করে ওঠানামার র‌্যাম্প বানানো হয়েছে। অপরদিকে আগ্রাবাদসহ সন্নিহিত এলাকার মানুষের পক্ষে র‌্যাম্প ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে না।

জিইসি মোড়ের র‌্যাম্প নির্মাণ ঝুলে আছে ওয়াসার পাইপলাইনের আরসিসি পিট (বড় ধরনের রেগুলেটর) না সরানোর কারণে। এই র‌্যাম্পের কাজ অনেকদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। পিট সরাতে সিডিএ ওয়াসাকে তিন কোটির বেশি টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়েছে। অথচ কাজটি না করায় সিডিএ র‌্যাম্প নির্মাণের কাজ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে। অপরদিকে ম্যানোলা হিলে পাহাড় কেটে নির্মাণ করা বেশ কিছু দোকানও র‌্যাম্প চালু করার ব্যাপারে হুমকি হয়ে রয়েছে। দোকানগুলো না সরিয়ে উল্টো মামলা করায় এই র‌্যাম্প কতদিনে চালু করা সম্ভব হবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। অথচ র‌্যাম্পটি চালু হলে জিইসি মোড়সহ সন্নিহিত এলাকার লাখো মানুষ এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করতে পারে।

অপরদিকে আগ্রাবাদ ডেবার পাড় থেকে পতেঙ্গামুখী র‌্যাম্প নির্মাণে রেলের কাছ থেকে প্রায় ২২ শতক জায়গার জন্য আবেদন করা হয় বছর দুয়েক আগে। রেলের কাছ থেকে জায়গাটি সময়মতো না পাওয়ায় সিডিএ কাজটি শুরু করতে পারেনি। ইতোমধ্যে রেলের কাছ থেকে জায়গাটির ব্যাপারে অনুমোদন পাওয়া গেছে। রেলওয়েকে প্রায় ১৩ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে। সিডিএ আজকালের মধ্যে এই টাকা পরিশোধ করে রেলের সাথে চুক্তি করবে। এরপর স্থানীয় দোকানসহ অবকাঠামোগুলো উচ্ছেদ করে র‌্যাম্প নির্মাণের কাজ শুরু করবে। এসব প্রক্রিয়া শেষ করতে মাস দুয়েক সময় লেগে যাবে। এরপর কাজ শুরু করে শেষ করতে বেশ সময় লাগবে।

রেলের কাছ থেকে জায়গা নিয়ে টাইগারপাসে আমবাগানমুখী র‌্যাম্পের নামার জায়গাটি আরো বিস্তৃত করবে সিডিএ। এটিকে নেভি কনভেনশনের কাছে নেয়া হবে। এজন্যও কয়েক মাস সময় লাগতে পারে।

প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হচ্ছে আর কয়েকদিন পরে। ডিসেম্বরে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ। ইতোমধ্যে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য আবেদন করা হয়েছে।

সিডিএর কর্মকর্তারা জানান, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে যে পরিমাণ গাড়ি চলাচলের আশা করা হয়েছিল তা না হওয়ার পেছনে একমাত্র কারণ হচ্ছে কানেক্টিভিটি। এক্সপ্রেসওয়ে যেভাবে নির্মিত হওয়ার কথা ছিল পরবর্তীতে সেভাবে নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠানামার জন্য ১৫টি র‌্যাম্প নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল সিডিএর। ২০১৭ সালে অনুমোদিত হওয়া এ প্রকল্প থেকে ইতোমধ্যে ছয়টি র‌্যাম্প বাদ দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠানামার জন্য র‌্যাম্পের সংখ্যা ৯টিতে আনা হয়েছে। এতে করে এক্সপ্রেসওয়ের কানেক্টিভিটি কমেছে। বর্তমানে যে ৯টি র‌্যাম্প নির্মিত হওয়ার কথা সেগুলো সময়মতো শেষ করতে না পারায় এক্সপ্রেসওয়ের কানেক্টিভিটি এখনো অনেক কম।

এ বিষয়ে সিডিএর চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মোহাম্মদ নুরুল করিম বলেন, আমরা মাস কয়েকের মধ্যে সব কাজ শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে চেষ্টা করছি। মামলা মোকর্দমার কারণে ম্যানোলা হিলের ওখানে কাজ বন্ধ হয়ে আছে। আমরা বিষয়টি দ্রুত সুরাহা করার চেষ্টা করছি। ওয়াসার সমস্যাটি অনেকটা জটিল। ওয়াসা টেন্ডার আহ্বান করেছে বলে শুনেছি। তারা টেন্ডার যাচাই বাছাই করে কার্যাদেশ দেবে। পরে ঠিকাদার কাজ করবে। এতে করে কিছুটা সময় লাগছে। র‌্যাম্পগুলো পুরোদমে চালু হলে কানেক্টিভিটি বেড়ে যাবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসন্দ্বীপ মুক্ত দিবস আজ
পরবর্তী নিবন্ধতিনবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হওয়া দলের কাছে দেশ কখনোই নিরাপদ নয়