নানারকম চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বেতারকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে

| রবিবার , ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৬:১৪ পূর্বাহ্ণ

আজ বিশ্ব বেতার দিবস। প্রতি বছরের মতোএবারও সারা বিশ্বে এ দিবস উদযাপিত হচ্ছে। চট্টগ্রাম বেতারসহ বেতারের বিভিন্ন কেন্দ্র এ উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করছে। বলা বাহুল্য, বেতার বর্তমান বিশ্বের যোগাযোগের নির্ভরযোগ্য সহজ সমাজ উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি, নীতি নিয়ম, দুর্যোগ দুর্বিপাক, শিক্ষা সংস্কৃতি, সংবাদ ও বিনোদনের বিশেষ বাহন হিসেবে কাজ করছে। তথ্য সরবরাহ এবং বিস্তৃতির গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে এটি বিবেচিত। এবারের বেতার দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় হলো ‘আমরা সবাই বেতার শুনি, বেতারেই আস্থা রাখি’। বেতার হলো তারবিহীন যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম।
সবচেয়ে প্রাচীন, সহজলভ্য ও একটি শক্তিশালী গণমাধ্যম হিসেবে বেতার পৃথিবীব্যাপী বহুল ব্যবহৃত একটি যন্ত্র। বেতারে তড়িৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গ ব্যবহার করে তথ্য প্রেরণ বা গ্রহণ করা হয়। ঊনবিংশ শতাব্দির শেষলগ্নে অনেক দেশের একাধিক বিজ্ঞানী প্রায় একই সময়ে বেতার আবিষ্কার করলেও ১৮৯৮ সালে ২৪ বছর বয়সে ইতালিয়ান তরুণ বিজ্ঞানী গুইলিইমো মার্কোনি বিশ্বে প্রথম রেডিও আবিষ্কার এবং তার বাণিজ্যিক সার্ভিস চালু করেন।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বেতার। চট্টগ্রামে প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র-যেখানে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে প্রথম স্বাধীনতার বাণী প্রচার করা হয়। মহান মুক্তিযুদ্ধকালীন মুক্তিযুদ্ধের দ্বিতীয় ফ্রন্ট নামে খ্যাত এই স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র ছিল বাঙালি জাতির মুক্তি সংগ্রামের এক বলিষ্ঠ প্রচার কাণ্ডারি। স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র থেকে প্রচারিত কালজয়ী কথিকা, সংবাদ, প্রবন্ধ, নাটিকা, রম্যরচনা, গান, সাক্ষাৎকার, ভাষণ ও নানা অনুষ্ঠান একদিকে মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবলকে শক্তিশালী সুদৃঢ় করেছে, অন্যদিকে দেশের জনগণকে স্বাধীনতার দিকে অনুপ্রাণিত উজ্জীবিত করেছে। আর রণাঙ্গনে মুক্তিযোদ্ধাদের সাফল্যের খবর শুনিয়ে সহজেই কেড়ে নেয় মুক্তিকামী মানুষের মন। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে সাহিত্য-সংস্কৃতির বিকাশে বেতারের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য।
অনেকেরই ধারণা আইসিটি বা ইন্টারনেটের অগ্রযাত্রার এ সময়ে বেতার তার গুরুত্ব হারিয়েছে। ধারণাটি সঠিক নয় মোটেই বরং ভুল প্রমাণিত। কারণ সময় যেমন বদলেছে, ঠিক তেমনই সময়ের সাথে তালমিলিয়ে প্রচারণার ধরনও বদলে গেছে। এখনও মানুষ বেতার শোনে। প্রবল প্রযুক্তি নির্ভর এই সমাজেও বেতার তার জনপ্রিয়তা এবং গ্রহণযোগ্যতা ধরে রেখে এগিয়ে চলছে। সহজলভ্যতা এবং বহনযোগ্যতার কারণেই বিশ্বব্যাপী বেতার সগৌরবে টিকে আছে এবং থাকবেও অনন্তকাল। প্রযুক্তির ক্রমবিকাশের সঙ্গে মিল রেখে ও জনগণের চাহিদার কথা বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশ বেতার তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারে পিছিয়ে আছে বলা যাবে না। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারে রেডিও কিনতে পাওয়া যায় না। সেটা প্রধান সমস্যা। বাংলাদেশ বেতারের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বেতারের ৮টি কেন্দ্র/ইউনিটের অনুষ্ঠান ও সংবাদ ১৬টি চ্যানেলে অনলাইন লাইভ স্ট্রিমিংসহ ফেসবুক ফ্যান পেজ, মোবাইলে বেতার অ্যাপসের ব্যবহার এবং বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে অনুষ্ঠান সমপ্রচার বাংলাদেশ বেতারে নতুন যুগের সূচনা করেছে। অন্যান্য কেন্দ্র ও ইউনিটগুলো ফেসবুক লাইভ/ভিডিও শেয়ারিং-এর মাধ্যমে তাদের জনপ্রিয় অনুষ্ঠানগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিয়মিত শেয়ার করছে।
কৃষিবিদ ডক্টর মো. জাহাঙ্গীর আলম তাঁর এক লেখায় বলেছেন, সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে এবং উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণে গণমানুষকে উদ্বুদ্ধ ও উৎসাহিত করতে বেতার শক্তিশালী হাতিয়ার ও মাধ্যম। এ ছাড়াও জরুরি প্রয়োজনে যোগাযোগ সম্পাদন করা এবং দুর্যোগের ঝুঁকি মোকাবিলায় বেতারের ভূমিকা অনন্য অসাধারণ। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে বর্তমান সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ ও নতুন তথ্য প্রযুক্তি বেতারকে আরও অমিত সম্ভাবনাময় করে তুলছে চলমান সময়ের প্রেক্ষাপটে।
দুঃসময়ে বেতারের ভূমিকা অনস্বীকার্য। সিডর, আইলা, নার্গিস, মহাসেন, রোয়ানুর মতো বিভিন্ন দুর্যোগের সময় কমিউনিটি বেতারের কর্মীবাহিনী দুর্যোগকালীন সময়ে বিরামহীন নিরবচ্ছিন্নভাবে তথ্য প্রদান করে দেশ ও জাতির সেবায় নিয়োজিত থেকেছে। তাছাড়া অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিনোদন ও তথ্যপ্রযুক্তি দিয়ে সাধারণ মানুষের আচরণগত পরিবর্তনেও বেতার তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে নিরবচ্ছিন্নভাবে গর্বের সাথে। যৌতুক, বাল্যবিবাহ, আত্মহত্যা, নারী নির্যাতন এসব অনেকাংশে কমেছে বেতারের উদ্বুদ্ধকরণ প্রোগ্রামের মাধ্যমে।
তবে সাম্প্রতিক মিডিয়ার নানারকম চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বেতারকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। বেতারের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সম্পৃক্ত করতে হবে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষকে। নানামুখী অনুষ্ঠান প্রচার করে অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে