নানকি, স্কুলের সবচেয়ে চঞ্চল ছেলে। সারাদিনে একটাও কাজ ঠিকমতো করার পরও, ক্লাসে গিয়ে একটিই কাজ করতো্তঘুমানো! সে নিজেও জানতো যে, সব শিক্ষক তাকে চিনে ফেলেছে। কিন্তু, তাতে কী? ঘুমাতেই তো ভালো!
একদিন, ক্লাসে স্যার বললেন, আজকে আমরা গণিতের নতুন টপিক শিখবো। সবাই প্রস্তুত?
নানকি মৃদু হাসি দিয়ে বলল, স্যার, আমি তো প্রস্তুত, শুধু ঘুমানোর জন্য!
স্যার চোখ বড় করে বললেন, নানকি, তুমিই একমাত্র ছেলে, যে ক্লাসে ঘুমানোর জন্য প্রস্তুতি নেয়!
সবাই হেসে ফেললো।
তবে নানকি কোনো কিছুতেই সাড়া না দিয়ে, একপাশে শুয়ে পড়লো। সবারই ভালো লাগছিলো না, কিন্তু সে আবার খাসা ঘুম দিচ্ছিলো।
স্যার বিরক্ত হয়ে বললেন, এবার তোমার পা–ও কি আমি মাপতে পারবো, নানকি?
নানকি ঘুমোতে ঘুমোতে বললো, হ্যাঁ স্যার, পা মাপুন, তবে আমি এখন একটা দারুণ স্বপ্ন দেখছি, আমাকে অন্তত তার জন্য একটু ঘুমাতে দিন!
এতক্ষণে স্যার হাসলেন, তারপর তিনি নানকির দিকে তাকিয়ে বললেন, ওহ, তুমি তো পুরো ‘ঘুমন্ত দার্শনিক’ হয়ে গেছো!
কিন্তু আজকের দিনটা একটু আলাদা। স্যার পুরো ক্লাসের সামনে নতুন একটা সমস্যার উদাহরণ দিলেন, যদি তোমাদের সামনে একটা বিশাল সাইজের পাইপ লিক করত, তাহলে কী হতো?
নানকি চোখ মেলে বলে, স্যার, আমি তো চুপ করে ঘুমিয়ে থাকতাম, পাইপে পানি থাকলেও আমার কোনো সমস্যা হতো না!
সবাই হেসে পড়লো।
স্যার বললেন, তুমি তো পুরো ঘুমিয়ে থাকা মাস্টার! তবে তোমার উত্তরটা ভুল!
নানকি বললো, স্যার, আমি জানি না, কিন্তু স্বপ্নে তো আমি পাইপে পানি বন্ধ করতে পারি!
এবার স্যার হেসে বললেন, এটা হলো সেরা মনোভাব! তুমি এমনভাবে ঘুমাও, যেন কোন কিছু তোমার সামনে আসে না!
এরপর স্যার মজা করে বললেন, নানকি, তোমার এত ঘুমোতে পছন্দ করার কারণে, তুমি একদিন রেকর্ড করতে পারবে, ‘স্কুলের সবচেয়ে বেশি ঘুমানো ছেলে’!
এ কথা শুনে পুরো ক্লাস হো হো করে হাসলো।
টিফিন টাইমে, নানকি তার বন্ধুদের সঙ্গে বসে ছিল। মিনু বলল, তুমি কেন স্যারদের এমন বিরক্ত করো? তোমার তো এখনো পরীক্ষা বাকি!
নানকি হেসে বলল, আমার তো মনে হয়, স্যারেরা যখন আমাকে ঘুমাতে দেয়, তখন আমার মস্তিষ্ক সবচেয়ে ভালো কাজ করে! কেউ জানে না, ঘুমাতে ঘুমাতে আমি কোনো সেরা আইডিয়া নিয়ে আসতে পারি!
পরের দিন, ক্লাসে স্যার এক নতুন পরীক্ষা নেয়ার ঘোষণা দিলেন। স্যারের চোখে একটু রহস্য, আজ আমরা পরীক্ষা নেবো, তবে যারা ঘুমোবে, তারা কিছু বোনাস পয়েন্ট পাবে!
নানকি অবাক হয়ে বলল, কী বললেন স্যার, ঘুমের জন্য পয়েন্ট?
স্যার হাসি চাপতে না পেরে বললেন, হ্যাঁ, নানকি, শুধু তোমার মতো ছেলেই ঘুমাতে ঘুমাতে পয়েন্ট পেতে পারে!
টিংকু আর রনি তখন বলল, নানকি, এবার তো তোমার জন্য সুযোগ! তুমি ঘুমিয়ে সেরা পয়েন্ট পাবে!
নানকি হাসতে হাসতে বলল, স্যারই বললেন, আমি তো ঠিকই জানি, ঘুমের মধ্যে আমি স্কুলের ‘ফার্স্ট’ হতে পারি!
এভাবেই, ক্লাসের সবাই নানকির গল্প শুনে হেসে ফেলল। কিন্তু নানকি জানতো, মাঝে মাঝে ঘুমানোও একটা গুণ হতে পারে। তবে একদিন, নানকি ক্লাসে ঘুমিয়ে ছিলো, স্যার তাকে একটু জিজ্ঞেস করলেন, নানকি, তুমি যদি আজ ঘুমাও, তো কি তুমি ‘ঘুমন্ত জিনিয়াস’ হয়ে যাবে?
নানকি চোখ মেলে বললো, স্যার, আমি যদি ঘুমাতে থাকি, তো আমার পিপঁড়া বা কিছু টুকরো গালগল্পও শুনতে পাবো, তখন তো আমি সেরা জিনিয়াস হতে পারি!
এবার স্যার আবার হাসতে হাসতে বললেন, তুমি বুদ্ধি পেলেও ঘুমিয়ে থাকো, এমনই তো তোমার স্টাইল!
নানকি হাসতে হাসতে বলল, স্যার, কিচ্ছু না, আমি তো ঘুমের মধ্যে সবচেয়ে বড় শিক্ষক!
সবাই আবার হেসে ফেলল, আর নানকি ভাবলো, হয়তো আমি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে সবাইকে হাসাতে পারি, কিন্তু একদিন সবকিছু শিখতে হবে!
এভাবেই, নানকি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্কুলে ছোটখাটো সমস্যা ঠিক করলো, কিন্তু একদিন সে ঠিক বুঝে ফেলল্ত ঘুমও ভালো, তবে একটু পড়াশোনা করতে হবে।