২০৫ রানের পুঁজি নিয়েও পারল না বাংলাদেশ। রেকর্ড রান তাড়ায় ২ উইকেটের জয়ে সিরিজে সমতা ফেরাল সংযুক্ত আরব আমিরাত। অনভিজ্ঞতার কারণে শেষ দিকে বারবার হোঁচট খেয়েও দৃঢ় পায়ে ছুটে গেল লক্ষ্যে। শেষ পর্যন্ত শেষ ওভারের চরম নাটকীয়তায় পৌঁছে গেল তারা অবিস্মরণীয় এক জয়ের ঠিকানায়। ৯ চার ও ৫ ছক্কায় ৪২ বলে ৮২ রানের ইনিংস খেলে আমিরাতের জয়ের নায়ক ওয়াসিম। টি–২০তে আগে কখনোই ১৭৯ রানের বেশি তাড়া করে জয় ছিল না আমিরাতের। বাংলাদেশের বিপক্ষে তাদের প্রথম জয় এটি। দুই ম্যাচের সিরিজটি তিন ম্যাচে রূপ নিয়ে এই ম্যাচের আগে। বুধবার শেষ ম্যাচেই হবে সিরিজর ফয়সালা। খবর বিডিনিউজের।
আমিরাতের জয়ের নায়ক ওয়াসিম হলেও শেষের নায়ক হায়দার আলি ও ধ্রুব পারাশার। হায়দারের ৬ বলে ১৫ ও ধ্রুবের ৭ বলে ১১ রানের ইনিংস দুটি ছিল মহামূল্য। শেষ কয়েক ওভারে পেন্ডুলামের মতো দুলতে থাকা ম্যাচ নাটকীয় মোড় নেয় শেষের আগের ওভারে। দুই ওভারে যখন প্রয়োজন ২৯ রান, প্রথম বলেই আলিশান শারাফুকে ফেরান শরিফুল ইসলাম। তখনও পর্যন্ত দারুণ বোলিং করা এই বাঁহাতি পেসার পরে খেই হারান। তৃতীয় বলে বাউন্ডারি মারেন ধ্রুব পারাশার, পঞ্চম বল ছক্কায় উড়িয়ে দেন হায়দার। শরিফুল গড়বড় করেন ওভারের শেষ বলেও। ওভার থ্রো করে দিয়ে বসেন ৫ রান!
শেষ ওভারে ১২ রানের সমীকরণে তানজিম হাসান শুরু করেন ওয়াইড দিয়ে। পরের বলে সিঙ্গল নেন হায়দার, এরপর ফুল টস পেয়ে বল গ্যালারিতে পাঠান ধ্রুব। চার বলে যখন প্রয়োজন চার, তানজিমের স্লোয়ার ডেলিভারিতে বোল্ড হয়ে যান ধ্রুব। পরের ডেলিভারিতে আসে সিঙ্গল। কিন্তু এক বল পর ‘নো’ করে বসেন তানজিম।
দুই বলে যখন প্রয়োজন দুই রান, হায়দার বল পাঠিয়ে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট সীমানার দিকে। দুই রান হওয়ার কথা সহজেই। কিন্তু এক রান নিয়ে দুই ব্যাটসম্যান একটু ইতস্তত করেন। ফিল্ডার তাওহিদ হৃদয় বল ধরে থ্রো করতে দেরি করেন একটু। তাতেই শেষ সুযোগ হারায় বাংলাদেশ। দুই রান নিয়ে ফেলেন দুই ব্যাটসম্যান।
যদিও নাটকের বাকি ছিল তখনও। হৃদয়ের থ্রো ধরে স্টাম্প ভাঙেন কিপার জাকের আলি। রিপ্লেতে দেখা যায় ক্রিজে পৌঁছেই ব্যাট রাখতে একটু দেরি করেন হায়দার। তবে শেষ পর্যন্ত খেসারত দিতে হয়নি তাকে। বারবার রিপ্লে দেখে টিভি আম্পায়ার রায় দেন ‘নট আউট’। উল্লাসে ফেটে পড়ে আমিরাতের ক্রিকেটাররা।
আগের ম্যাচের উইকেটেই আবার টস জিতে এবারও বোলিংয়ে নামে আরব আমিরাত। পারভেজের অনুপস্থিতিতে তানজিদের সঙ্গে ইনিংস শুরু করেন লিটন কুমার দাস। ৫৫ বলে ৯০ রানের জুটিতে দলকে বড় স্কোরের ভিত গড়ে দেন দুজন। হায়দার আলিকে টানা দুই বলে চার ও ছক্কায় ফিফটিতে পৌঁছে যান তানজিদ। আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিতে তার চতুর্থ ফিফটি আসে ২৫ বলে। ক্যারিয়ারের প্রথম সাত ম্যাচে তিনটি ফিফটির পর টানা ১২ ইনিংসে আর সেই মুখ দেখতে পাননি তিনি। এর মধ্যে আট ইনিংসেই কাটা পড়েছেন দুই অঙ্ক ছোঁয়ার আগে। অবশেষে আবার সেই স্বাদ পেলেন তিনি। পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশ তোলে ৬৬ রান। তাতে তানজিদের রানই ৫২। ৮ চার ও ৩ ছক্কায় ৩৩ বলে ৫৯ করেন তানজিদ। এরপর ইনিংস এগিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব ছিল লিটনের। সেখানে খুব একটা সফল তাকে বলা যাবে না। রানে ফিরেছেন বটে, তবে ৩২ বলে ৪০ রানের ইনিংসটাকে এমন দিনে খুব আদর্শ টি–টোয়েন্টি ইনিংস বলা যাবে না। পারভেজ না থাকায় সুযোগ পাওয়া শান্তর সামনে হাতছানি ছিল টি–টোয়েন্টির বিবর্ণ রেকর্ডকে একটু ভদ্রস্থ করার। কিন্তু এরপর না পেরেছেন ইনিংস বড় করতে, না পেরেছেন গতি দিতে। ৫০তম টি–টোয়েন্টিতে তিনি ফেরেছেন ১৯ বলে ২৭ রান করে। জাকের ১৮ করেন স্রেফ ৬ বলে। শেষ ওভারে রান আসে স্রেফ চার। তার পরও ২০৫ রানের পুঁজি পায় বাংলাদেশ।