ফটিকছড়ির নাজিরহাট সেন্ট্রাল পার্ক হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভুল চিকিৎসার অভিযোগ ওঠা মুন্নী আক্তার (৩০) নামের সেই প্রসূতি মারা গেছেন। গতকাল রোববার চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেন তার চাচাত ভাই মোহাম্মদ সাব্বির হোসেন।
জানা গেছে, ২৫ আগস্ট রাতে ফটিকছড়ির নাজিরহাটে সেন্ট্রাল পার্ক হাসপাতালে ভর্তি করা হয় উপজেলার রাঙ্গামাটিয়া গ্রামের গৃহবধূ প্রসূতি মুন্নী আকতারকে। ওই রাতেই সিজারের মাধ্যমে পুত্র সন্তানের মা হন মুন্নী আকতার। পরবর্তী সময়ে তাকে গুরুতর অসুস্থ দাবি করে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে রেফার করা হয়। চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার দু’দিন পর মুন্নী আকতারের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে পরিবারের লোকজন সেন্ট্রাল পার্ক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ভুল চিকিৎসার অভিযোগ তোলেন। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত হওয়ার পর একদল বিক্ষুব্ধ জনতা সেন্ট্রাল পার্ক হাসপাতালে হামলা চালায়। এ সময় হাসপাতালের দরজা–জানালা ভাঙচুর করা হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে হাসপাতালের চিকিৎসক এবং কর্মচারীরা আত্মগোপনে চলে যান।
খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার, এসিল্যান্ড এবং থানা পুলিশ গিয়ে অভিযুক্তদের আইনের আওতায় এনে সুষ্ঠু বিচারের আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। তখন ওই রোগী চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
এ অভিযোগের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য ৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী। কমিটির সভাপতি করা হয় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আরেফিন আজিমকে। সদস্য সচিব হলেন, ডা. মনীষ সাহা রায়, সদস্য হলেন ডা. শামীমা আক্তার ও ডা. রানা দে। গঠিত তদন্ত কমিটিকে আগামী ৭ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
গৃহবধূ মুন্নী আকতারের মামা মো. হাসেম বলেন, সেন্ট্রাল পার্ক হসপিটালে আমার ভাগ্নির ভুল অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে এ ঘটনার সঠিক বিচার চাই যাতে অন্য কেউ এমন পরিস্থিতির শিকার না হয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা ডা.আরেফিন আজিম বলেন, তদন্তপূর্বক ৭ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা। তবে হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট সকলে পলাতক। জানাযা শেষে আমরা নিহত মহিলার পরিবারের সাথে বসে কথা বলে আমাদের তদন্ত এগিয়ে নেব। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ঘটনার সত্যতা উদঘাটনের জন্য ৪ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অবশ্যই সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে আসল ঘটনা উন্মোচন করা হবে।
জানা যায়, নিহত মুন্নী আক্তারের ৩ টি কন্যা সন্তান রয়েছে। গত রোববার ওই হাসপাতালে সিজারের মাধ্যমে তার আরো একটি ছেলে সন্তান হয়। প্রায় ৪ মাস পূর্বে তার স্বামী অসুস্থ হয়ে মারা যান। মুন্নী ফটিকছড়ি পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের জামাল বেপারির বাড়ি মৃত মোহাম্মদ ফোরকানের স্ত্রী।