নষ্ট গাড়ির ডকুমেন্টে চলছে চোরাই গাড়ি

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ৩ জুন, ২০২১ at ১০:১৯ পূর্বাহ্ণ

গাড়ি চুরি ও ছিনতাইয়ের পর মুহূর্তেই নম্বর প্লেট, রঙসহ গাড়ির খোলস বদলে ফেলছে চোরচক্র। আর এসব গাড়ির বৈধতা দিতে ব্যবহার করা হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত, ব্যবহার অনুপযোগী গাড়ির কাগজপত্র। পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার গাড়ি চোর চক্রের সদস্যরা এ তথ্য জানিয়েছে।
নগরীর ডবলমুরিং থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন আজাদীকে জানান, প্রাইভেটকার, মোটর সাইকেল, মাইক্রোবাস থেকে শুরু করে সিএনজি টেক্সিও চুরি/ছিনতাই হচ্ছে। তবে সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের প্রধান টার্গেট প্রাইভেটকার, সিএনজি টেক্সি ও মোটরসাইকেল। গাড়ি চুরি ঠেকাতে গাড়ির মালিকদের সিকিউরিটি ডিভাইস লাগানোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বার বার। ডিভাইস লাগানো থাকলে চুরি বা ছিনতাই হলেও এটি উদ্ধার করা সহজ হয়। তিনি আরো বলেন, গাড়ি চোর চক্রের সদস্যরা কখনো পুরো গাড়ি বিক্রি করে আবার কখনো গাড়ির বিভিন্ন পার্টস খুলে বিক্রি করে। পার্টস খুলে বিক্রির বিষয়টি সচরাচর মোটর সাইকেলের ক্ষেত্রে বেশি হয়ে থাকে।
পুলিশ জানায়, ইতঃপূর্বে গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে গাড়ি চুরির নানা কৌশল জানা গেছে। চোর সিন্ডিকেটের প্রথম গ্রুপটি ব্যবহার অযোগ্য গাড়ির কাগজপত্র সংগ্রহ করে। এরপর সেই কাগজের সাথে প্রায় মিলে যায় এমন গাড়ি চুরি করে দ্বিতীয় গ্রুপ। যেকোনো গাড়ি চুরি বা ছিনতাই করার আগে অন্তঃত পাঁচবার ওই গাড়ি সম্পর্কে খোঁজ নেয়। কয়েকজন মিলে টার্গেট করে গাড়িটির গতিবিধি লক্ষ্য করতে থাকে। এরপর গাড়িটি নিজেদের আয়ত্বে নেয়। এছাড়া তারা মার্কেটে, বাড়ির সামনে কিংবা কোনো স্থানে পার্ক করার পর চালককে অস্ত্রের ভয় কিংবা প্রলোভন দেখিয়ে গাড়ি ছিনিয়ে নেয়। গাড়িটি দখলে নেয়ার পরপরই নগরীর বাইরে কোনো ওয়ার্কশপে পাঠিয়ে দেয় তারা। তৃতীয় গ্রুপে আছে কিছু গ্যারেজ মালিক যারা দ্রুত গাড়ির রং, বডি কিংবা চেসিস নম্বর পরিবর্তনে পারদর্শী।
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গাড়ি চুরি প্রতিরোধ টিমের তদন্তে জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন এলাকায় দুর্ঘটনায় কিংবা পুড়ে বিনষ্ট হওয়া গাড়ির চেসিস এবং কাগজপত্র নামমাত্র মূল্যে সংগ্রহ করে থাকে গাড়ি চোর চক্রের সদস্যরা। চোরাই গাড়ির চেসিসের যে অংশে চেসিস নম্বর থাকে সে অংশ বিশেষ কৌশলে কেটে রাখে। এরপর পূর্বে থেকে সংগৃহিত নষ্ট হওয়া গাড়ির চেসিসের বিশেষ অংশ কেটে চোরাই গাড়িতে লাগিয়ে দেয় এবং চোরাই গাড়ির ইঞ্জিন নম্বর ঘষামাজা করে নষ্ট করে দেয়। পরবর্তীতে দুর্ঘটনায় নষ্ট হওয়া গাড়ির কাগজপত্র চোরাই গাড়িতে চালিয়ে দিয়ে গাড়ির রং পরিবর্তন করে সাধারণ মানুষের কাছে বিক্রি করে।
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারকৃত সিএনজি টেঙি চোর চক্রের সদস্য সজীব শিকদার (৪৮) ও মো. সিহাবুর রহমান মিঠু (৪২) জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, জব্দকৃত সিএনজি টেঙিগুলোতে ব্যবহৃত রেজিস্ট্রেশন নম্বরগুলো বিআরটিএ থেকে সংগ্রহ করা নয়। তারা যোগসাজসে বিভিন্ন স্থান থেকে চোরাই ও নম্বরবিহীন সিএনজি টেঙিগুলো সংগ্রহ করে। পরবর্তীতে তাদের দলের সদস্য মিঠুর মাধ্যমে বিআরটিএ কর্তৃক পূর্বে বাতিল ঘোষণাকৃত রেজিস্ট্রেশন নম্বর সংগ্রহ করে অন্য সদস্যদের সহায়তায় জালিয়াতির মাধ্যমে সেগুলোর সাথে মিল রেখে জাল ডকুমেন্ট তৈরি করে। সরাসরি বিক্রি করার জন্য ক্রেতা সংগ্রহ করার পাশাপাশি গাড়ি বিক্রির দালাল নিয়োগ করে।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, সারাদেশে শতাধিক চক্র গাড়ি চুরিতে সক্রিয়। এদের মধ্যে – জামান গ্রুপ, রিপন গ্রুপ, হাবিল গ্রুপ, বাশার গ্রুপ, রাসেল গ্রুপ, মিজান গ্রুপ, আমির গ্রুপ, শাহিন গ্রুপ, বিশাল গ্রুপ, আসাদুল গ্রুপ, জুয়েল গ্রুপ, নজরুল গ্রুপ, মিরাজ গ্রুপ, কাজল গ্রুপ, বাবু গ্রুপ, রনি গ্রুপ, লম্বু শহীদ গ্রুপ, পারভেজ গ্রুপ, রাজ গ্রুপ, শাহ আলম গ্রুপ, জহির গ্রুপ, রাজু গ্রুপ, সিরাজ গ্রুপ, ফিরোজ গ্রুপ, রফিক গ্রুপ অন্যতম। সংঘবদ্ধ এই চক্রের সদস্যরা বারবার গ্রেপ্তার হচ্ছে। ধরা পড়ার পর কিছুদিন কারাগারে থেকে সহজেই আদালত থেকে জামিন পাচ্ছে। কারাগার থেকে বের হওয়ার পরই আগের পেশায় ফিরে যাচ্ছে।
কয়েকজন গাড়ি চোরের বক্তব্য তুলে ধরে কোতোয়ালী থানার ওসি নেজাম উদ্দীন আজাদীকে বলেন, চোরাইকৃত গাড়ির অন্যতম ক্রেতা মাদক ব্যবসায়ী ও কিছু অসাধু লোক। তারা চোরাই গাড়ি কমমূল্যে কিনে রিমোর্ট এলাকায় ভাড়ার কাজে লাগায়। চোরাই গাড়ি কেনাবেচা বেশি হয় চট্টগ্রাম বিভাগ ও সিলেট অঞ্চলে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ২০ লাখ টাকা হোল্ডিং ট্যাক্স ও ফি আদায়
পরবর্তী নিবন্ধরেফারি সমিতির কার্যালয় সিলগালা