দেশের সীমান্ত এলাকা কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলার বেশ কয়েকটি এলাকায় খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। নলকূপ থেকে পর্যাপ্ত পানি না উঠা ও স্থানীয়দের নলকূপ থেকে রোহিঙ্গাদের জন্য পানি সরবরাহ করাতে এই সংকট সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি করছেন স্থানীয়রা। গত এক মাস ধরে চলছে এই সংকট। তীব্র গরমে এই সংকট দিন দিন বাড়ছে। এতে পানি সংকটে স্থানীয়রা কাহিল হয়ে পড়েছেন।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, টেকনাফ উপজেলার পৌরসভা, সদর ইউনিয়ন, হোয়াইক্যং, হ্নীলা, সাবরাং ইউনিয়ন ও রোহিঙ্গা অধ্যুষিত উখিয়ার রাজাপালং, পালংখালী এবং জালিয়াপালং ইউনিয়নে খাবার পানির সংকট বিরাজ করছে। এসব ইউনিয়নের এক–তৃতীয়াংশ এলাকায় খাবার পানির সংকট চলছে। কিছু এলাকায় গোসলসহ নিত্য ব্যবহারের পানিরও সংকট দেখা দিয়েছে। তীব্র গরমে খরা বিরাজ করায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পানির সংকট সৃষ্টি হয়েছে। তাই রোহিঙ্গাদের জন্য স্থানীয় গ্রামের নলকূপ ও পুকুরের পানি সরবরাহ করায় সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এতে খাবার পানির ভোগান্তিতে পড়েছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, তীব্র গরমে পুকুরের পানি শুকিয়ে গেছে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন এনজিও সংস্থা গ্রামে যাদের বাড়িতে গভীর নলকূপ আছে তাদের থেকে পানি কিনে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিয়ে যাচ্ছেন। এতে করে পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। তাই এখন বহু অগভীর নলকূপে সারাদিনে এক বালতিও পানি পাওয়া যাচ্ছে না।
এ ব্যাপারে উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, একদিকে গরমের তাপে পানির স্তর নিচে যাওয়ায় নলকূপ থেকে পানি উঠছে না। অপর দিকে স্থানীয়দের নলকূপ থেকে এনজিওরা কিনে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রতিদিন হাজার হাজার লিটার পানি সরবরাহ করছে। এতে পানির সংকট তীব্র হয়েছে। এই বিষয়ে এখনই পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার।
টেকনাফের হোয়াইক্যংয়ের বাসিন্দা রশিদ মিয়া বলেন, আমাদের গ্রামে যাদের বাড়িতে গভীর নলকূপ আছে, তারাই শুধু খাবার ও রান্নার জন্য পানি পাচ্ছেন। অগভীর চাপা নলকূপ থেকে ঠিকমতো ও পর্যাপ্ত পানি উঠছে না। এতে সংকট হওয়ায় যাদের গভীর নলকূপ আছে তাদের বাড়ি থেকে কোনোরকম এক বালতি পানি এনে রান্নার কাজে ব্যবহার করছি।
উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের হাছিনা বেগম বলেন, পানি নিচের স্তরে পড়ে গেছে। এতে গত এক মাস ধরে বাড়ির নলকূপ থেকে ঠিকমতো পানি উঠছে না। এরমধ্যে পুকুরও শুকিয়ে গেছে। তাই খাবার ও ব্যবহারের পানির তীব্র সংকট চলছে।
টেকনাফ সদর ইউনিয়নের বাসিন্দা আবদুল খালেক বলেন, গভীর নলকূপ থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে শত শত লিটার পানি প্রতিদিন বিক্রি করা হচ্ছে। এর ফলে আমাদের এলাকায় তীব্র খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। যাদের বাড়িতে গভীর নলকূপে পানি পাওয়া যাচ্ছে, সেখান থেকে এক বালতি পানি নিতে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে টেকনাফ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী মো. ফারুক হোসেন বলেন, পানি সংকট তীব্র হওয়ায় স্থানীয়দের জন্য পানির সংকুলান হচ্ছে না। তাই একটি স্থানীয় প্রতিষ্ঠান থেকে ক্রয় করে স্থানীয়দের কাছে পানি সরবরাহ করছি।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহেসান উদ্দিন বলেন, যেসব এলাকায় খাবার পানির সংকট তৈরি হয়েছে, সেখানে ক্রয় করা পানি সরবরাহ করে সংকট সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। কয়েকটি এনজিওর সহযোগিতায় বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবারাহ করা হচ্ছে। নতুন করে সংকট যেখানে বাড়ছে সেখানেও পানি দেয়া হবে।