নমুনা ডিম কী

কেশব কুমার বড়ুয়া, হাটহাজারী | বুধবার , ২৮ মে, ২০২৫ at ৮:১০ পূর্বাহ্ণ

প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র হালদা নদীতে প্রতি বছর এপ্রিল মাস থেকে মা মাছের ডিম ছাড়ার মৌসুম শুরু হয়। এপ্রিল থেকে মে মাস পর্যন্ত পূর্ণিমা ও অমাবস্যার তিথিতে মা মাছ নদীতে সাধারণত ডিম ছাড়ে। নদীর অনুকূল পরিবেশের উপর ডিম ছাড়া নির্ভর করে। হালদায় ডিম ছাড়তে আসা মা মাছ নদীর পরিবেশ উপযুক্ত হতে শুরু করলে খুব কম পরিমাণ ডিম দেয়। এই ডিমকে নমুনা ডিম বলা হয়। নমুনা ডিম দেওয়ার পর কাঙ্ক্ষিত পরিবেশ পেলে মা মাছ ডিম ছাড়ে। কিন্তু এই নমুনা ডিম ছাড়ার পরও যদি উপযুক্ত পরিবেশ পাওয়া না যায় তাহলে মাছ আর ডিম ছাড়ে না।

নমুনা ডিম ছাড়ার ব্যাপারে হালদা গবেষক ড. মঞ্জুরুল কিবরিয়া জানান, প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র হালদা নদীতে রুই জাতীয় মাছের পূর্ণাঙ্গ ডিম ছাড়ার আগে একটাদুইটা করে অল্প পরিমাণ ডিম ছাড়াকে স্থানীয়ভাবে নমুনা ডিম বলে। এটি হালদা নদীর মাছের প্রাক প্রজননকালীন আচরণের একটি অংশ। প্রজননকালীন সময় যখন মাছের ডিম পরিপক্ক হয় এবং নদীর পরিবেশ কিছুটা অনুকূল দেখে তখন ব্রুড মাছ পরীক্ষামূলকভাবে কয়েকটি ডিম ছাড়ে। এর মাধ্যমে মাছ পরীক্ষা করার চেষ্টা করে তাদের ডিম নদীর এ গুনাগুনের পানি এবং পরিবেশে টিকে থাকতে পারবে কিনা। যদি তারা অনুভব করে পরিবেশ অনুকূল তাহলে এরপরের জোয়ার বা ভাটায় পূর্ণাঙ্গ ডিম ছেড়ে দেয়। স্থানীয় ডিম সংগ্রহকারীরা নমুনা ডিম দেখে পরবর্তী জোয়ার বা ভাটার সময় তাদের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নিয়ে ডিম সংগ্রহ করার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি নিয়ে নদীতে অবস্থান করেন। যদি পরিবেশ অনুকূল না থাকে তাহলে মাছ ডিম ছাড়ে না। একটি প্রজনন মৌসুমে একাধিকবার নমুনা ডিম ছাড়তে দেখা যায়। নমুনা ডিম থেকে আমরা গবেষকরা নদীর ভৌত রাসায়নিক গুনাগুনের পাশাপাশি কয়েকটা তথ্য নিশ্চিত হই।

এ গবেষক বলেন, কিন্তু সমস্যা হচ্ছে অন্য জায়গায়। বর্তমানে উন্মুক্ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, মোবাইল এবং তথ্য প্রযুক্তির অবাধ ব্যবহারের ফলে অনেক তরুণ ডিম সংগ্রহকারীরা নমুনা ডিম ছাড়লে ফেসবুকে ছবি আপলোড করে বা লাইভ ভিডিও করে। অনেক গণমাধ্যম কর্মীরা এটা দ্রুত নিউজ করে ফেলে। সারা দেশের মানুষ ‘নমুনা ডিম’ কীবিষয়টি সম্পর্কে অবগত নয়। তারা মনে করে হালদা নদীতে মাছ ডিম ছেড়েছে। এই সুযোগকে কাজে লাগায় স্থানীয় অসাধু কিছু মানুষ। ফলে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মৎস্য চাষিরা হালদার পোনা কিনতে এসে প্রতারিত হয়। এজন্য সব সময় নমুনা ডিম ছাড়ার বিষয়টি নিয়ে যাচাই না করে সংবাদ প্রচার না করার জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধতিন বছর পর নিয়োগের বিধান, এক মোতাওয়াল্লিই কাটালেন ৪৫ বছর
পরবর্তী নিবন্ধহালদায় নমুনা ডিম ছেড়েছে মা মাছ