নবী (স.) এর স্মৃতি ও আরবের গোলাপের শহর তায়েফ

মোয়াজ্জেম হোসেন | মঙ্গলবার , ২৯ অক্টোবর, ২০২৪ at ৯:১২ পূর্বাহ্ণ

আরবের গোলাপের শহর, ঐতিহাসিক ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের নগরী তায়েফ। ভুপৃষ্ট থেকে ১৮৭৯ মিটার বা ৬,১৬৫ ফুট উচ্চতায় সারাওয়াত পর্বতমালার অংশে মক্কা নগরীর দক্ষিণ পূর্বে হেজাজ পর্বতমালার ধারে এই শহরের অবস্থান। পবিত্র মক্কা থেকে প্রায় ১২০ কিলোমিটার দক্ষিণপূর্বে রাসূলুল্লাহ্‌ (সা.)-এর স্মৃতিবিজড়িত শহর তায়েফ।

মক্কা থেকে তায়েফের রাস্তা পাহাড়ের বুক চিরে তৈরি করা। এক পাশে উঁচু পাহাড় অন্য পাশে শরীর হিম করা গভীর খাদ। জিলাপীর প্যাঁচের মতো পাহাড়ে চক্রাকারে ঘুরে তায়েফে ওঠতে হয়। গাড়ি থেকে বাইরে তাকালে দেখি, আমাদের গাড়ি নিয়ে অনেক ওপরে, নিচের রাস্তাগুলো দেখা যাচ্ছে আঁকাবাঁকা সরু নালার মতো। আর গাড়িগুলো যেন বাচ্চাদের খেলনার গাড়ি। শরীর হিম করা এমন পাহাড়ি পথে অ্যাডভেঞ্চারময় এ যাত্রাপথটি মক্কা থেকে তায়েফের পথ।

তায়েফ শব্দের অর্থ পরিভ্রমণকারী বা ঘিরে রাখা। এই শহরের নাম করণ করা হয়েছে এই বনু ছাকিফ গোত্রের তৈরী করা একটি প্রাচীরের নামানুসারে, যা সমগ্র শহরটিকে ঘিরে রেখেছে। রবি শস্য ও নানা ফলফলাদির জন্য তায়েফ বিখ্যাত। তায়েফে উৎপন্ন আঙ্‌গুর, কমলা, আনার ইত্যাদি অতি দামী ফলফলাদি মিষ্টি ও পুষ্টিতে ভরপুর। বিশেষ করে তায়েফের আঙ্গুর বিখ্যাত। এছাড়া তায়েফে উৎপাদিত সবজি সৌদি আরবের চাহিদার উল্লেখযোগ্য অংশ পূরণ করে। আর এ সবজিগুলো উৎপাদন করেন বাংলাদেশীরা। এছাড়া তায়েফকে বলা হয়, ঐতিহাসিক ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। চমৎকার সাজানোগোছানো শহর।

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস মসজিদ তায়েফ শহরে অবস্থিত। এটিই তায়েফের কেন্দ্রীয় মসজিদ, এখানে তাঁর মাজারও অবস্থিত। ১৬০০ সাল হতে ১৮০০ সাল পর্যন্ত তায়েফে অটোমান শাসনের অধীনে চলে। ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দে তায়েফ সৌদি আরবের অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়। ইতিহাসের পাতায় তায়েফ নানা কারণে আলোচিত। তায়েফের বনু ছাকিফ গোত্রে দুধ মাতা হালিমাতুস সাদিয়ার ঘরে হজরত মুহাম্মদ (.) লালিত পালিত হয়েছিলেন। ঐতিহাসিক অটোমান শাসনামল ও বিভিন্ন যুদ্ধের স্মৃতি চিহ্ন এখনো শহরটিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। যেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছোট বড় অসংখ্য প্রাচীন দুর্গ। তায়েফের ঐতিহাসিক প্রাচীন দুর্গ ও যুদ্ধের স্মৃতি চিহ্নগুলো বিভিন্ন দেশের পর্যটকদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। মুসলিম সভ্যতার বিষ্ময়কর উদাহরণ হয়ে স্থাপত্যশিল্পের প্রাচীন দুর্গগুলো আজও টিকে আছে। এই দুর্গগুলোর নকশা দেখে যে কেউ অবাক হবেন। তায়েফ শহরে রয়েছে পাহাড়ের কোল ঘেষে তৈরী করা অসংখ্য রিসোর্ট ও অবকাশ যাপন কেন্দ্র। পর্যটকদের আনন্দ দিতে এবং যাতায়াতের জন্য রয়েছে ক্যাবল কারের সু ব্যবস্থা। তায়েফের বিশেষ আকর্ষণ হলো গোলাপের বাগানগুলো। সাধারণত এপ্রিল মাসে গোলাপের চাষ হয়। বসন্তকালে বাগানগুলো গোলাপে ছেয়ে যায়। পবিত্র কাবা ঘরের বাইরের দেওয়ালগুলো পরিষ্কার করতে ব্যবহৃত হয় গোলাপফুলের নির্যাস থেকে বানানো তেল। তায়েফের দিনের ও রাতের সৌন্দর্যের ভিন্ন রূপ, দিনের চেয়ে রাতের তায়েফ আরো মোহনীয়। তায়েফ থেকে মক্কা ১২০ কি. মি. ফেরার রাস্তা তিন সারি লাইট দিয়ে সাজানো। রাতের আধারে আলোর উজ্জলতায় পাহাড়ি এই রাস্তা ভয়ঙ্কর সুন্দর।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৬নং ওয়ার্ডের বাদশাহ্‌ চেয়ারম্যানঘাটার মহল্লাবাসীর জন্য জাইকা লাইনের সংযোগ চাই
পরবর্তী নিবন্ধঐতিহ্যের চট্টগ্রাম, চট্টগ্রামের ঐতিহ্য