নবীন প্রজন্ম ও সফলতার কাঙ্ক্ষিত দিক

ইন্দ্রাণী পাঠক | বৃহস্পতিবার , ২ মার্চ, ২০২৩ at ৫:২৮ পূর্বাহ্ণ

বছরের পরিক্রমায় এক একটি বছর পিছে ফেলে আসছি আমরা। আজকের নবীন প্রজন্ম তোমরা অনেক আধুনিক। বিজ্ঞান ও আধুনিকতার ছোঁয়ায় তোমরা দেখছো, শিখছো, জানছো আবার প্রয়োগ করে সফল হচ্ছো কখনো বিফল হচ্ছো। সফলতা পেতে হলে কিছু উপায় জানা বর্তমান সময়ে খুব জরুরি। তোমাদের জন্য দশটি কথা জানানো হলো। আমি, আমরা, তুমি, তোমরা অনেক গুণের অধিকারী। এই তথ্য কি জানো সবাই? অনেকেই জানো আবার অনেকেরই অজানা। শোনো, জানতেই হবে আমাদের। আমাদের এমন কিছু বিষয়ে নজর দিতে হবে যা তোমার ব্যক্তিত্বকে একটা উজ্জ্বল স্থানে পৌঁছে দিতে পারে।

প্রথম কথা, তুমি ভালো বক্তা হওয়ার চেয়ে ভালো শ্রোতা হও। তুমি অপরের কথা মন দিয়ে শোনো। হয়তো সে কথা মূল্যবান নাও হতে পারে। পৃথিবীতে সবাই মূল্যবান কথা বলতে পারে না। যে মানুষটি তোমাকে সাধারণ বিষয়ে বলতে চাইছে তখন তোমার উচিত সে কথাগুলো শোনা। তারপর তোমার কিছু বলার থাকলে বলবে। এতে যে মানুষটি তোমাকে কথাগুলো বলেছে তার কাছে তুমি গ্রহণযোগ্য হবে। এখন কথা হলো সে যদি অন্যায় কথা বলে তুমি কী করবে? এখানেই ভালো শ্রোতা হওয়ার আসল লক্ষণ। তুমি সবটা শুনে তাকে ভালো পরামর্শ দিতে পারবে। এতে তার উপকার হবে, তুমিও ভালো শ্রোতা হলে, সাথে ভালো বক্তা এবং নির্দেশক বলে বিবেচিত হবে।

দ্বিতীয় কথা হলো, তুমি স্বতন্ত্র একজন। তোমার কিছু গুণ আছে যা অন্যদের অজানা। এখন অনেকেই তোমাকে বলবে, দেখো দেখো কিভাবে নিজের ঢাক নিজে পেটাচ্ছে। আরে এটাই বলতে দাও নিজের ক্ষমতা, গুণ অন্তত ৪০% নিজেকে কিছুটা জাহির করতে হয় বাকিটুকু তারা তোমার জানানোর মধ্য থেকে ১০০% জেনে নেবে। তোমার প্রতিভা কেউ কেড়ে নিতে পারবে না বরং তোমার প্রতিভা অন্যকে অনুপ্রাণিত করবে। এতে অহমিকা না টেনে বিনয়ী হয়ে নিজেকে উপস্থাপন কর। দেখবে যারা তোমায় টিপ্পনী দিচ্ছিল তারা সুরসুর করে পালাবে। তৃতীয় কথা হলো, তুমি কেবল তুমিই। নিজেকে অন্যের সাথে তুলনা করতে যেও না। তোমার বৈশিষ্ট্যে যা আছে তাই কর। প্রয়োজন পড়লে তুমি শেখো, দেখো, চেষ্টা কর। অনুকরণ নয় অনুসরণ কর। তোমার বন্ধু, সহকর্মী, আত্মীয় কত ভালো অর্থ উপার্জন করছে তা দেখে তোমারও যদি তাদের মতো সেই জায়গায় যেতে ইচ্ছে করে তাহলে যাবে, কিন্তু একবারও কি ভেবে দেখেছো সেই জায়গায় যাওয়ার জন্য তোমার আদৌ মানসিক ইচ্ছে আছে কিনা? হুজুগে কোনো কিছু করা ঠিক নয়। নিজের আত্মবিশ্বাসকে মজবুত রেখে নিজের ক্ষমতা, ইচ্ছাশক্তি দিয়ে তোমার ভালো লাগার কাজকে বেছে নাও। দেখবে অর্থ কম পেলেও মানসিক তৃপ্তি পাবে।

চতুর্থ কথা, নিজের কথা নিজে বলার অভ্যাস তৈরি কর। অপরের মাধ্যমে না গিয়ে যেখানে তোমার বাকশক্তি সৃষ্টিকর্তা দিয়েছেন তা ব্যবহার কর। বিনয়ের সাথে কথা বলো। শ্রদ্ধার সাথে নিজের ভালো লাগা, মন্দ লাগা বিষয়গুলো উপস্থাপন কর। অপরের মাধ্যমে গেলে যা হয় তা, তুমি যা বলতে চেয়েছো তা হাজারগুণ বেশি করে বলা হবে আর না হয় এতো বেশি নগণ্য করে বলা হবে তুমি জেনে নিজেই স্তম্ভিত হবে। তাই স্পষ্ট করে নিজের কথা নিজে জানাও।

পঞ্চম কথা, নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস রাখো। তোমার কোমল, সরল মন গড়ে দেবার চাইতে ভেঙে দেয়ার মানুষের সংখ্যা বেশি। তোমার ভালো দিক দেখার চাইতে মন্দ দিক দেখার মানুষ বেশি। তাই এইসব গরল লোকদের সামনে দ্রুত সরল না হয়ে গিয়ে আত্মবিশ্বাস রাখো নিজের প্রতি। তেমনই আত্মবিশ্বাস রাখো যা তোমাকে বা তোমাদের সম্পর্ককে কেউ ভাঙতে না পারে। বিশ্বাসবোধ, বোঝাপড়া সম্পর্কের উন্নতি ঘটায়। কারো কথায় বিশ্বাস করো না আবার অবিশ্বাসও করো না। যাচাই কর, আদৌ যার সম্পর্কে এমন কথা বলা হচ্ছে সে মানুষ হিসেবে কেমন, তার পূর্বের আচরণ, কাজ সম্পর্কে নিশ্চয়ই তুমি জানো, তাহলে সিদ্ধান্ত নিতে ভেবে নেবে। এমন অন্যায় আচরণ তার সাথে করো না যা তোমাকে আমৃত্যু যন্ত্রণা দেবে।

ষষ্ঠ কথা, তোমাকে হঠাৎ কেউ কটু কথা বললো আর তুমি দ্রুত তার প্রতিক্রিয়া জানালে এতে তোমার মূল শক্তি নষ্ট হবে। তাই কোনো বিরূপ কথা শোনার সাথে সাথে প্রতিউত্তর না করে তার সামনে থেকে বের হয়ে খোলা আকাশ দেখো, শ্বাসপ্রশ্বাস নাও তারপর দেখবে তোমার মন থেকে ওই কথার গুরুত্ব হারিয়েছে। হ্যাঁ, তবে মনে রাখবে কী বলেছে, যথাসময়ে হাসিমুখে ওই ব্যক্তিকে তোমার সুন্দর উদার মানসিকতা দিয়ে উত্তর দেবে। প্রয়োজনে কাজের দ্বারা বুঝিয়ে দেবে সেসময় উনার কথা অনুচিত ছিল। তুমি হেরে যাবে না। সপ্তম কথা, প্রয়োজনের অধিক কথা বলো না। জীবনে হাসিখুশি থাকা জরুরি। তোমার সদা হাস্যমুখ অন্যকে আনন্দিত করে জেনে রেখো। যারা তোমার হাসিখুশিতে আনন্দ পায় তাদের হৃদয়ে রেখো। তারা তোমার শুভাকাঙ্ক্ষী। তুমি একা সবাইকে কখনোই সন্তুষ্ট করতে পারবে না। জীবনে কেবল সাধু সন্ন্যাসীদের সন্তুষ্টি আছে। আমাদের মতো জাগতিক সংসারে সব সময় প্রত্যাশা বেশি। তাই প্রত্যাশা কমিয়ে আশা জাগানোর চেষ্টা করো। প্রশংসা করো, অভিনন্দিত করো। এতে তোমার মুখের বাণী খরচ হবে, পকেটের পয়সা নয়। অর্থ যেমন প্রয়োজন ঠিক মুখের বাণী একজন মানুষের প্রাণ বাঁচাতে সক্ষম। চেষ্টা করে দেখো তুমি পারবে।

অষ্টম কথা, তোমার গোপন কোনো পরিকল্পনা (ইতিবাচক) থাকলে সাথে সাথে সে কথা অন্যদের বলতে যেও না। ধৈর্য ধর, সময় নাও। যেদিন তুমি সে কাজ বাস্তবায়ন করবে তখনই আনন্দ বেশি পাবে। এটি চিরন্তন সত্য। তুমি আগেভাগে সব জানিয়ে দিলে আকর্ষণ চলে যায়। তাই কোনো শুভ কাজের পরিকল্পনা নীরব থেকে করে যাও। জয় নিশ্চিত। নবম কথা, লেখাপড়ায় সবাই চৌকস হতে পারে না। কেউ একটু ভালো আবার কেউ বেশি ভালো। তুমি যেটুকু সম্ভব পরিশ্রম কর। তোমার সফলতা পরিশ্রমে আছে। শুধু পারি না, জানি না, হবে না এসব নিয়ে না থেকে তোমার জানা বিষয়গুলোকে সাজিয়ে মনস্থির করে চেষ্টা চালিয়ে যাও। এমন এক সময় আসবে যখন মধ্যবয়সে এসে তুমি তোমার আগের কাজ নিয়ে হাসবে, লজ্জা পাবে কেন এত ছেলেমানুষী করেছিলে সেসময়। তাই এখন থেকে কাজের ক্ষেত্র, স্বপ্নের পরিকল্পনা গুছিয়ে রেখে কাজ শুরু করে দাও। অবশ্যই তোমার স্বপ্ন পূরণ হবে। দশম কথা, এখন থেকে কিছু কিছু ক্ষেত্রে অন্যকে নাবলা শেখো। সব কিছুতে হ্যাঁ বললে তোমার জীবন একসময় নাবোধক হয়ে দাঁড়াবে। কারণ তখন সবাই তোমাকে দিয়ে বোকার মতো খাটাবে।

বুদ্ধিমান হও, বিচক্ষণ হও কিন্তু ধূর্ত হয়ো না। স্পষ্ট থাকো নিজের কাছে, বিশ্বাস রেখো সৃষ্টিকর্তার প্রতি। জীবনে সুদিন, দুর্দিন আসবে। তুমি সৃষ্টির সেরা জীব। তাই সাহসিকতা, মানবিকতা, সহিষ্ণুতা, ধৈর্য দিয়ে মোকাবিলা কর। বিজয় তোমার দ্বারপ্রান্তে।

লেখক: শিক্ষক, সঙ্গীত শিল্পী

পূর্ববর্তী নিবন্ধমায়ের ভাষা
পরবর্তী নিবন্ধনতুন করে পথচলা: জেমিসন রেড ক্রিসেন্ট মাতৃসদন হাসপাতাল