নবীনচন্দ্র সেন (১৮৪৭–১৯০৯)। বাংলা সাহিত্যের একজন যুগপথিক কবি। তিনি ১৮৪৭ সালের ১০ ফেব্রয়ারি চট্টগ্রাম জেলার রাউজান থানার পশ্চিম গুজরাপ নোয়াপাড়া জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম গোপীমোহন রায় এবং মাতার নাম রাজরাজেশ্বরী। পাঁচবছর বয়সে তিনি লেখাপড়া শুরু করেন। ১৮৬৩ সালে তিনি বর্তমানে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল থেকে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন। এরপর উচ্চশিক্ষার জন্য কলকাতা যান। ১৮৬৫ সালে তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে এফএ এবং জেনারেল অ্যাসেমব্লিজ ইন্সটিটিউশন থেকে ১৮৬৯ সালে বিএ পাস করেন। বি.এ. পাস করার পরে প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যক্ষ সাট্ক্িলফ এর সুপারিশে নবীনচন্দ্র কলকাতার বিখ্যাত হেয়ার স্কুলে তৃতীয় শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ পান। পরে ডেপুটি ম্যাজিষ্ট্রেট হিসেবে মাত্র একুশ বছর বয়সে তিনি কর্মজীবনে প্রতিষ্ঠিত হন। প্রথমে ১৭ জুলাই ১৮৬৮ বেঙ্গল সেক্রেটারীয়টের এসিস্ট্যান্ট পদে যোগ দেন। ২৪ জুলাই ১৮৬৯ যশোরে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর পদে তাকে পদায়ন করা হয়। কর্মজীবনে তিনি বাংলা, বিহার, ত্রিপুরার অনেকস্থানে দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি দুই দফায় মোট প্রায় আটবছর ফেনীতে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এসময় তিনি অনন্য কর্মদক্ষতায় একটি জঙ্গলাকীর্ণ স্থানকে মনোরম শহরে পরিণত করেন। ১৮৮৬ সালে তিনি ফেনী হাই স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। যা বর্তমানে ফেনী সরকারি পাইলট হাই স্কুল। প্রায় ছত্রিশ বছর সরকারি চাকুরি করার পরে ১ জুলাই ১৯০৪ অবসর গ্রহণ করেন। নবীনচন্দ্রের প্রথম কবিতা কোনো এক বিধবা কামিনীর প্রতি প্রকাশিত হয় তৎকালীন অন্যতম খ্যাতনামা পত্রিকা এডুকেশন গেজেট–এ, যখন তিনি এফ.এ শ্রেণীর ছাত্র। তার প্রথম বই ‘অবকাশরঞ্জিনী’র প্রথম ভাগ প্রকাশিত হয় ১২৭৮ বঙ্গাব্দের পহেলা বৈশাখ এবং এর দ্বিতীয় খণ্ড প্রকাশিত হয় ২৯ জানুয়ারি, ১৮৭৮এ। কবি নবীনচন্দ্র সেন তার মাহাকাব্য তিনটিতে (রৈবতক, কুরুক্ষেত্র, প্রভাস) কৃষ্ণচরিত্রকে বিচিত্র কল্পণায় নতুনভাবে ফুটিয়ে তুলেছিলেন। কবির মতে আর্য ও অনার্য সংস্কৃতির সংঘর্ষের ফলে কুরুক্ষেত্রযুদ্ধ হয়েছিল। এবং আর্য অনার্য দুই সম্প্রদায়কে মিলিত করে শ্রীকৃষ্ণ প্রেমরাজ্য স্থাপন করেছিলেন। নবীনচন্দ্র ভগবতগীতা এবং মার্কণ্ডেয়–চণ্ডীরও পদ্যানুবাদ করেছিলেন। নবীনচন্দ্র কিছু গদ্যরচনাও করেছিলেন। তার আত্মকথা আমার জীবন একটি উপন্যাসের মত সুখপাঠ্য গ্রন্থ। তিনি ভানুমতী নামে একটি উপন্যাসও রচনা করেছিলেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থসমুহ হচ্ছে– মহাকাব্য ‘পলাশির যুদ্ধ’ (১৮৭৫), ‘রৈবতক’ (১৮৮৭),‘কুরুক্ষেত্র’ (১৮৯৩),‘প্রভাস’ (১৮৯৭)। কাব্যগ্রন্থের মধ্যে ‘ক্লিওপেট্রা’ (১৮৭৭),‘অমিতাভ’ (১৮৯৫), ‘অমৃতাভ রঙ্গমতী ’, (১৮৮০) এবং ‘ খ্রীস্ট’ (১৮৯০)। তিনি ১৯০৯ সালের ২৩ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন।