গত কয়েক বছর ধরে বিশ্বে জ্বালানি তেলের অসহনীয় মূল্য বৃদ্ধি ও তীব্র ডলার সংকট মোকাবেলায় সরকার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ে ইতোমধ্যে লোডশেডিং সহ জ্বালানি মূল্য বাড়িয়েছে। তাছাড়া, বিদ্যুৎ উৎপাদনে বাংলাদেশ প্রাকৃতিক গ্যাস নির্ভর, যা বর্তমান বিশ্ববাজারে ব্যয়বহুল। বিশ্লেষকরা বলছেন, আগামী দশ বছরে প্রাকৃতিক গ্যাসের মূল্য প্রায় দ্বিগুণ বাড়তে পারে। অন্যদিকে, গোটা বিশ্ব যখন জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন, সেখানে কার্বন নিঃসরণ মুক্ত নবায়নযোগ্য জ্বালানি হতে পারে একটি টেকসই ও পরিবেশ বান্ধব সাশ্রয়ী জ্বালানি ব্যবস্থা। তথ্য বলছে, বাংলাদেশে সৌর বিদ্যুতের মূল্য ইউনিট প্রতি ৭ টাকার নিচে নেমে এসেছে, যেখানে বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের গড় খরচ ইউনিট প্রতি ১০ টাকার ওপরে উন্নীত হয়েছে। একটি গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা যায়, সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহারে বাংলাদেশ বছরে এক বিলিয়ন ডালার সাশ্রয় করতে পারবে। এতে আরও বলা হয়, ডিজেল চালিত সেচ ব্যবস্থাকে সৌরবিদ্যুৎ দ্বারা প্রতিস্থাপন করলে বছরে এক বিলিয়ন ডলারের ডিজেল ও এলএনজি আমদানি করতে হবে না। আসলে নবায়নযোগ্য শক্তি হলো সীমাহীন প্রাকৃতিক সম্পদ যেমন সূর্য, বায়ু ও জল ইত্যাদি থেকে শক্তি উৎপাদন করার একটি উপায়, যা সহজে নিঃশেষ হয় না। নবায়নযোগ্য জ্বালানি নির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদনে এশিয়ার অনেক দেশ এগিয়ে গেলেও থমকে আছে বাংলাদেশ। একটা জরিপ মোতাবেক, গত ১০ বছরে বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে মাত্র ৪৪৬ মেগাওয়াট। এক্ষেত্রে জমির অপ্রতুলতা এবং ব্যয়বহুল ব্যাটারির ব্যবহারকে প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রধান অন্তরায় হিসেবে চিহ্নিত করছেন বিশেষজ্ঞরা। আশার কথা হলো, অতি শীঘ্রই বাণিজ্যিকভাবে সাশ্রয়ী মূল্যের ব্যাটারি বাজারে আসবে। তাছাড়া, সম্প্রতি এই খাতে নতুন নতুন পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। বিদ্যুৎ উৎপাদন সংস্থাগুলোর নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদনের দিকে মনোনিবেশ করা উচিত। এটি কিছুটা ব্যয়বহুল হলেও এখন থেকেই নতুন প্রযুক্তির হাতেখড়ি দেওয়া এখন জরুরি হয়ে পড়েছে। এতে জ্বালানি সাশ্রয় করে বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় রোধ করা যাবে। সর্বোপরি, সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে আমাদের প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করে সাশ্রয়ী টেকসই জ্বালানি ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব বলে আমার ধারণা।