নবাব সিরাজউদ্দৌলা (১৭২৭–১৭৫৭)। বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার শেষ স্বাধীন নবাব। ১৭২৭ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর মুর্শিদাবাদে সিরাজউদ্দৌলার ২৩ বছর বয়সে নানা নবাব আলীবর্দী খান বাংলার নবাবের দায়িত্ব দেন তাকে। কিন্তু ১৪ মাসের শাসনামলে ইতিহাসের কুখ্যাত চরিত্র মীরজাফর ও খালা ঘসেটি বেগমের বিশ্বাস ঘাতকতায় পরাজিত হন পলাশী যুদ্ধে। সিরাজের শিক্ষাজীবন কেটেছে তাঁর পিতামহের গৃহে। করম আলীর ‘মুজাফ্ফর নামা’ অনুসারে নওয়াব আলীবর্দী খান শাসনকার্য পরিচালনার কলাকৌশল এবং একজন যুবরাজের জন্য তাঁকে পারদর্শী করে তুলতে চেষ্টা করেন। সিরাজকে ঢাকায় নৌ–বাহিনীর দায়িত্ব প্রদান করা হয়, আর তাঁর ছোট ভাই ইকরামউদ্দৌলা ছিলেন সামরিক বাহিনীর দায়িত্বে। ১৭৪৬ সালে মারাঠাদের বিরুদ্ধে অভিযানে কিশোর সিরাজকে আলীবর্দী তাঁর সঙ্গে নেন। ১৭৫২ সালের মে মাসে আলীবর্দী খান মাত্র ১৭ বছর বয়সে সিরাজউদ্দৌলাকে তাঁর উত্তরাধিকারী হিসেবে ঘোষণা করেন। এ সময় বাংলার ইউরোপীয় কোম্পানিগুলিও তাঁকে অভিনন্দন জানায়। আলীবর্দী খান ১৭৫৬ সালের ১০ এপ্রিল ৮০ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। নানার ইন্তেকালের পরই বাংলা–বিহার–উড়িষ্যার শাসনভার গ্রহণ করেন তরুণ নবাব সিরাজউদ্দৌলা। ইতিপূর্বে আলিবর্দী খান সিরাজউদ্দৌলা বালক বয়সেই পাটনার শাসনকর্তা নিযুক্ত করেছিলেন। তার বয়স অল্প ছিল বলে রাজা জানকীরামকে রাজপ্রতিনিধি নিযুক্ত করা হয়। তবে তাকে সিংহাসনের উত্তরাধিকারী মনোনয়ন করার ঘটনা তার আত্মীয়বর্গের অনেকেই মেনে নিতে পারেনি। অনেকেই তার বিরোধিতা শুরু করেন। এদের মধ্যে ছিলেন আলিবর্দি খাঁর বড় মেয়ে ঘসেটি বেগম এবং তার স্বামী নোয়াজেশ মোহাম্মদ। খালা ঘষেটি বেগমের কূটচালে তরুণ নবাবের বিরুদ্ধে চক্রান্তের জাল বিছানো ছিল চারদিকে। ১৪ মাস ১৪ দিনের নবাবীকালে সিরাজউদ্দৌলা নিশ্চিন্তে বিশ্রাম নেয়ার সময় পর্যন্ত পাননি। চক্রান্তে হাবুডুবু খেলেও তরুণ নবাব সিরাজ পুর্নিয়া জেলা থেকে কলিকাতা হয়ে মুর্শিদাবাদ পর্যন্ত হাজার হাজার কিলোমিটার পথ ঘোড়া ছুটিয়েছেন। মসনদ ঠিক রাখতে ৫টি যুদ্ধে অংশ নিতে হয়েছে। ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর যুদ্ধে পরাজিত হয়েছেন বাংলার শেষ নবাব সিরাজউদ্দৌলা। পলাশির যুদ্ধে পরাজয় অতঃপর গ্রেফতারের পর ১৭৫৭ সালের ৩ জুলাই মীর জাফরের পুত্র মীর সাদিক আলী খান মীরনের নির্দেশে মোহাম্মদী বেগ কারাগারেই সিরাজউদ্দৌলাকে নির্মমভাবে হত্যা করেন। অস্তমিত হয় বাংলার সূর্য।