প্রতিষ্ঠার পর থেকে দেশি–বিদেশি পর্যটক–দর্শনার্থীদের কাছে বরাবরের মতোই বেশ আকর্ষণের ছিল কক্সবাজারের ডুলাহাজারাস্থ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক। ২০০১ সালের জানুয়ারিতে প্রতিষ্ঠিত এই পার্কটিকে নতুন রূপে সাজানো হচ্ছে। পার্কটিকে চূড়ান্ত মাস্টারপ্ল্যানের আওতায় নিয়ে প্রথম পর্যায়ে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু করা হয়েছে। প্রকৃত সাফারিতে রূপান্তরের লক্ষ্যে পার্কটিকে নতুন রূপ দিচ্ছে সরকার।
সাফারি পার্কের প্রকল্প পরিচালক এবং চট্টগ্রাম বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চল চট্টগ্রামের বিভাগীয় বনকর্মকর্তা (ডিএফও) মো. রফিকুল ইসলাম চৌধুরী আজাদীকে বলেন, দেশের প্রথম প্রতিষ্ঠিত বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কটি প্রকৃত সাফারি পার্কে রূপান্তর হওয়া এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। কারণ পার্কটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে অদ্যাবদি পার্কের বন্যপ্রাণীগুলো খাঁচায় বন্দি অবস্থায় রয়েছে। তবে সেই বন্দিত্ব অবস্থা ঘুঁচতে চলেছে পার্কের বন্যপ্রাণীদের। বিশেষ করে হিংস্র প্রজাতির বন্যপ্রাণীগুলো আগামীতে পার্কের নির্দিষ্ট বেস্টনির বিশাল এলাকাজুড়ে বিচরণরত থাকবে। বিপরীতে পার্কে আগত পর্যটক–দর্শনার্থীরা খাঁচায় বন্দি অবস্থায় হিংস্র বন্যপ্রাণীগুলোর বিচরণ দেখতে পারবে। এজন্য প্রয়োজনীয় সকল কার্যক্রম চলমান রয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানায়, পার্কটি দেশি–বিদেশি পর্যটক–দর্শনার্থীর কাছে অতীতের চেয়ে আরো বেশি আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে। সপ্তাহের প্রতি মঙ্গলবার পার্কে ভ্রমণ বন্ধ থাকে। বাকী ছয়দিন সমান হারে পর্যটক–দর্শনার্থীর আগমণ ঘটে।
কোরবানির ঈদে ব্যাপক সংখ্যক দর্শনার্থীর আগমণ ঘটেছে পার্কে। একটানা ছুটিতে ঈদের দিন থেকে পাঁচদিন পর্যন্ত প্রায় ৩০ হাজার দর্শনার্থীর আগমণ ঘটেছে।
সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক মো. মাজহারুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, এমনিতে পার্ক সাজানো–গোছানো থাকে। তবে প্রতি ঈদে পুরো পার্ককে আরো বর্ণিল রূপ দেওয়া হয়। মোড়ে মোড়ে মোতায়েন করা হয় পার্কের নিজস্ব নিরাপত্তা কর্মীসহ পার্কের কর্মচারীদেরও। ঈদ উপলক্ষে পার্কে আগত পর্যটক–দর্শনার্থীরা আপন মনে পার্কের দৃষ্টিনন্দন ও নয়নাভিরাম দৃশ্য অবলোকন করতে পারেন। পরিবার সদস্যদের সঙ্গে শিশুরাও ব্যাপক আনন্দ উপভোগ করে পার্ক ভ্রমণের সময়। এই সময়ের মধ্যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
সরেজমিন পার্ক এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আগত দর্শনার্থী ও পর্যটকেরা পার্কে থাকা হাতি, বাঘ, সিংহ, বানর, লাম চিতা, হনুমান, উল্লুক, কালো শিয়াল, জলহস্তি, চিত্রা হরিণ, মায়া হরিণ, প্যারা হরিণ, মিঠা পানির কুমির, মঁয়ূর, বনমোরগ, বন্য শুকর, তারকা কচ্ছপসহ বিভিন্ন প্রজাতির পশু–পাখি ও অসংখ্য বন্যপ্রাণির বেস্টনি ঘুরে ঘুরে দেখেন। আবার অনেক দর্শনার্থীকে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত মনের আনন্দে ঘুরে–বেড়ানোর পাশাপাশি গগণচুম্বি মাদার ট্রির (গর্জন) ছায়াতলের সুশীতল ছায়ায় বসে আড্ডা দিতে দেখা যায়।
পার্কের নয়নাভিরাম পরিবেশ দেখে বেশ মুগ্ধ পর্যটক–দর্শনার্থীরা। তাদেরই কয়েকজন দৈনিক আজাদীকে জানান, পার্কে এসে তারা এবারের ঈদে বেশ আনন্দ উপভোগ করেছেন নবনির্মিত প্রকৃতি দর্শন টাওয়ারে উঠে। এক পর্যটক বলেন, এই টাওয়ারে যে একবার উঠবেন সহজে আর নামতে চাইবেন না। কারণ ৬০ ফুট উঁচু এই টাওয়ারে উঠে চারিদিকের প্রকৃতি দর্শনের পাশাপাশি আফ্রিকান প্রজাতির জেব্রা এবং ওয়াইল্ড বিস্টের বিচরণ বেশ চোখ ও মন জুড়ানো। টাওয়ারটি এখন বেশ আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে পার্কে।