বছর ঘুরে আবারও আমাদের দ্বারে সমাগত নতুন বছর। পুরাতনকে পেছনে ফেলে নতুনকে স্বাগত জানানোর উৎসবকেই নববর্ষ হিসেবে পালন করা হয় সারা বিশ্বে। নতুনের প্রতি সব সময়ই মানুষের থাকে বিশেষ আগ্রহ ও উদ্দীপনা। নতুনের মধ্যে সব সময়ই নিহিত থাকে অমিত সম্ভাবনা। সেই সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপায়ণ করার সুযোগ করে দিতে আসে নতুন বছর। একটি জাতির সংস্কৃতি সেই জাতির নিজস্ব ইতিহাস, ঐতিহ্য, বিশ্বাস, আচার–অনুষ্ঠান, ধ্যান–ধারণা ইত্যাদি সামগ্রিক পরিচয় স্পষ্টভাবে ধারণ করে রাখে এবং তা বিশ্ব দরবারে সেই জাতির আত্মপরিচয়কে উঁচুতে তুলে ধরার কাজটিই করে থাকে। মূলত, সংস্কৃতি হচ্ছে একটি জাতির দর্পণ আর সংস্কৃতির বহুবিধ উপাদানের মধ্যে নববর্ষও অন্যতম একটি।
দেশ, জাতি ও সংস্কৃতিভেদে প্রত্যেকের আলাদা বর্ষপঞ্জি রয়েছে। তবে একমাত্র গ্রেগরিয়ান বা ইংরেজি ক্যালেন্ডার মেনেই চলে বিশ্ববাসীর সব হিসাব–নিকাশ ও দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড। বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় সব দেশে উৎসবের আমেজে সাড়ম্বরে ১ জানুয়ারি নববর্ষ হিসেবে পালিত হয়ে থাকে। তবে বহুকাল থেকেই পৃথিবীর কিছু জাতি যেমন মুসলিম, পারসিয়ান, চীনা, ইহুদি প্রভৃতির মধ্যে নিজ নিজ ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নববর্ষ পালন করতেও দেখা যায়। মানুষ আদিকাল থেকেই কোনো না কোনোভাবে দিনক্ষণ, মাস–বছরের হিসাব রাখতে প্রয়াসী হয়েছে চাঁদ দেখে, নক্ষত্র দেখে, সূর্য দেখে, রাত–দিনের আগমন–নির্গমন অবলোকন করে, ঋতু পরিবর্তনের ধারাবাহিকতা পর্যবেক্ষণ করে। সাধারণ কোনো বিশেষ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দিন গণনা, মাস গণনা, বছর গণনার রীতি কালক্রমে চালু হয়েছে। তিথি, নক্ষত্র বিশ্লেষণ করার রীতিও আবিষ্কার হয়েছে, উদ্ভাবিত হয়েছে রাশিচক্র। চাঁদের হিসাব অনুযায়ী যে বছর গণনার রীতি চালু হয় তা চান্দ্র সাল নামে পরিচিতি লাভ করে। এই চান্দ্র সালে বছর হয় কমবেশি ৩৫৪ দিনে আর সূর্যের হিসাবে যে বছর গণনার রীতি চালু হয় তা সৌর সাল নামে পরিচিত হয়। সৌর সালের বছর হয় সাধারণত ৩৬৫ দিনে। যেহেতু প্রাচীন রোমানদের হাতেই এই ক্যালেন্ডারের সৃষ্টি আর তাই ইংরেজি বছরের বারোটি মাসের বেশির ভাগই নামকরণ করা হয়েছে রোমান দেবতা বা সম্রাটের নামানুসারে। যেমন– জানুয়ারি রোমান দেবতা জানো‘স–এর নামানুসারে, ফেব্রুয়ারি ল্যাটিন শব্দ ফেব্রুয়া থেকে, মার্চ রোমানদের যুদ্ধ দেবতা মার্স থেকে, এপ্রিল ল্যাটিন শব্দ এপ্রিলিস থেকে, মে বসন্তের দেবী মায়া‘স–এর নামানুসারে, জুন বিবাহ এবং নারী কল্যাণের দেবী জুনো‘র নামানুসারে, জুলাই রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজারের নামানুসারে, আগস্ট জুলিয়াস সিজারের পুত্র অগাস্টাস সিজারের নামানুসারে, সেপ্টেম্বর ল্যাটিন সপ্তম সংখ্যা সেপ্টেম–এর নামানুসারে, অক্টোবর ল্যাটিন অষ্টম সংখ্যা অক্টো–এর নামানুসারে, নভেম্বর ল্যাটিন নবম সংখ্যা নভেম–এর নামানুসারে এবং ডিসেম্বর ল্যাটিন দশম সংখ্যা ডিসেম–এর নামানুসারে নামকরণ করা হয়েছে।
আগেকার দিনে নিউ ইয়ারের আগের রাতকে বলা হতো নিউ ইয়ার ইভ। বর্তমানে যা থার্টি ফার্স্ট নাইট হিসেবে প্রচলিত।