নবজাতক নিয়ে তাদের দিন কাটছে ফুটপাতে

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ৩ জানুয়ারি, ২০২৫ at ৬:২১ পূর্বাহ্ণ

ফুটপাতে সন্তানের জন্ম দেয়ার পর সেই ফুটপাতেই খোলা আকাশের নিচে রাত কাটছে নবজাতক এবং তার পরিবারের। তীব্র শীতের মাঝে একটু উমের জন্য রাতভর তাদের হাহাকার চলে। নগরীর হাজী মুহম্মদ মহসীন কলেজের মাঠের পাশের ফুটপাতেই কাটছে তাদের এসব দিনরাত্রি। পাঁচ বছর আগে প্রেম করে বিয়ে করায় বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিল সাবেকুন্নাহারকে। সেই থেকে স্বামীর সাথেই তার ভাসমান জীবন। আগেও একটি সন্তান হয়েছিল, সেটি মারা যায়। এবারও তীব্র শীতের মাঝে খোলা আকাশের নিচে জন্ম নেয়া সন্তানটিকে নিয়েও তাই সংশয়ের কমতি নেই। স্থানীয় একজন স্কুল শিক্ষিকার সহায়তায় বাচ্চার প্রয়োজনীয় কাঁথা এবং মশারি পেলেও জুটেনি মাথার উপর একটু ছাদ, চালা বা ছায়া।

গত বুধবার সকাল ৬টার দিকে সাবেকুন্নাহারের ছোটভাই মোহাম্মদ রমিজ চিৎকার করে কাঁদছিল। এই সময় স্থানীয় বাসিন্দা এবং আইডিয়াল স্কুলের শিক্ষিকা ফাতেমা বেগম রমিজের কান্নার কারণ জানতে চাইলে বছর দশেক বয়সী ছেলেটি জানায়, তার বোনের বাচ্চা হবে, ফুটপাতে আমার বোন খুব কষ্ট করছে। ফাতেমা বেগম অপর একজনকে সাথে নিয়ে দ্রুত ফুটপাতে গিয়ে দেখেন যে, বাচ্চা অর্ধেক বের হয়ে গেছে। প্রসব বেদনায় মা তীব্র স্বরে কান্না করছে। তারা দ্রুত দাই যোগাড় করে আনেন। শিক্ষিকা ফাতেমা বেগম বাসা থেকে বাচ্চার প্রয়োজনীয় কিছু জিনিসপত্র নেন। কিছু কেনাকাটাও করেন। সবকিছু নিয়ে সদ্য প্রসূতির কাছে দিয়ে আসেন। ফাতেমা বেগমের দেয়া মশারি টাঙিয়ে ফুটপাতের পাশেই দেয়া হয় ঘরের আদল। সেখানেই সদ্য জন্ম নেয়া শিশু মোহাম্মদ হোসেন, ছোট ভাই রমিজ এবং স্বামী কাউসারকে নিয়ে সাবেকুন্নাহারের দিনরাত্রি কাটছে। তাদের গ্রামের বাড়ি চকরিয়া বলে জানান। সাবেকুন্নাহার জানান, পাঁচ বছর আগে প্রেম করে নিজের পছন্দে বিয়ে করায় বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। স্বামী কাউসার কখনো টেঙি চালিয়ে কখনো লেবারের কাজ করে তাদের ভাসমান সংসার চালাচ্ছেন। কিন্তু বাথরুমে পড়ে পায়ের রগ ছিঁড়ে ফেলায় কাউসার এখন কাজ করতে অক্ষম। তাই তাদের সংসারে সাত রাজ্যের কষ্ট নেমে এসেছে। এই দম্পতির আগেও একটি সন্তান হয়েছিল। এবার দ্বিতীয় সন্তানটিকে সব আপদ থেকে আগলে রেখে ফুটপাতে হলেও বড় করতে চায় কাউসারসাবেকুন্নাহার দম্পতি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাড়ছে শীত, কষ্টে ভাসমান মানুষ
পরবর্তী নিবন্ধবিদ্যুৎ জ্বালানির সব চুক্তি প্রকাশ চায় বিএনপি