ধরিত্রীর চারের তিন ভাগই জল সবারই জানা। জোয়ার–ভাটা, জলোচ্ছ্বাস–বন্যা শান্ত–ভয়ংকর কতই না বাহারী রূপ। শত্রু বিনা বন্ধুত্বের নাম পৃথিবীর সকল প্রাণী ও বৃক্ষের জীবন। আর তার প্রাণ–বুকে চলা ছোট্ট বাহনের বৈঠা হাতে বাহক। মানব সভ্যতার গোড়া থেকে যার অবদান নদী, সমুদ্র পারাপারে। পদবি ভিন্নতা ‘মাঝি–নাবিক’। জনপ্রিয়তা ‘মাঝি’তে রাজা–নবাব হতে আধুনিকে চির চেনা। গ্রামের সংখ্যা শহর তুলনায় অধিক। জন্ম–মৃত্যু, চিকিৎসা–শিক্ষা, মানবের সকল কাজে এপার থেকে ওপারে পৌছানোই ধর্ম। ভোরে ভাটিয়ালি গানের সুরে নদীর তরঙ্গ তাল সন্ধ্যায় থামে। দুর্যোগ–জলদস্যু ভয় ত্যাগে সারাদিন জীবন ঝুঁকি নিয়ে অল্প আয়ে উপকার থেমে থাকে না। শরীর অবহেলায় অপরকে বাঁচাতে এগিয়ে এলেও তার নদী পাড়ের অসচ্ছল পরিবারে অনাহার, বিনা শিক্ষা ও চিকিৎসায় প্রিয়জন হারানো নিত্য নতুন সঙ্গী। তবুও থেমে নেই মায়ায় জড়ানো ছোট্ট বাহনের পেশার কাজ। আধুনিকে যান্ত্রিক যান ও বাহারী ব্রিজে তাদের চাহিদা ক্রমেই কমেছে। যা বর্তমান বিংশ শতাব্দীতে বাহন ও বাহক বিলুপ্ত বটে। প্রকৃতির নিয়ম বড়ই অদ্ভুত, স্রষ্টার সৃষ্টির বিলুপ্ত ক্ষতির কারণ। আজ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ভয়াবহ বন্যার কবলে নাজেহাল। ক্ষতিতে প্রাণ হানি অসহায়ের সংখ্যা বাড়ছে। কিবা লাভ বন্যায় বড় যান্ত্রিক যান ও ব্রিজে। মনে করিয়ে দিচ্ছে আজ বিলুপ্ত সেই বাহককে। ফিরে এসো বৈঠা হাতে, মানব জীবন খুঁজছে তোমায় জীবন বাঁচাতে। মানুষ ভুলে গেলেও প্রকৃতি তোমায় কখনো ভুলবে না।