বান্দরবানে রোয়াংছড়ি উপজেলায় সাঙ্গু নদীর পাড়ে ৪ জনের লাশ পাওয়া গেছে। এরা গোলাগুলিতে নিহত হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে নিহতদের পরিচয় জানা যায়নি। কাদের গুলিতে তারা নিহত হয়েছে সে বিষয়েও ধারণা দিতে পারেনি পুলিশ।
স্থানীয়দের ধারণা, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) সশস্ত্র সদস্যদের ব্রাশফায়ারে মগ বাহিনীর ৪ সশস্ত্র সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল রোববার দুপুরে সাঙ্গু নদীর কেচালং মৌজা এলাকা থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
স্থানীয়রা জানায়, রোয়াংছড়ি তারাছায় শনিবার জেএসএসের চাঁদা কালেক্টর উনুমং রয়েলকে গুলি করে হত্যার পর লাশ বস্তায় করে ইঞ্জিন বোটে নেয়ার পথে রোয়াংছড়ি উপজেলার তারাছা ইউনিয়নের কেচালং মৌজা ঘেরাও রুমা সীমান্তবর্তী এলাকায় মগ লিবারেশন পার্টির (এমএলপি) সশস্ত্র সদস্যদের ওপর জেএসএস সদস্যরা ব্রাশফায়ার করেন। এতে ঘটনাস্থলে মগ বাহিনীর ৪ সদস্যের মৃত্যু হয়। নিহতদের লাশ কেচালং মৌজার ঘেরাও নদীর ঘাটে পড়েছিল। নিহতরা সকলে মগ লিবারেশন পার্টির জলপাই রঙের পোশাক পরিহিত অবস্থায় ছিল। তবে তাদের পরিচয় পাওয়া যায়নি। খবর পেয়ে পুলিশ, সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সাঙ্গু নদী পথে ইঞ্জিন বোটে ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করেছে। এছাড়া সন্ত্রাসীদের ব্যবহৃত গুলির খোসা, ম্যাগজিন, পোশাক, ব্যাগ ও ওয়াকিটকি সেট উদ্ধার করা হয়। এদিকে চারজনের মৃত্যুর ঘটনায় তারাছা ঘেরাও, কানন বম পাড়াসহ আশপাশের এলাকাগুলোতে পাহাড়িদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় মংইউ খুমি পাড়ার বাসিন্দার লুকিং খুমি বলেন, শনিবার বিকালের দিকে কেচালং মৌজার ঘেরাও-রুমা সীমান্তবর্তী নদীর ঘাটে গোলাগুলির শব্দ শোনা গিয়েছিল। গুলির শব্দে পাড়াবাসী আতঙ্কে পালিয়ে পাহাড়ে চলে যায়। সকালে নদীর পাড়ে লাশগুলো পড়ে থাকতে দেখা যায়।
স্থানীয় তারাছা ইউনিয়নের সদস্য সাইচ থুই বলেন, গুলির শব্দ শুনেছি। কারা কাদের গুলি করেছিল সেটি বুঝতে পারিনি। ভয়ে গ্রামবাসী এদিক- ওদিক পালিয়ে যায়। কিন্তু রাতে সবাই বাড়ি ফিরলেও তিনজন নারী পাহাড়ে লুকিয়েছিল। তাদের খুঁজতে বেরিয়ে রোববার সকালে নদীর পাড়ে ৪ জনের লাশ পাওয়া যায়। তাদের মধ্যে একজনের লাশ মাটি চাপা দেয়া অবস্থায় ছিল।
স্থানীয় বনকর্মী চচি অং মারমা বলেন, লাশগুলো দেখতে পেয়ে পাড়াবাসী পুলিশকে খবর দেয়। নিহতদের সবার গায়ে জলপাই রঙের পোশাক রয়েছে। নিহতরা কারা সেটি বলতে পারব না। তবে লাশগুলোর পাশাপাশি গুলির খোসাসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম পাওয়া গেছে।
বান্দরবানের পুলিশ সুপার জেরীন আখতার জানান, সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের ব্রাশফায়ারে সশস্ত্র আরেকটি গ্রুপের ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। গুলিবিদ্ধ ৪ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে হত্যাকাণ্ডের সাথে পাহাড়ের সশস্ত্র কোন গ্রুপ জড়িত বিষয়টি এখনো নিশ্চিত নই। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
বিডিনিউজ জানায়, গতকাল বেলা ১১টায় পুলিশ সুপার কার্যালয়ে বান্দরবানের সামপ্রতিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়োজন করে জেলা পুলিশ। এতে পুলিশ সুপার বলেন, শনিবার রাত ১০টার দিকে রুমা উপজেলার পাইন্দু ইউনিয়নে মংবাতং নামে এলাকায় দুই পক্ষের গোলাগুলির খবর পাই। কিন্তু রোববার সকালে খবর আসে রোয়াংছড়ি উপজেলার তারাছা ইউনিয়নে ঘেরাউ এলাকার সাঙ্গু নদীর পাশে চারজনের লাশ পাওয়া গেছে। দুই পক্ষের গোলাগুলিতে ওই চারজনের মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তিনি এই ঘটনাকে শনিবারের আরেকটি ঘটনার পাল্টা বলে ধারণা করছেন।
উনুমংকে গুলি করে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার বলেন, উনুমং মারমা বা তার মরদেহ এখনও পাইনি। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। জীবিত অথবা মৃত তাকে খুঁজে পেলে ঘটনা পরিষ্কার হবে।
প্রেস ব্রিফিংকালে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) অশোক কুমার পাল, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল কুদ্দুস ফরাজী ও বান্দরবান সদর থানা ওসি রফিকুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
বিবিসি বাংলা জানায়, গত কয়েক মাসে পার্বত্য জেলাগুলোয় একাধিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। গত মাসের শুরুতে বান্দরবানে গোলাগুলির ঘটনায় এক সেনা সদস্যসহ চারজন নিহত হয়েছেন বলে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর জানিয়েছে। ২০২০ সালের জুলাই মাসে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে বান্দরবানের বাঘমারায় ৬ জন নিহত হয়েছিল।