নদীর দূষণরোধে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে

| রবিবার , ২০ মার্চ, ২০২২ at ৮:২১ পূর্বাহ্ণ

গত বুধবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চট্টগ্রাম ওয়াসার শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার-২ প্রকল্পের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামের উন্নয়ন বিষয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন। তিনি চট্টগ্রামে নদীর তীরবর্তী শিল্প কারখানাগুলোকে নিজস্ব উদ্যোগে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার নির্দেশ দিয়েছেন। বলেছেন, কর্ণফুলী, হালদা, সাঙ্গুসহ কোনো নদী যেন দূষিত না হয়। বিশেষ করে কর্ণফুলী যেন কোনো অবস্থাতেই দূষিত না হয়। সে ব্যবস্থা অবশ্যই রাখতে হবে। সাথে অন্য নদীগুলোরও সুরক্ষা দিতে হবে। নদী দূষণ ঠেকাতে কারখানার বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন অনেক শিল্প কল-কারখানা হচ্ছে। প্রত্যেক শিল্প কারখানায় অবশ্যই বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সঠিক ব্যবস্থা নিতে হবে।
চট্টগ্রামকে বাংলাদেশের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ নগরী হিসেবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সত্যিকার অর্থে আমাদের বাণিজ্য নগরী হলো চট্টগ্রাম। চট্টগ্রামের উন্নয়ন হলে বাংলাদেশের উন্নয়ন হবে। এতে কোনো সন্দেহ নেই। আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানি-রফতানি সর্বক্ষেত্রে চট্টগ্রামের বিরাট অবদান রয়েছে। তাই আমি চট্টগ্রামকে সবসময় খুব গুরুত্ব দিয়ে থাকি। চট্টগ্রামে অনেক অফিসের প্রধান কার্যালয় ছিল। ’৭৫ এর পরের সরকারগুলো সেসব ঢাকায় নিয়ে আসে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর চট্টগ্রাম আবার প্রাণ ফিরে পায়। চট্টগ্রামে প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর আওয়ামী লীগ সরকার করেছে।
প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে পরিষ্কার করে বলে দিলেও চট্টগ্রামের উন্নয়নের ব্যাপারে খুব একটা অগ্রসর তৎপরতা আমাদের চোখে পড়ে না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর চট্টগ্রামকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে বলে প্রধানমন্ত্রী যে সব বক্তব্য উপস্থাপন করলেন, তা পুরোপুরি সত্য হলেও কোথাও যেন প্রতিবন্ধকতা বিদ্যমান। আমরা লক্ষ্য করছি, ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল লাইন নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। মীরসরাই বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর, বাঁশখালী-আনোয়ারা ও মহেশখালী ও কক্সবাজারে শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে। মীরসরাইয়ে দেশের বৃহৎ শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে। শুধু মীরসরাই শিল্পনগরী নয় চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ নির্মাণের পরিকল্পনা আছে। ইতোমধ্যে কিছু কাজও শুরু হয়েছে। এতে সুরক্ষাও হবে পাশাপাশি পর্যটন হবে বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন সেই ভাষণে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, চট্টগ্রাম মহানগরীর পাশাপাশি কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ প্রান্তে কাফকো, সিইউএফএল, কোরিয়ান ইপিজেড, আনোয়ারায় চায়না ইকোনমিক জোন এবং বিভিন্ন আবাসিক এলাকার পানির চাহিদা মেটাতে দৈনিক ৬ কোটি লিটার সরবরাহের জন্য প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। চট্টগ্রামে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার জন্য প্রকল্প নেয়ার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রামে ড্রেনেজ ও স্যানিটেশন মাস্টারপ্ল্যান করেছি। মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী চট্টগ্রামে পয়ঃনিষ্কাশনের প্রথম পর্যায় বাস্তবায়ন হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে আরও পাঁচটি পয়ঃবর্জ্য শোধনাগার হবে।
এতো উন্নয়নের পরেও চট্টগ্রামবাসীর মনে হাহাকার চলে। মনে হচ্ছে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হচ্ছে না। কোথাও যেন সমন্বয়হীনতা কাজ করছে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালিত না হওয়ায় চট্টগ্রাম শহর অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে। যে যেভাবে পারছেন নিজেদের মতো উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। এর নেতিবাচক ফল ভোগ করতে হচ্ছে আমাদের। এই অবস্থা থেকে বের হতে হলে সেবাধর্মী সব প্রতিষ্ঠানকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। সিটি করপোরেশন সমন্বয়ের কাজটি যাতে ভালোভাবে করতে পারে সেজন্য আইনগতভাবে ক্ষমতা দিতে হবে। বর্তমানে মেয়র সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করলেও কোনো সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান তা না মানলে সেক্ষেত্রে কী ব্যবস্থা নিতে হবে তা আইনে বলা নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামে কোটি কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ করছেন। কিন্তু এ প্রকল্প বাস্তবায়ন সুষ্ঠুভাবে করা হচ্ছে কিনা, তা নিয়ে দ্বিধায় রয়েছেন নগরবাসী। উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেওয়ার আগে সবার আগে জানতে হবে- চট্টগ্রামে কী ধরনের উন্নয়ন প্রয়োজন, কী ধরনের উন্নয়ন করা হলে চট্টগ্রামবাসী উপকৃত হবে। সব সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা না হলে তা কাঙ্ক্ষিত উপকারে আসবে না।
বর্তমানে নগরীর প্রায় ৭০ শতাংশ পানির চাহিদা সরবরাহ করছে ওয়াসা। কর্ণফুলী নদী থেকে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। তাই এ নদীকে যদি বাঁচানো না যায় তবে গভীর পানির সংকটে পড়বে নগরবাসী। কর্ণফুলীকে বাঁচানোর জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মানতে হবে। এ নদীর দূষণরোধে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধতিউনিসিয়ার জাতীয় দিবস