লোহাগাড়া উপজেলার বড়হাতিয়া ও সাতকানিয়া উপজেলার সোনাকানিয়া ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এলাকায় পাহাড়ি ছড়ায় বাঁধ দিয়ে বন বিভাগের আড়াই হাজার একর জায়গা দখল করে অবৈধভাবে লেক তৈরি করে মাছ চাষের ঘটনায় চট্টগ্রাম-১৫ সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভীর একান্ত সচিব (পিএস) ও চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ সদস্য (লোহাগাড়া) এরফানুল করিমসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে বন আইনের ২৬(১ক) ও ৩৩(১ক) ধারায় আদালতে পাঁচটি মামলা করছে বনবিভাগ।
তৎমধ্যে এরফানের অন্যতম সহযোগী হিসেবে পরিচিত নাসির উদ্দিন ও মঞ্জুর আহমদের নামও রয়েছে।
মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) বন বিভাগের কর্মকর্তারা বাদী হয়ে চট্টগ্রাম আদালতে এই বিষয়ে পাঁচটি অভিযোগ জমা দিয়েছেন। অভিযোগগুলোকে মামলা হিসেবে রুজু করা হয়েছে।
মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন দৈনিক আজাদীকে বলেন, সোনাকানিয়া ছড়ায় বাধ দিয়ে বনবিভাগের জায়গা দখল করে মাছ চাষের বিষয়ে বনবিভাগের পক্ষ থেকে পাঁচটি অভিযোগ আদালতে দেওয়া হয়েছে। সেগুলো মামলা হিসেবে রুজুর প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
বিভাগীয় বন কর্মকর্তার পক্ষে এসব মামলার বাদী হচ্ছেন চুনতি রেঞ্জ কর্মকর্তা, বড়হাতিয়া বিট কর্মকর্তা ও চুনতি রেঞ্জের কর্মকর্তাবৃন্দ। মামলায় সাবেক সংসদ সদস্য আবু রেজা নদভীর একান্ত সচিব (পিএস) এরফানুল করিমসহ ১৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার সীমান্ত এলাকায় বনবিভাগের আড়াই হাজার একর বন অবৈধ দখল করে ২০২১ সালের জানুয়ারিতে সোনাকানিয়া ছড়ায় অবৈধভাবে ২০০ ফুট দৈর্ঘ্য, ২০ ফুট প্রস্ত ও ১০০ ফুট উচ্চতার একটি বাঁধ দিয়ে সেখানে মৎস্য চাষ শুরু করেন স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য আবু রেজা নদভীর ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত মোহাম্মদ নাছির ও মনছুর আলম। এই বাঁধ দেওয়ার কারণে লোহাগাড়া ও সাতকানিয়ার অন্তত ৪ হাজার ২৫৫ একর জমির চাষাবাদ ব্যাহত হয়। কৃষকরা এই বাঁধ নির্মাণের শুরু থেকেই অভিযোগ করে এলেও প্রশাসন অবৈধ এই কর্মযজ্ঞের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তবে, বনবিভাগ এখন দাবী করছে, তদন্তের সত্যতা পাওয়ার পর আইনি প্রক্রিয়া শুরু করলে স্থানীয় সংসদ সদস্য প্রফেসর ড. আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীর হস্তক্ষেপের কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়।
তিন বছর আগে বাঁধ করা হলেও এত দিন ধরে তা অপসারণ করার কোনো ধরনের উদ্যোগই নেওয়া হয়নি। অনেকদিন পর গত (৩ ফেব্রুয়ারী) শনিবার এ বাঁধ কেটে দেওয়ার পদক্ষেপ নেয় বন বিভাগ। শনিবার বিকেলে বন বিভাগের চট্টগ্রাম সদরের সহকারী বন সংরক্ষক মারুফ হোসেন এবং চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক দেলোয়ার হোসেন নেতৃত্বে বনবিভাগের লোকজন বাঁধ কেটে দিয়ে উপরোক্ত বনভূমি উদ্ধারের প্রক্রিয়া শুরু করেন। বিষয়টি নিয়ে কৃষকেরা শুরু থেকেই সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করে এলেও প্রশাসন ব্যবস্থা নেয়নি। তবে কয়েকদিন আগে এ নিয়ে গণমাধ্যমে লেখালেখি হলে সোচ্চার হয় প্রশাসন। বাধটি কেঁটে বনভূমি উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এবার অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলার পথে হাঁটল বনবিভাগ।