স্বাগত ২০২৫। নতুন বছর সবসময় নিয়ে আসে নতুন বারতা। ঘোষণা করা হয় সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়। কোনো কিছুতেই পেছনে ফিরে যাবে না জীবন, যদিও আসে ছন্দপতন। এজন্য নববর্ষ নিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এক ভাষণে বলেছিলেন, ‘মানুষের নববর্ষ আরামের নববর্ষ নয়; সে এমন শান্তির নববর্ষ নয়; পাখির গান তার গান নয়, অরুণের আলো তার আলো নয়। তার নববর্ষ সংগ্রাম করে আপন অধিকার লাভ করে; আবরণের আবরণকে ছিন্ন বিদীর্ণ করে তবে তার অভ্যুদয় ঘটে।’ তাই প্রতিটি নতুন বর্ষে মানুষের নতুন করে আবির্ভাব ঘটে জীবনের পথে। সুন্দরের প্রত্যাশায় উদিত হয় নতুন সূর্য।
কুয়াশার চাদর ছিঁড়ে পূর্বাকাশে উঠেছে আজ নতুন সূর্য। আজ নতুন বছরের নতুন দিন। স্বর্ণরাঙা উজ্জ্বল ভোর চারদিকে ছড়িয়েছে স্বপ্নের সুষমা। নতুন আনন্দ নিয়ে এসেছে এ এক নতুন ভোর। প্রতিদিনের নিয়ম মেনে আজও উদিত হয়েছে এই সূর্য। তবে এটি উজ্জ্বল, কেননা সকলের কাছে এটি নিয়ে এসেছে নতুন সকাল। নতুন করে শুরুর দিন। অতীতের সব হিংসা–বিদ্বেষ পেছনে ফেলে, সৌহার্দ্য–সম্প্রীতির সম্মিলনের দিন।
প্রাপ্তি–অপ্রাপ্তির দোলাচলে কালের আবর্তে মহাকালের গর্ভে হারিয়ে গেল আরো একটি বছর। একেকটা বছর শেষ হয়ে এলে পাওয়া না–পাওয়ার একটা হিসাব–নিকাশ করতে আগ্রহ জাগে সবার মনেই। অতীতের ব্যর্থতাকে জয় করে একই সঙ্গে নতুন বছরের জন্য নতুন প্রত্যাশায় বুক বাঁধে। বিদায়ী ২০২৪ সালের সব অপ্রাপ্তি ও বেদনা ভুলে নতুন বছরের সেই প্রত্যাশা হোক শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতির জন্য। শুরু হোক ঐক্যবদ্ধভাবে সেই লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি।
আমাদের বিদায়ী বছর, মানে ২০২৪ সাল ছিল রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে একটি ঘটনাবহুল বছর। ব্যক্তি, জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে নানা চ্যালেঞ্জ ও উত্থান–পতনের মধ্য দিয়ে এগিয়ে গেছে বছরটি। আমাদের জাতীয় জীবনে ২০২৪ সালে একাধিক বড় অর্জন রয়েছে। ঘটে গেছে অভাবনীয় জুলাই–আগস্ট অভ্যুত্থান। বলা হয়ে থাকে, ‘স্বাধীনতার পর থেকে রাষ্ট্র পরিচালনায় যে দল বা জোট এসেছে, তারা কেউই জনগণের স্বার্থ বিবেচনায় নেয়নি। এমনকি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে পর্যন্ত এমনভাবে দলীয়করণ করা হয়েছে, যেখানে রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তা বা কর্মচারীরা জনগণের শাসক ও শোষকে পরিণত হয়েছেন। নতুন প্রজন্মের একটি বড় অংশ যাঁদের বয়স ত্রিশের নিচে, তাঁরা এখন পর্যন্ত জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিতে পারেননি। আওয়ামী লীগ প্রায় ১৬ বছর যাবৎ আইন করে, ভয় দেখিয়ে, কৌশলে দেশে অগণতান্ত্রিক এক পরিবারকেন্দ্রিক দুর্নীতিগ্রস্ত জবাবদিহিহীন দখলদারত্বের ধারাকে পাকাপোক্ত করেছে, যা সাধারণ মানুষ এবং নতুন প্রজন্মকে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ করেছে। যার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে জুলাই–আগস্ট ছাত্র–শ্রমিক–জনতার গণ–অভ্যুত্থানে।’
বিশেষজ্ঞরা বলেন, আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বৈষম্যবিরোধী চেতনার উন্মেষ ঘটেছে। আন্দোলনের সময় ও আন্দোলনের পর কয়েক লাখ গ্রাফিতি বা দেয়ালচিত্র এঁকেছে শিক্ষার্থীরা। প্রতিটি দেয়ালচিত্রে ফুটে উঠেছে গণ–অভ্যুত্থানের গল্প, নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন, ধর্মীয় ও জাতিগত সহাবস্থানের আকাঙ্ক্ষা। স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে এ বিজয় সংহত করতে হবে।
পৃথিবীর প্রত্যেক জাতির নিজস্ব ক্যালেন্ডার বর্ষ রয়েছে। বর্ষ পরিক্রমায় একটি বছর শেষ হয়ে নতুন বছরের আগমন ঘটে নতুন সম্ভাবনা আর নবদিগন্তের সূচনা নিয়ে। বছরের শেষ সূর্যোদয়ে মানুষের একান্ত প্রার্থনা থাকে আগামী প্রজন্ম যেন সুখের বারতা বয়ে আনে। আশা–নিরাশার দোলাচলে মানুষ এগিয়ে চলে স্বপ্নকে পুঁজি করে। নতুন বছরে নতুন স্বপ্নকে ধারণ করে সামনে এগিয়ে চলার প্রয়াস প্রত্যেকেরই। বছর শেষে অপ্রাপ্তিগুলোর জন্য ব্যথিত না হয়ে বরং নতুন বছর উদযাপনের আয়োজনে সবাই ব্যস্ত সময় পার করে।
নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বছরের শেষ দিনটিতে জাতি–ধর্ম নির্বিশেষে সবাই একসঙ্গে নতুন বছরকে বরণের জন্য উৎসবে মেতে ওঠে। প্রত্যেক জাতি বা রাষ্ট্রের নিজস্ব নববর্ষ আয়োজনের রেওয়াজ রয়েছে। প্রত্যেক জাতির নিজস্ব বর্ষপঞ্জিকা অনুযায়ী নববর্ষ আয়োজন তাদের রাষ্ট্রীয় গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। কিন্তু ব্যতিক্রম হচ্ছে খ্রিস্টীয় দিন গণনা। পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই খ্রিস্টীয় ক্যালেন্ডার অনুযায়ী বর্ষ গণনার প্রচলন রয়েছে। তাই খ্রিষ্টীয় নববর্ষ সারা পৃথিবীতে সাড়ম্বরে উদযাপিত হয়।
সব কুসংস্কার আর অপশক্তির বাধা জয় করে নতুন স্বপ্ন বুকে নিয়ে বাংলাদেশের মানুষ এগিয়ে যাবে– এটাই আজ সবার প্রত্যাশা। রাজনৈতিক, সামাজিক, অথনৈতিক, শিক্ষা, সংস্কৃতিসহ সব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে– এমন চাওয়া প্রতিটি মানুষের।