চট্টগ্রামের রাউজানে মোগল আমলের যেসব ঐতিহাসিক স্থাপনা রয়েছে তার মধ্যে একটি সাহেব বিবি জামে মসজিদ। প্রায় সাড়ে পাঁচশত বছরের পুরনো এই মসজিদটির অবস্থান রাউজান পৌরসভার নয় নম্বর ওয়ার্ডের হরিষখান পাড়ায়।
যারা ইতিহাস চর্চা করেন তাদের মতে মোগল আমলে আমির মোহাম্মদ চৌধুরী নামের এক জমিদার তার স্ত্রী সাহেব বিবির নামে মসজিদটি নির্মাণ করছিলেন। এই মসজিদের মুসল্লিদের ব্যবহারের জন্য পাশেই খনন করে দিয়েছিলেন বিশাল পুকুর। ইতিহাস চর্চাকারীদের মতে সাহেব বিবি ছিলেন চট্টগ্রামের লোক কাহিনী মালকা বানু–মনুমিয়া খ্যাত মালকা বানুর মা। স্বামী আমির মোহাম্মদ চৌধুরী মসজিদটি স্ত্রীর নামে নিজ গ্রামে নির্মাণ করে দিয়েছিলেন। সেকালে নির্মিত অন্যান্য পাকা স্থাপনার মত এটি নির্মিত হয়েছিল চুন–সুরকির গাঁথুনিতে।
ওই এলাকার জনসাধারণের সাথে কথা বলে জানা যায় শতাব্দী পর শতাব্দী ধরে থাকা এই ঐতিহাসিক স্থাপনাটি এক সময় বিবর্ণ রূপ ধারণ করেছিল। এটিকে রক্ষায় সংষ্কার করা হয়েছে। গত ১২ মার্চ মসজিদটি সরেজমিনে পরিদর্শনে দেখা যায়, ঐতিহাসিক এই মসজিদটির সংস্কার কাজ করা হয়েছে আগের মূল অবকাঠামো ঠিক রেখে। তবে সম্মুখভাগে সৌন্দর্য্য বর্ধনে লাগানো হয়েছে তিনটি বড় দরজা। ভেতরে–বাইরে লাগানো হয়েছে রঙিন টাইলস। সামনের দেয়ালের মধ্যখানে সাঁটানো একটি বোর্ডে বড় অক্ষরে সাহেব বিবি জামে মসজিদ লিখে নিচে লেখা হয়েছে বিগত ১৯.১১.১৮৫৯ সালে ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক প্রথম মতোয়াল্লী নিযুক্ত করেন শেখ ছাদাত অলীকে। এরপর তুলে ধরা হয় উত্তারাধিকার মূলে এই দায়িত্ব পাওয়া তোরাফ আলী চৌধুরী, মিঞা ছিদ্দিক আহমদ চৌধুরী, মোহাম্মদ নুরুল আলম চৌধুরী, সর্বশেষ মোতোয়াল্লীর নাম রয়েছে যোবায়েদ হুমায়ুন চৌধুরীর বাবুর নাম।
মসজিদের সামনের মাঠটিকে বর্তমানে দুইশ’ মানুষ একসাথে নামাজ পড়ার উপযোগী করে ব্যবহার করা হচ্ছে ঈদগাহ হিসাবে। দেখা গেছে, মসজিদ আঙিনায় প্রবেশ পথে সেকালের নির্মিত (উত্তর পূর্ব পাশে) দুটি বিশেষ নক্সায় তোরণ এখনো অক্ষত রয়েছে। পাঁচ ফুট উচ্চতায় তোরণ দুটির ভেতর দিয়ে মসজিদের আসা যাওয়া করতে হয় মাথা নিচু করে। একই উচ্চতায় আছে মসজিদে প্রবেশের মূল দরজাটিও। ছোট পরিসরের এই ঐতিহাসিক মসজিদের ভেতর আনুমানিক ২০ থেকে ২৫ জন মুসল্লী একসাথে নামাজ পড়ার ধারণ ক্ষমতা রয়েছে। উপরের দিকে ছাদের বেশির ভাগ অংশজুড়ে আছে মসজিদটির গম্বুজ। বাইরের উত্তর পশ্চিম কর্ণারে রয়েছে উঁচু একটি মিনার। ছাদের চারপাশের কার্ণিশে আছে ছয়টি ছোট মিনার। এখন মসজিদটির দেয়াল মিনার, গম্বুজ সবকিছুতে লাগানো হয়েছে নীল রঙের রঙিন টাইলস। মুসল্লীদর সুবিধার্থে নতুন করে স্থাপন করা হয়েছে বাইরে একটি অজুখানা। দক্ষিণ পাশজুড়ে থাকা কবরস্থানে সৃষ্ট বাগানের মধ্যে দেখা গেছে পাকা আস্তরণে ঢাকা একটি কবর। এলাকার প্রবীণ মুরুব্বি আজগর আলী চৌধুরী বলেছেন, ওই কবরটি জমিদার পত্নী সাহেব বিবির। এলাকাবাসী মসজিদের সাথে কবরটিও যুগে যুগে সংরক্ষণ করে রেখেছে।
মসজিদটির রক্ষণাবেক্ষণ সম্পর্কে জানতে গেলে প্রবীণ মুসল্লী আজগর আলী চৌধুরী বলেন, প্রাচীন এই মসজিদটি অবকাঠামোগত অবস্থান, নক্সা সবকিছু আগের মত রয়েছে। তবে সৌন্দর্য্য বৃদ্ধির জন্য বাইরের আবরণটা নতুন রূপে টাইলস লাগিয়ে সাজানো হয়েছে। এসব কাজ করিয়েছেন বর্তমান মোতোয়াল্লী প্রবাসী যোবায়েদ হুমায়ুন চৌধুরী বাবু।