নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে কোচিং ও গাইড ব্যবসায়ীরা অপপ্রচারে নেমেছে বলে অভিযোগ আনলেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। তিনি মনে করেন, এর পেছনে রাজনৈতিক একটি প্রতিপক্ষের ইন্ধনও আছে। গতকাল সোমবার রাজধানীর সেগুনবাগিচার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে সংবাদ সম্মেলন করে মন্ত্রী নতুন শিক্ষাক্রমের বিরুদ্ধে উঠা ‘সব সমালোচনার’ জবাবও দেন। সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. কামাল হোসেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোলেমান খান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহম্মাদ, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) অধ্যাপক শাহেদুল খবির চৌধুরী, এনসিটিবির সদস্য (কারিকুলাম) অধ্যাপক মশিউজ্জামান উপস্থিত ছিলেন। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা দেখেছি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন আইডি থেকে যারা অপপ্রচার চালিয়ে এটাকে একটি আন্দোলনে রূপ দেয়ার চেষ্টা করছেন, তারা মূলত কোচিং ব্যবসায়ী। তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নোট–গাইড বইয়ের ব্যবসায়ীরা। কারণ, এরা মনে করছেন, নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন হলে তারা ব্যবসায় মার খাবেন। খবর বিডিনিউজ ও বাংলানিউজের।
তিনি বলেন, বিদ্যালয়গুলো আমাদের সুস্পষ্টভাবে জানিয়েছে, তাদের কোনো অভিভাবক সেখানে ছিল না। একটি বিদ্যালয় জানিয়েছে, তাদের কয়েকজন অভিভাবককে ২ হাজার টাকা করে দিয়ে সেখানে আনা হয়েছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে কোনো ইস্যু না পেয়ে এটিকে ইস্যু বানানোর চেষ্টা করছেন। রাজনৈতিক একটি প্রতিপক্ষের এতে ইন্ধন আছে। আর মূল্যায়ন হবে প্রতিটি কাজের। আবার ষান্মাসিক মূল্যায়ন এবং বার্ষিক মূল্যায়নও হবে। কাজেই পরীক্ষা ঠিকই থাকছে, কিন্তু পরীক্ষার ভীতি থাকছে না। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া এবং না হওয়া আছে শুধু তাই নয়, পারদর্শিতার ৭টি স্কেলে তাদের রিপোর্ট কার্ডও আছে। বাসায় গিয়ে দলগত কাজ করতে হয়, যা বাস্তবে সম্ভব না হওয়ায় ডিভাইস নির্ভরতা বাড়ছে –এমন ধারণার প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, সকল দলগত কাজ বিদ্যালয়ে করার নির্দেশনা দেওয়া আছে। বাড়িতে কোনো দলগত কাজ দেওয়া হয় না।
যে কোনো পরিবর্তনই মেনে নিতে কষ্ট হয় :
অভিভাবকদের ‘অপপ্রচারে’ বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, নতুন শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক নিয়ে মিথ্যাচার হচ্ছে। এরা চায় না শিক্ষার্থীরা স্বাধীনভাবে শিখতে, চিন্তা করতে শিখুক, অনুসন্ধিৎসু হোক, মুক্তবুদ্ধি ও মুক্তচিন্তার চর্চা করুক। এগিযৈ যাওয়ার জন্য রূপান্তর অবশ্যম্ভাবী উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, যে কোনো পরিবর্তনই মেনে নিতে, খাপ খাইযৈ নিতে কষ্ট হয়।
পরিবর্তন আসবে ভর্তি ও নিয়োগ পরীক্ষাতেও :
নতুন শিক্ষাক্রমের সঙ্গে মিল রেখে ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ও চাকরির নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়া হবে বলেও জানান শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন। তারা মহাচিন্তায় পড়ে গেছেন যে, তাদের বাচ্চারা কীভাবে চাকরি পাবে। শিক্ষাজীবনের কোনো ফলাফল তাদের সন্তানদের চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে কাজে আসবে না– এমনটাও অনেকে বলে বেড়াচ্ছেন। তদের বলতে চাই, চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে পারদর্শীতার মূল্যায়ন করা হবে। পারদর্শীতার মূল্যায়নের ভিত্তিতেই নিয়োগ হবে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ভর্তি পরীক্ষা, চাকরির নিয়োগ পরীক্ষার কাঠামোয়ও পরিবর্তন আসবে। এই শিক্ষাক্রমের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে। আর সরকারি নিয়োগের বাইরে বেসরকারি জগতে এখন সনদের চাইতে দক্ষতা বা যোগ্যতা বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে।